এক্সক্লুসিভ

নুসরাত হত্যা

কন্যাসন্তানের মা হলেন কারাবন্দি কামরুন নাহার

ফেনী প্রতিনিধি

২২ সেপ্টেম্বর ২০১৯, রবিবার, ৮:২০ পূর্বাহ্ন

ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যা মামলার অন্যতম আসামি কামরুন নাহার মণি কন্যাসন্তানের মা হয়েছেন। শুক্রবার মধ্যরাতে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে স্বাভাবিক ডেলিভারির মাধ্যমে কন্যাসন্তান প্রসব করেন তিনি।

ফেনী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) মো. আবু তাহের পাটোয়ারী জানান, শুক্রবার রাতে প্রসবব্যথা নিয়ে আসামি কামরুন নাহার মণি ফেনী জেলা কারাগার থেকে জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হয়। রাত ১২.১০ মিনিটে স্বাভাবিক ডেলিভারির মাধ্যমে কন্যাসন্তান জন্ম দেয় কামরুন নাহার মনি। মা ও শিশু উভয়ে সুস্থ রয়েছে।

ফেনী জেলা কারাগারের জেলার দিদারুল আলম জানান, শুক্রবার রাত ৮টার দিকে কামরুন নাহার মনির শারীরিক অবস্থা খারাপ হলে কারাগার হাসপাতালের চিকিৎসকের পরামর্শে তাকে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। ফেনী মডেল থানা পুলিশ ও কারাগারের একাধিক কারারক্ষীর (পুরুষ ও মহিলা) তত্ত্বাবধানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে আসামি কামরুন নাহার মনি। হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেলে তাকে ফের কারাগারে নিয়ে যাওয়া হবে।    

বাদী পক্ষের আইনজীবী এম শাহজাহান সাজু জানান, নুসরাত হত্যা মামলার অন্যতম আসামি কামরুন নাহার মনিকে গত ১৬ই এপ্রিল গ্রেপ্তার করে পিবিআই। গ্রেপ্তারের সময় মনি তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিল। গ্রেপ্তারের পরদিন ১৭ই এপ্রিল মনিকে আদালতে তুলে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করলে আদালত ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যার সময় ব্যবহৃত বোরকাগুলো যে দোকান থেকে কেনা হয়েছিল আসামি মনিকে নিয়ে গত ১৯শে এপ্রিল সে দোকানে অভিযান চালায় পিবিআই।

নুসরাত হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে গত ২০শে এপ্রিল কামরুন নাহার মনি আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। ঘটনার সময় বোরকা পরিহিত ৫ জনের মধ্যে একজন ছিল মনি। নুসরাতকে হাত-পা বাধার পর মনি সহপাঠী নুসরাতকে ছাদে শুইয়ে দিয়ে গলা চেপে ধরে। আসামি জাবেদ হোসেন ঘটনার সময় নুসরাতের গায়ে এক লিটার কেরোসিন ঢেলে দেয় এবং ম্যাচের কাঠি জ্বালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়।
ফেনী জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) হাফেজ আহমেদ জানান, নুসরাত হত্যা মামলার বিচারকাজ শেষপর্যায়ে রয়েছে। সাক্ষ্য গ্রহণ ও জেরা শেষে রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের আইনজীবীদের যুক্তিতর্ক চলছে। আজ মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে। চলতি সপ্তাহে মামলার বিচারকাজ শেষ হবে। চলতি মাসেই মামলার রায় প্রদানের সম্ভাবনা রয়েছে বলে পিপি আশা করছেন।

প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ২৭শে মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন নিপীড়নের দায়ে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এর জের ধরে গত ৬ই এপ্রিল সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসায় আলিম পরীক্ষা কেন্দ্রে পরীক্ষা দিতে গেলে নুসরাতকে ছাদে ডেকে নিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার বিরুদ্ধে করা শ্লীলতহানির মামলা তুলে না নেয়ায় তাকে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে- যা মৃত্যুশয্যায় নুসরাত বলে গেছেন। এরপর টানা ৫ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে ১০ই এপ্রিল মারা যান নুসরাত জাহান রাফি।

এ ঘটনায় নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বাদী হয়ে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাসহ ৮ জনের নাম উল্লেখ করে সোনাগাজী মডেল থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। পরে মামলাটি হত্যা মামলায় রূপান্তর হয়। গত ১০ই এপ্রিল মামলাটি পিবিআইতে হস্তান্তর করা হয়। এ মামলায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ২১ জনকে গ্রেপ্তার করে পিবিআই। এদের মধ্যে মাদ্রাসার বরখাস্তকৃত অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা, কামরুন নাহার মনিসহ ১২ আসামি হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও পিবিআইর পরিদর্শক মোহাম্মদ শাহ আলম তদন্ত শেষে গত ২৯শে মে নুসরাত হত্যায় ১৬ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। চার্জশিটে ৯২ জনকে সাক্ষী করা হয়।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status