বিশ্বজমিন

‘হাউ ডিয়ার ইউ?’

জাতিসংঘে ক্ষোভের আগুন ঝরালো ১৬ বছর বয়সী থানবার্গ

মানবজমিন ডেস্ক

২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯, মঙ্গলবার, ১০:৩০ পূর্বাহ্ন

জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় ব্যর্থতার জন্য বিশ্বনেতাদের প্রতি ক্ষোভের আগুন ঝরালো মাত্র ১৬ বছর বয়সী টিনেজার গ্রেটা থানবার্গ। বিশ্বজুড়ে তার বয়সী এ প্রজন্মের কোটি কোটি টিনেজারের ক্ষোভ যেন আগুন হয়ে ঝরলো জাতিসংঘে। আর বার বার সে বিশ্বনেতাদের কাছে প্রশ্ন ছুড়ে মারলো বর্শার মতো। গ্রেটা থানর্বাগ তাদের প্রতি ধিক্কার জানিয়ে বার বার ইংরেজিতে প্রশ্ন ছুড়ে মারলো- ‘হাউ ডিয়ার ইউ?’ অর্থাৎ কি দুঃসাহস তোমাদের? সোমবার জাতিসংঘে জলবায়ু বিষয়ক সম্মেলনে সবার হৃদয় কেড়ে নেয় এই টিনেজার। তার কণ্ঠে কখনো ক্ষোভ, কখনো নতুন প্রজন্মের জন্য একটি সুন্দর পৃথিবী গড়ে তোলার জন্য আকুতি ঝরে পড়ছিল।
 
কার্বন নির্গমন ইস্যু যেন আন্তর্জাতিক দুনিয়ায় বিকল হয়ে পড়েছে। সেই প্রচেষ্টাতে গতি দিতে সোমবারের সম্মেলনের শুরুতে যেন বিদ্যুতস্ফুলিঙ্গ তুলছিল সুইডেনের এই টিনেজার। বিজ্ঞানীরা কয়েক দশক ধরে সতর্কতা দেয়া সত্ত্বেও গত বছর কার্বন নির্গমন রেকর্ড পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। এরই প্রেক্ষিতে জ্বলে ওঠে গ্রেটা থানবার্গ। আবেগতাড়িত হয়ে তার কণ্ঠ থেকে বেরিয়ে আসে- এসবই অন্যায়। ভুল। আমি এখানে আসতাম না। এখানকার এই সমুদ্রের অপর পাড়ে আমার থাকার কথা ছিল স্কুলে। আমাদের মতো তরুণদের কাছে আসেন আপনারা সবাই। আপনাদের কি দুঃসাহস? গ্রেটা থানবার্গ অব্যাহতভাবে  বলে যেতে থাকে, আপনারা ফাঁকা বুলির মাধ্যমে আমাদের স্বপ্নকে, আমাদের শৈশবকে চুরি করেছেন।
 
এখন থেকে এক বছর আগে স্কুলের পড়াশোনা ফেলে গ্রেটা থানবার্গ শুরু করেছিল তার জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে আন্দোলন। প্রথমে সেটা সাপ্তাহিক ভিত্তিতে সুইডিশ পার্লামেন্টের বাইরে আয়োজন করা হতো। তার এই আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ। এর মধ্যে রয়েছে তার মতো কিশোর-কিশোরী, প্রাপ্ত বয়স্করাও। জাতিসংঘে সমবেত বিশ্বনেতাদের প্রতি জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বানে সারা বিশ্বে কোটি কোটি মানুষ তার ডাকে বিক্ষোভে শরিক হয়।

শুক্রবার ইউএন ক্লাইমেট অ্যাকশন সামিটে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রন বলেছেন, দিনের শুরুতে কিছু তরুণ বক্তা যে আবেগঘন বক্তব্য রেখেছে তাতে আমি বিস্মিত হয়েছি। তাদের কথা আমলে নেয়ার জন্য আমি ভূমিকা রাখতে চাই। আমি মনে করি প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের মধ্যে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার এই আহ্বানকে কোনো রাজনৈতিক দৃষ্টিতে দেখা উচিত হবে না। ওদিকে বিশ্বনেতাদের সচেতন হওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরাঁ। তাদেরকে তিনি ফাঁকা বুলি না দিয়ে সুদৃঢ় পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। জাতিসংঘ মহাসচিব বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির বিরুদ্ধে লড়াই করতে ২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তিকে সমুন্নত রাখার জন্য একদিনের এই সামিটের আয়োজন করেন। তিনি বলেন, প্রকৃতি বিরূপ হয়ে উঠেছে। আমরা যদি মনে করি প্রকৃতিকে বোকা বানাতে পারবো তাহলে আমরাই বোকা হয়ে যাবো। সবকিছুরই একটা মূল্য আছে। কিন্তু সবচেয়ে বড় যেখাতে খরচ হচ্ছে সেখানে কিছুই করা হচ্ছে না। সবচেয়ে বেশি খরচ হচ্ছে ফসিল জ্বালানি ভিত্তিক শিল্পে, অধিক থেকে অধিক কয়লাভিত্তিক বিদ্যুতকেন্দ্র নির্মাণ খাতে ভর্তুকি দিয়ে। আর এতে আমরা জলবায়ু বিষয়ক এক গভীর গহ্বরে অবস্থান করছি। এ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে আমাদেরকে প্রথমেই খনন বন্ধ করতে হবে।

ফরাসি খাদ্য বিষয়ক গ্রুপ ড্যাননের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইমানুয়েল ফেবার বলেছেন, আমরা জীবনচক্রকে ভেঙে দিয়েছি। অধিকতর টেকসই ফার্মিংয়ের দিকে এগিয়ে যেগে ১৯টি বড় খাদ্য বিষয়ক কোম্পানি ‘ওয়ান প্লানেট’ কর্মসূচি নিয়েছে বলে তিনি ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, জীবন ধ্বংসের পথ থেকে সরে আমাদেরকে আসতে হবে কৃষিতে ভর্তুকি খাতে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প জলবায়ু বিষয়ক বিজ্ঞান নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিটি বড় বড় রেজ্যুলুশনের বিরুদ্ধে তিনি চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন। ২০১৫ সালে সম্পাদিত জলবায়ু বিষয়ক প্যারিস চুক্তি থেকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। সোমবারের ওই সম্মেলনে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য তিনি হাজির হয়েছিলেন। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও। এতে কোনো বক্তব্য রাখেননি ট্রাম্প। তবে তিনি শুনেছেন জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মারকেল ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বক্তব্য। সম্মেলনে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াই করছে এমন অনুন্নত দেশগুলোর জন্য জাতিসংঘের ২০০ কোটি ইউরোর তহবিল বাড়িয়ে ৪০০ কোটি ইউরো করার বিষয়ে সমর্থন করেন তিনি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status