শেষের পাতা

রংপুর-৩ সদর উপনির্বাচন

নেতাকর্মীদের আগ্রহ নেই

স্টাফ রিপোর্টার, রংপুর থেকে

২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯, মঙ্গলবার, ৯:০৯ পূর্বাহ্ন

নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে এলেও আগ্রহ নেই আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, বিএনপিসহ অন্যান্য দলের নেতাকর্মীদের। রংপুর সদর-৩ আসনের জাতীয় পার্টির এমপি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুর পর এ আসন শূন্য হওয়ায় ৫ই অক্টোবর উপ-নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়। ঘোষণার পর পরই জাতীয় পার্টি, আওয়ামী লীগ, বিএনপির একাধিক প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য লবিং গ্রুপিং দৌড়ঝাঁপসহ সভা-সমাবেশ, গণসংযোগ শুরু করেন। আওয়ামী লীগের প্রার্থী রেজাউল ইসলাম রাজুকে মনোনয়ন দেয়ার
পরও রহস্যজনকভাবে কেন্দ্রীয় নির্দেশে তা প্রত্যাহার করেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী রাজু। এদিকে, জাতীয় পার্টির ব্যাপক নাটকীয়তার পর কেন্দ্রীয়ভাবে দলের মনোনয়ন দেয়া হয় জাতীয় পার্টির প্রার্থী রাহগির আল মাহী সাদ এরশাদকে।

বিএনপি’র মনোনয়ন দেয়া হয়, দলে সদ্য যোগদানকারী রিটা রহমানকে। আওয়ামী লীগের নৌকা প্রার্থী না থাকায় ক্ষোভ নেমে আসে আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের মাঝে। অনুরুপভাবে জাতীয় পার্টির স্থানীয় প্রার্থী থাকা সত্ত্বেও আকস্মিকভাবে সাদ এরশাদকে প্রার্থী করায় হতাশ হয়ে পড়েন স্থানীয় জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা। অন্যদিকে, বিএনপি প্রার্থী রিটা রহমানকে মনোনয়ন দেয়ায় স্থানীয় নেতাকর্মীরা সহজভাবে মেনে নিতে পারছে না। সবমিলে নিবার্চনের ইমেজটা অনেকটা ঝিমিয়ে পড়েছে। প্রার্থীদের পক্ষ থেকে দলের নেতাকর্মীদের একাট্টা করার চেষ্টাও ব্যর্থ হচ্ছে। অপরদিকে, ৫ই অক্টোবর হিন্দু সম্প্রদায়ের শারদীয় দুর্গা পূজা থাকায় তারা এ তারিখ পরিবর্তনের দাবী জানিয়ে ব্যর্থ হওয়ায় ভোটদান থেকে বিরত থাকার ঘোষনা দিয়েছে। নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, একাদশ সংসদ নির্বাচনে রংপুর সদর আসনে ভোট পড়েছিলো ৫২ শতাংশ। ভোট গ্রহণ করা হয়েছিলো ইভিএম পদ্ধতিতে। ভোটদান থেকে বিরত ছিলো ৪৮ শতাংশ ভোটার। এবার আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টির একাংশ এবং সনাতন ধর্মাবলম্বীরা ভোট প্রদানে বিরত থাকলে একাদশ সংসদ নির্বাচনের চেয়েও অনেক কম ভোট কাস্ট হবে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। অনুসন্ধানে জানা যায়, স্থানীয় সর্বস্তরের পেশাজীবীদের মাঝে নির্বাচন নিয়ে তেমন কোন আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না।

গতকাল জাতীয় পার্টির প্রার্থী সাদ এরশাদ তার হাতে গোনা কিছু সমর্থকদের নিয়ে রংপুর সিটি বাজার, পায়রা চত্ত্বর, জাহাজ কোম্পানী মোড়, প্রেসক্লাব চত্বর, স্টেশন এলাকা, তাজহাট, মাহিগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করেছেন। বিএনপি প্রার্থী রিটা রহমান পাগলাপীর, সিও বাজার, মেডিকেল মোড়, ধাপ এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় ভোটারদের সাথে কুশল বিনিময় করেন। এ দু’দলের প্রার্থী গণসংযোগ অব্যহত রাখলেও নীরব রয়েছেন সরকার দলীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। তাদের সমর্থন নিতে জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গা। আওয়ামী লীগ নেতা মোতাহার হোসেন মন্ডল মওলা দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, আমাদের এত বড় দল আওয়ামী লীগ, অথচ কোন প্রার্থী নেই। নিজের দলের প্রার্থী না থাকায় অন্য দলের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করতে দলের নেতাকর্মীদের আগ্রহ নেই। জাতীয় পার্টির রংপুর মহানগর সভাপতি ও রংপুর সিটি কর্পোরেশন মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, সাদ যদি আগে রংপুরে এসে সাধারণ মানুষদের সাথে যোগাযোগ রাখলে আজ হয়তো তাকে নিয়ে প্রশ্ন উঠতো না। স্থানীয় মাঠ পর্যায়ে নেতাকর্মীদের অনেক প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। স্থানীয়ভাবে কাউকে মনোনয়ন দিলে হয়তো এসব প্রশ্ন উঠতো না। পাশাপাশি বিএনপি প্রার্থী রিটা রহমানের ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নেতাকর্মীরা বলেন, একাদশ নির্বাচনে বিএনপি ঐক্যজোটের প্রার্থী ছিলেন রিটা রহমান। হঠাৎ করে প্রার্থী হয়েও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে প্রায় ৫৪ হাজার ভোট পেয়ে তিনি চমক সৃষ্টি করেন।

এরপর থেকে তাকে আর একটিবারও রংপুরে দেখা যায়নি। নির্বাচন হলে প্রার্থী হয়ে মাঠে নামেন। কিন্তু নির্বাচনের আগেও যে সাধারণ ভোটারদের সাথে যোগাযোগ রাখতে হয় এটি তারা বোঝেন না। যার প্রভাব পড়ে নির্বাচনের সময়। নাজুক পরিস্থিতিতে রয়েছে আরেক প্রার্থী জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ভাতিজা সাবেক এমপি হোসেন মকবুল শাহরিয়ার আসিফ। তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে মোটরগাড়ি প্রতীক নিয়ে সাদামাটাভাবে প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছেন। মনোনয়ন নিয়ে যেমন বিভিন্ন দলে রয়েছে অসন্তোষ, তেমনি নির্বাচনের তারিখ নিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের মাঝে রয়েছে চাপা ক্ষোভ। হিন্দু ধর্মীয় নেতা সুশান্ত ভৌমিক, বাবলু নাগসহ অন্যান্যরা বলেন, শারদীয় দুর্গা পূজা হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব। এদিকে, ভোটগ্রহণ কোনভাবে যুক্তিযুক্ত নয়। ভোটের কারণে ধর্মীয় উৎসাহ-উদ্দীপনায় ব্যাঘাত সৃষ্টি হবে। তাই হিন্দু সম্প্রদায় ভোট বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নির্বাচনে জাতীয় পার্টি ও বিএনপি প্রার্থীদের ছাড়াও মাঠে রয়েছেন এরশাদের ভাতিজা স্বতন্ত্র প্রার্থী হোসেন মকবুল শাহরিয়ার আসিফ (মোটরগাড়ি) এনপিপি’র শফিউল আলম (আম), খেলাফত মজলিসের তৌহিদুর রহমান রাজু (দেওয়াল ঘড়ি), গণফ্রন্টের কাজী মো. শহিদুল্লাহ (মাছ)।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status