দেশ বিদেশ

হিন্দি চাপিয়ে দেয়ায় হতাশ ভারতের সংখ্যালঘু ভাষাভাষীরা

মানবজমিন ডেস্ক

২২ সেপ্টেম্বর ২০১৯, রবিবার, ৯:১৬ পূর্বাহ্ন

নয়াদিল্লিতে জাতীয় হিন্দি দিবস উপলক্ষে দেয়া বক্তৃতায় ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঘনিষ্ঠ সহযোগী অমিত শাহ হিন্দিকে সারা ভারতের অভিন্ন প্রধান ভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা তুলে ধরেন। ভারতের ক্ষমতাসীন হিন্দুত্ববাদী দল বিজেপি দেশের জাতীয় ঐক্য সংহত করার জন্য হিন্দিকে দেশের প্রধান ভাষা হিসেবে যেভাবে তুলে ধরছে, সেটা দেশের সংখ্যালঘু ভাষাভাষী জনগোষ্ঠীকে হতাশ করেছে। ১৪ই সেপ্টেম্বর অমিত শাহ বলেন, ভারতকে বিশ্বের কাছে উপস্থাপনের জন্য এবং আমাদের প্রাচীন দর্শন, আমাদের সংস্কৃতি ও আমাদের মুক্তি সংগ্রামের স্মৃতি সংরক্ষণের জন্য আমাদের একটি একক ভাষা থাকা প্রয়োজন। সাউথ এশিয়ান মনিটর জানিয়েছে, ভারতের সংবিধানে যদিও কোনো ভাষাকে জাতীয় ভাষার মর্যাদা দেয়া হয়নি, তবে হিন্দিকে এখানে ভারত সরকারের অফিসিয়াল ভাষা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ভারত দেশটির ২২টি আঞ্চলিক ভাষাকে অফিসিয়াল প্রশাসনিক ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। আর বিভিন্ন রাজ্যের মধ্যে যোগাযোগের জন্য ইংরেজিকে মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হয়। কিন্তু অমিত শাহ বলেন যে, এটা গুরুত্বপূর্ণ যাতে আমরা আমাদের স্থানীয় ভাষাগুলোকে আরো শক্তিশালী করি এবং আমাদের পুরো জাতি যাতে হিন্দি শেখে। অনেকেই মনে করছেন হিন্দুবাদী গ্রুপগুলোর পুরনো একটি স্লোগানকে অমিত শাহ নতুন করে তাজা করছেন। সেই স্লোগানটা ছিল ‘হিন্দু-হিন্দি-হিন্দুস্তান’। এর অর্থ হলো ভারতের একটি মাত্র ধর্ম, একটি ভাষা ও একটি সংস্কৃতি থাকা উচিত।
ব্যাঙ্গালোরের এক খ্রিস্টান অধিকার কর্মী বলেন, দেশের ইতিহাস পরিবর্তনের জন্য বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকার সবকিছু করছে। হিন্দু জাতীয়তাবাদের জন্য তাদের উন্মাদনার কারণে দেশকে তারা বিভক্ত করে ফেলছেন। তিনি বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, যে দেশে পাঁচ শতাধিক ভাষা ও উপভাষা রয়েছে, সেখানে কীভাবে ‘এক সংস্কৃতি, এক ভাষার’ আদর্শ চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করতে পারে সরকার। কিছু এলাকাতে স্থানীয় মানুষ ও তাদের সংস্কৃতিতে হিন্দি গ্রহণযোগ্য নয়। বেশ কিছু অর্থনৈতিক দুর্দশার জায়গা থেকে মানুষের মনোযোগ অন্যদিকে সরিয়ে নিতেই শাহ এসব কথা বলছেন। ভারতের ১.২ বিলিয়ন মানুষের মধ্যে প্রায় ৪১ শতাংশ মানুষ হিন্দি ভাষায় কথা বলে। বাকি জনগোষ্ঠী বাংলা, তামিল, উর্দু, তেলেগু, কান্নাড়, মালায়ালাম বা ওরিয়া ভাষায় কথা বলে। নয়াদিল্লির এক অধিকার কর্মী অ্যালেন ফ্রান্সিস বলেন, হিন্দুবাদী পদক্ষেপ থেকে বোঝা যাচ্ছে বিজেপি ভারতের ভাষাগত বৈচিত্র্য মেনে নিতে রাজি নয়। তিনি প্রশ্ন তোলেন, হিন্দি শেখা বা এ ভাষায় কথা বলাটা ব্যক্তির পছন্দের বিষয়, যেমনভাবে অন্য যেকোনো ভাষায় কথা বলার অধিকার রয়েছে তার। কেন আমরা অন্য সব ভাষাকে সরিয়ে রেখে মানুষকে শুধু হিন্দিতে কথা বলার জন্য জোর করবো?
উল্লেখ্য, ভারতে ৭৮০টি নিবন্ধিত ভাষা রয়েছে এবং ভাষা বৈচিত্র্যের দিক থেকে তারা দ্বিতীয়। প্রথম অবস্থানে রয়েছে পাপুয়া নিউগিনি, যাদের ভাষার সংখ্যা ৮৩৯।

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status