বিনোদন
আলাপন
‘গান মানুষকে স্বস্তি দেয়, দুঃখ ভোলায়’
মোশাররফ রুমী
২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯, মঙ্গলবার, ৯:১৯ পূর্বাহ্ন
কাজী হাবলুর পরিচয় তিনি লাতিন পারকেশন (এলপি) বাজান। বাংলাদেশের সংগীতাঙ্গনে পারকাশনিস্ট শব্দটি এলেই এ মানুষটির নাম সবচেয়ে প্রথমে আসে। পারকাশনিস্ট হিসেবে তাকে চেনেন না সংগীতাঙ্গনে এমন কেউ নেই বললেই চলে। ব্যান্ড সংগীতের একজন কিংবদন্তিতুল্য ব্যক্তিত্ব তিনি। বাংলাদেশের ব্যান্ড সংগীতের উত্থানের পেছনে যে কজনের বলিষ্ঠ ভূমিকা রয়েছে তাদের মধ্যে কাজী হাবলু অন্যতম। সেই ষাটের দশক থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত নিরলসভাবে আমাদের সংগীতকে সমৃদ্ধ করে চলেছেন গুণী এই মিউজিশিয়ান। বাংলাদেশের ব্যান্ড সংগীতের ইতিহাস নিয়েও রয়েছে তার বিস্তর গবেষণা। আজম খানের উচ্চারণ ব্যান্ডের সঙ্গে তিনি যুক্ত হন ১৯৭৩ সালে। দুই বছর পর সদস্য হন স্পন্দন ব্যান্ডের। এরপর টানা ২৪ বছর আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন শিল্পী রুনা লায়লার সঙ্গে বিভিন্ন কনসার্ট, টিভি অনুষ্ঠান এবং গানের রেকর্ডিংয়ে এলপি বাজিয়েছেন। ২০০০ সালে এসে যুক্ত হন দেশের প্রথম সারির ব্যান্ড এলআরবির সঙ্গে। আর এখন বাজাচ্ছেন রেনেসাঁ ব্যান্ডের হয়ে। কাজী হাবলু এ যাবৎ অসংখ্য গানের কথা, সুর ও সংগীত পরিচালনা করেছেন। প্রখ্যাত শিল্পীদের কণ্ঠে তার সুর করা অনেক গান হয়েছে জনপ্রিয়। নিজেও গান গেয়ে থাকেন তিনি। দীর্ঘ প্রায় দুই দশক পর নিজের সুরে একটি গান গাইলেন কাজী হাবলু। ‘ধূপছায়া’ শিরোনামের এ গানটি লিখেছেন গীতিকবি আহমেদ ইউসুফ সাবের এবং সংগীত পরিচালনা করেছেন কাজী আনান। লিরিক্যাল ভিডিওসহ আগামীকাল বুধবার দেশের প্রথম সারির অডিও-ভিডিও প্রযোজনা-পরিবেশনা প্রতিষ্ঠান জি সিরিজ-অগ্নিবীণার ব্যানারে প্রকাশ পাচ্ছে গানটি। এ প্রসঙ্গে কাজী হাবলু বলেন, বহুদিন পর নিজের সুরে গাইলাম। চমৎকার কথাকাব্যে এটি একটি রোমান্টিক মেলোডি ধারার গান। সাবেরের সঙ্গে দীর্ঘ চার দশকের ঘনিষ্ঠতা। সে অসাধারণ লেখে। কথা ও মর্মার্থকে প্রাধান্য দিয়ে গানটির সুর করেছি। নিজে সুরে বলে গাইলামও। কথা ও সুরের সঙ্গে মানিয়ে দারুণ সংগীতায়োজন করেছে আনান। আশা করছি, গানটি সবার ভালো লাগবে। ভবিষ্যতে নিজের সুরে আরো গাইতে চান জানিয়ে কাজী হাবলু বলেন, পরিবার হচ্ছে একজন মানুষের অনুপ্রেরণার প্রথম এবং প্রধান আশ্রয়। পরিবারের উৎসাহ না থাকলে কোনো কাজই স্বাচ্ছন্দ্যে করা যায় না। সংগীতাঙ্গনে কাজের ক্ষেত্রে আমি আমার স্ত্রী এবং ছেলে-মেয়ের বেশ উৎসাহ অনুপ্রেরণা পাই। তাদের উৎসাহেই ‘ধূপছায়া’ গানটি গেয়েছি। কেমন হলো সেটি বিচার করবেন শ্রোতারা। আজকের আলাপনে সংগীতের বর্তমান অবস্থা নিয়ে কাজী হাবলু বলেন, এখনকার শিল্পী- মিউজিশিয়ানদের অনেকেই খুব দ্রুত জনপ্রিয়তা পেতে চায়। তাদের মধ্যে স্থিরতা অনেক কম। অথচ, এখন প্রচুর মেধাবী তরুণ সংগীতে কাজ করছে, তারা একটু সময় নিয়ে, ভেবে চিন্তে কাজ করলেই অনেক ভালো কিছু করা সম্ভব। একটু বুঝেশুনে, শ্রোতাদের চাহিদা ও ভালো লাগাকে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করলে সেটি টিকবেই। কেননা, গান শুধু একবার শোনার বিষয় নয়, যুগ যুগ টিকে থাকার বিষয়। গান মানুষকে স্বস্তি দেয়, দুঃখ ভোলায়। তাই এই কাজটির জন্য আমাদের আরো অনেক বেশি যত্নবান হওয়া জরুরী। এখনতো শ্রোতারা গান শোনার চেয়ে দেখছেন বেশি? কাজী হাবলু বলেন, এখনকার আর তখনকার ভেবে আমি গান করি না। শ্রোতাদের মধ্যেও ভাগ আছে। তাই আমি আমার মতো করে যে গানটা ভালো লাগে, সুরটা ভালো লাগে ওই ভাবে গানটা করে ফেলি। যাদের শোনার তারা ভালো গান ঠিকই শুনবে বলেই আমার বিশ্বাস। আমি এই ভাবেই দেখি ব্যাপারটা। একটি গান আজ না হয় ৩০ বছর পরও যদি কেউ শুনে বলে বাহ, সুন্দর গান তো- ওখানেই আমার স্বার্থকতা।