বাংলারজমিন

খুলনাঞ্চলে ডেঙ্গুর মহামারি ১০ জেলায় নিহত ২৪

স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা থেকে

২১ সেপ্টেম্বর ২০১৯, শনিবার, ৮:১৮ পূর্বাহ্ন

খুলনাঞ্চলে ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ কমছে না। বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে অন্তত দেড়শ রোগী ভর্তি হচ্ছে। বিভাগের ১০ জেলায় এ পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত ২৪ জন রোগী মারা গেছেন। মৃতের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যাই বেশি। এদিকে এডিস লার্ভার উৎপত্তিস্থল চিহ্নিতকরণ এবং করণীয় বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রতিনিধি দল শুক্রবার খুলনায় এসেছে। এ দলটি যশোরের বিভিন্ন স্থান পরিদর্শন করে এডিস মশার লার্ভার উপস্থিতি নিশ্চিত করেছে। এদিকে বৃহস্পতিবার রাত ৯টা ৪০ মিনিটের দিকে খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত রোজিনা বেগম (৩৫) মারা গেছেন। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক ফিজিসিয়ান (আরপি) ডা. শৈলেন্দ্রনাথ বিশ্বাস জানান, বৃহস্পতিবার ভোর ৪টায় হাসপাতালে ভর্তি হন রোজিনা। আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। রোজিনা যশোর জেলার ঝিকরগাছার খায়রুল ইসলামের স্ত্রী। এ নিয়ে খুলনায় শিশুসহ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত ১৪ জন রোগীর মৃত্যু হয়েছে। খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেয়া তথ্য মতে, খুলনার বিভিন্ন জেলায় এ পর্যন্ত মোট ৭ হাজার ৩৫৩ জন রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে এখনো চিকিৎসা নিচ্ছেন ৫১৮ জন। বাকিরা চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়েছেন। আক্রান্ত জেলাগুলোর মধ্যে যশোর, কুষ্টিয়া ও সাতক্ষীরা এগিয়ে আছে। যশোরের মণিরামপুর ও সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলায় ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ বেশি। এ পর্যন্ত আক্রান্তের মধ্যে যশোর জেলায় ২ হাজার ৩১১ জন, কুষ্টিয়ায় ৯৬২ জন, খুলনায় ২০০ জন, বাগেরহাটে ২৩০ জন, সাতক্ষীরায় ৪৮০ জন, ঝিনাইদহে ৩৭৮ জন, মাগুরায় ৩৩৮ জন, নড়াইলে ৩০১ জন, চুয়াডাঙ্গায় ১১৫ জন, মেহেরপুরে ১৯০ জন এবং খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৯৬৪ জন চিকিৎসা নেয়। যশোরের সিভিল সার্জন ডা. দিলীপ কুমার রায় জানান, ২০ সদস্যের প্রতিনিধিদল বৃহস্পতিবার সকালে কেশবপুর, মনিরামপুর, চৌগাছা ও বাঘারপাড়া উপজেলায় জরিপ শুরু করেছে। প্রতিনিধি দল পর্যন্ত অবস্থান করবে। মশার লার্ভা ও রোগীদের রক্ত পরীক্ষার পর আগামী বছরের কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ করা হবে। গত ১৯-২৫ আগস্ট পর্যন্ত যশোরে এক দফা জরিপ কার্যক্রম চালানো হয় বলে সিভিল সার্জন অফিসের সূত্র জানিয়েছে। জেলা কীটত্বত্তবিদ আমিনুল হক জানান, যশোর পৌর এলাকার ২০টি টায়ারের দোকানের মধ্যে ১৩টিতে লার্ভা পাওয়া গেছে। মনিরামপুর উপজেলার এড়েন্দা ও সদর উপজেলার বানিয়াবহু গ্রামে ১২০টি বাড়ির মধ্যে ৩৩টিতে লার্ভা পাওয়া গেছে।
বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ডা. সৈয়দ জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, দক্ষিণাঞ্চলের হাসপাতালগুলোতে প্রতিদিন গড়ে ১৫০ জন রোগী ভর্তি হচ্ছে। গত বুধবার ১৫১ জন এবং বৃহস্পতিবার ১৩৪ জন আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিংসা নেয়। তিনি জানান, অক্টোবরের মাঝামাঝি নাগাদ ডেঙ্গুর প্রকোপ থাকবে। শীত অনুভব করার পরপরই এডিস মশার বিস্তর কমবে। আগামী বছর এ অঞ্চলে ডেঙ্গুর প্রকোপ ব্যাপক আকার ধারণ করতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে। তিনি বলেন, এডিস মশার প্রজননস্থল চিহ্নিত করতে এবং আগামী বছরের কর্মপরিকল্পনা গ্রহণের লক্ষ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রতিনিধি দল যশোরে বৃহস্পতিবার থেকে জরিপ শুরু করেছে। অপর একটি প্রতিনিধি দল শুক্রবার থেকে খুলনায় জরিপ কার্যক্রম শুরু করেছে।

খুলনার সিভিল সার্জন ডা. এএসএম আবদুর রাজ্জাক জানান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ১৩ সদস্যের প্রতিনিধি দল শুক্রবার খুলনায় জরিপ কার্যক্রমে অংশ নেন। তারা ২৩শে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এখানে অবস্থান করবে। এ উপলক্ষে এখানে কর্মশালা অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিনিধি দল খুলনা মহানগরী এলাকার জলাবদ্ধ স্থান, গ্যারেজের পরিত্যক্ত টায়ার, সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনাল ও ট্রেনের পরিত্যক্ত বগিও জরিপ করবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ সূত্র জানায়, খুলনায় প্রতিনিধি দলের সুপারভাইজার থাকবেন ঢাকা সিভিল সার্জন অফিসের জেলা কীটত্বত্তবিদ এফএইচএম নুরুন্নবী চৌধুরী ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সিনিয়র কীটত্বত্তবিদ মো. রেজাউল করিম। সাতক্ষীরার সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীন জানান, শহরের পুরাতন সাতক্ষীরা, কালিগঞ্জ ও তালা উপজেলায় ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি। এ পর্যন্ত ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রতিনিধি দলকে সাতক্ষীরায় আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status