শেষের পাতা

হেরফের নেই পিয়াজের বাজারে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

২০ সেপ্টেম্বর ২০১৯, শুক্রবার, ৯:২০ পূর্বাহ্ন

ঢাকার বাজারে গত কয়েক দিনের মতো এখনো চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে পিয়াজ। সরবরাহ ও চাহিদার ঘাটতির কোনো তথ্য নেই কারো কাছে। আবার ভারতীয় পিয়াজের আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ার অজুহাতে চলতি সপ্তাহের রোববার থেকে রাজধানীর বাজারগুলোতে পিয়াজের দাম এক লাফে প্রায় দ্বিগুণ হয়; সেই ভারতীয় পিয়াজ এখনও আড়ত, পাইকারি ও খুচরা বাজারে পৌঁছেনি। অথচ আগের মতোই বাড়তি দরে বিক্রি হচ্ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় এ পণ্য। খুচরা বাজার ও মানভেদে দেশি পিয়াজ প্রতি কেজি ৭০-৮০ টাকা এবং আমদানি করা ভারতীয় পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬৫-৭০ টাকা কেজি। রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন বাজারে যে পিয়াজের কেজি ৫৫ টাকা ছিল, রোববার তা এক লাফে ৭৫-৮০ টাকা হয়ে যায়। পিয়াজের এমন দাম বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার থেকে খোলাবাজারে পিয়াজ বিক্রি শুরু করে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। টিসিবির মাধ্যমে কম দামে পিয়াজ বিক্রি শুরু হলেও এর প্রভাব নেই বাজারে। সংস্থাটি এত স্বল্প পরিমাণে বিক্রি করছে, যা তেমন ভূমিকা রাখতে পারছে না। শুধু ৫টি ট্রাকে করে একেক দিন রাজধানীর একেক জায়গায় ৪৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছে সংস্থাটি। দিনে মোট বিক্রির পরিমাণ ৫ টন। অথচ দেশের দৈনিক চাহিদা ৬ থেকে ৭ হাজার টন।

হুট করে বেড়ে যাওয়া পিয়াজের দামে লাগাম টানতে গত রোববার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় টিসিবির ট্রাক সেল শুরুর সিদ্ধান্ত নেয়। একই সঙ্গে পিয়াজ আমদানিতে এলসি মার্জিন এবং সুদের হার কমাতে বাংলাদেশ ব্যাংককে সুপারিশের সিদ্ধান্ত নেয়। এ ছাড়া বন্দরে পিয়াজ দ্রুত খালাস ও পরিবহনের প্রক্রিয়া নির্বিঘ্ন করতে নির্দেশনা দেয়া হয়। এসব পদক্ষেপের সুফল বাজারে পড়েনি।

টিসিবির মুখপাত্র হুমায়ুন কবির বলেন, ন্যায্য মূল্যে পিয়াজ দিতে গত মঙ্গলবার টিসিবি বিক্রি শুরু করেছে। প্রতি কেজি পিয়াজ ৪৫ টাকা দরে একজন ক্রেতা সর্বোচ্চ দুই কেজি কিনতে পারছেন। তিনি বলেন, টিসিবি স্থানীয় বাজার থেকে কিনে শুরুতে বিক্রি করছে। তুরস্ক ও মিয়ানমার থেকে আমদানির প্রক্রিয়া চলছে। ওই সব দেশ থেকে এলে তখন আরও বড় পরিসরে বিক্রি শুরু হবে।

এদিকে, খোলাবাজারে পিয়াজ বিক্রির পাশাপাশি মঙ্গলবার পিয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে করণীয় ঠিক করতে সরকারি বিভিন্ন দফতর, পিয়াজের আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বৈঠকের পর নতুন বাণিজ্য সচিব ড. মো. জাফর উদ্দিন এবং বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের সদস্য আবু রায়হান আল বিরুনি ঘোষণা দেন, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পিয়াজের দাম কমবে।

সরকারের পক্ষ থেকে এমন ঘোষণা আসা এবং খোলাবাজারে পিয়াজ বিক্রি করা হলেও রাজধানীর বাজারগুলোতে কমেনি পিয়াজের দাম। গত কয়েক দিনের মতো ভালো মানের দেশি পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭৫-৮০ টাকা কেজি। নিম্নমানের দেশি পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৬৫-৭০ টাকা। আমদানি করা দেশি পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০-৬৫ টাকা কেজি।

পিয়াজের দাম না কমার কারণ হিসেবে ব্যবসায়ী জামাল বলেন, সচিব ঘোষণা দিলেই তো পিয়াজের দাম কমে যাবে না। আমরা কম দামে কিনতে না পারলে, কম দামে কীভাবে বিক্রি করবো। গত কয়েক দিনের মতো এখনো পাইকারিতে পিয়াজের দাম বেশি। পাইকারিতে দাম কমলে, আমরাও কম দামে বিক্রি করব।

তিনি বলেন, ভালো মানের বাছাই করা দেশি পিয়াজ শুক্রবার ৫৫ টাকা বিক্রি করেছি। এখন বিক্রি করছি ৮০ টাকায়।
আরেক ব্যবসায়ী মিলন বলেন, খুচরা বিক্রেতাদের কাছে এখনও আগের কেনা পিয়াজ রয়েছে। তাছাড়া পাইকারিতেও পিয়াজের দাম কমেনি। যে কারণে এখনো গত কয়েক দিনের দামে পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে।

কাওরানবাজারের ব্যবসায়ী খায়রুল বলেন, নতুন করে দাম বাড়েনি, আবার কমেওনি। আমরা যা আভাস পাচ্ছি তাতে বুঝতে পারছি এবার পিয়াজের দাম গত বছরের মতো হবে না। বরং কিছুদিনের মধ্যেই দাম কমে যাবে।
কাঠাল বাগানের বাসিন্দা মহিউদ্দিন বলেন, শুক্রবার বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখেছিলাম পিয়াজের কেজি ৫৫ টাকা। কয়েক মাস ধরেই পিয়াজের এই দাম। কিন্তু রোববার বাজারে গিয়ে দেখি পিয়াজের কেজি ৭৫ টাকা হয়েছে। পরে জানতে পারলাম ভারত পিয়াজের দাম বাড়িয়ে দেয়ায় এমন দাম বেড়েছে। তিনি বলেন, ভারত পিয়াজের দাম এখন বাড়িয়েছে, কিন্তু বাজারে যে পিয়াজ পাওয়া যাচ্ছে তা তো আগেই আমদানি করা। তাহলে এই পিয়াজের দাম কেন বাড়বে? যারা মুনাফার লোভে পিয়াজের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে, সরকারের উচিত তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status