বাংলারজমিন

রূপগঞ্জে খুনিদের জবানবন্দিতে বন্ধু হত্যার লোমহর্ষক বর্ণনা

স্টাফ রিপোর্টার, রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) থেকে

২১ সেপ্টেম্বর ২০১৯, শনিবার, ৮:১৩ পূর্বাহ্ন

ভারতের সনি আর্ট টিভি চ্যানেলে দেখানো ‘ক্রাইম পেট্রল’ সিরিয়ালের মতোই গত মে মাসে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের পূর্বাচলে সংঘটিত হয়েছে এক চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ড। ৯  বন্ধু একসাথে বেড়াতে এসে একবন্ধুকে হত্যার পর ঝিলে ফেলে চলে যায়। পুলিশ নিহতের মৃতদেহ বেওয়ারিশ হিসেবে দাফনের ৪ মাস পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যেম ফেইসবুকের কল্যাণে নিহতের পরিচয় শনাক্ত করেন। কাকতালীয়ভাবে ধরা পড়ে ৪ খুনি বন্ধু। তারা হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে আলাদতে খুনের লোমহর্ষক বর্র্ণনা প্রদান করেন। উপজেলার পূর্বাচল উপ-শহরের ১৯ নং সেক্টরের রঘুরামপুর ঝিলে ঘটে এই ঘটনা।
 ভোলাব পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ (এসআই) শফিকুল ইসলাম জানান, গত ৩রা মে উপজেলার পূর্বাচলের ১৯ নং সেক্টরের রঘুরামপুর ঝিলে ১৭ বছর বয়সী এক যুবকের মৃতদেহ ভাসতে দেখে এলাকাবাসী পুলিশে খবর দেয়। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের পাশাপাশি পরিচয় শনাক্তের যাবতীয় করণীয় সম্পন্ন করেন। কিন্তু লাশ উদ্ধারের ৪ দিনেও পরিচয় শনাক্ত না হওয়ায় মুসলিম মৃতদেহের সুবাদে পুলিশ নিজ উদ্যোগে উপজেলার দাউদপুর ইউনিয়নের কালনী সামাজিক কবরস্থানে তাকে দাফন করেন। এদিকে পরিচয় শনাক্তে লাশ উদ্ধারের ছবি এসআই শফিকুল ইসলাম তার ফেসবুক ওয়ালে পোস্ট করেন। ঘটনার ৪ মাস পর চলতি সেপ্টেম্বরে ফেসবুকে শেয়ার হওয়া সেই ছবি চোখে পড়ে নিহতের  ছোটভাই তৌহিদুল ইসলাম রবিনের। পরে নিহতের মা হালিমা বেগম ছেলের কাপড়-চোপড় আর বিকৃত লাশ দেখে নিশ্চিত হন যে, এটা তার নিখোঁজ ছেলে তাসিন (১৭)। গত সপ্তাহে তাসিনের মা ভোলাব ফাঁড়িতে এসে জানান উদ্ধার হওয়া লাশটি তার ছেলের। নিহত যুবক তাসিন মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার বাখরকান্দি এলাকার মাসুদ মাতবরের ছেলে। তারা বর্তমানে রাজধানীর খিলগাঁও তিলপাপাড়া এলাকায় বসবাস করেন এবং নিহত তাসিন খিলগাঁও তালতলা এলাকায় একটি কাপড়ের দোকানে চাকরি করতো। গত ২রা মে তাসিন বাড়ি থেকে বের হয়। এরপর তাকে আর খোঁজ পাওয়া যায়নি।
এদিকে পুলিশ নিহতের পরিবারের কাছ থেকে তাসিনের ঘনিষ্ঠ কয়েক বন্ধুর নাম সংগ্রহ করে  গত সোমবার রাতে খিলগাঁও তিলপাপাড়া এলাকার মান্নান মিয়ার ছেলে সিএনজিচালক ইমরানকে আটক করে। তাকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, গত ২রা মে তারা ৯ বন্ধু পূর্বাচলের ১৯ নং সেক্টরের রঘুরামপুর  এলাকায় ঘুরতে এসে ঝিলে গোসলে নামে। এ সময় তাসিন সাঁতার না জানায় ডুবে মারা যায়। তার কথা সন্দেহজনক হওয়ায় তার দেয়া তথ্য মতে পুলিশ শাওন, আব্বাস ও শামীম নামে আরো ৩ জনকে আটক করে। তারাও পুলিশকে একই ধরনের জবানবন্দি প্রদান করে। কিন্তু মঙ্গলবার আসা ময়নাতদন্তে চুড়ান্ত প্রতিবেদনে লাশের পেটে পানির আলামত না থাকায় পুলিশ তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করে। আদালত ২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন এবং তাদের এনে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করলে একপর্যায়ে এক এক করে প্রত্যেকে স্বীকার করে পূর্ব-শত্রুতার জের ধরে গত বছরের ৩১শে ডিসেম্বর থেকেই তাসিনকে হত্যার পরিকল্পনা শুরু করে ইমরান। অন্যদের যোগসাজশে গত ২রা মে পূর্বাচলে এনে তাকে নির্যাতনের পর শ্বাসরোধে হত্যা করে ঝিলের পানিতে ফেলে রেখে যায়। আটক ৪ জনই বৃহস্পতিবার নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদুল মোহসিনের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status