চট্টগ্রাম নির্বাচন অফিসের কর্মচারিসহ আটক ৩

রোহিঙ্গাদের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) তৈরীতে জড়িত থাকার অভিযোগে চট্টগ্রাম জেলা নির্বাচন অফিসের এক কর্মচারিসহ তিনজনকে আটক করা হয়েছে। সোমবার রাত ১১টার দিকে তাদেরকে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কার্যালয়। আজ সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মুনির হোসাইন খান।  

আটককৃতরা হলেন, মো. জয়নাল আবেদীন (৩৫)। তিনি চট্টগ্রাম মহানগরীর ডাবলমুরিং থানা নির্বাচন অফিসের অফিস সহকারি। অপর দু’জন হলেন- চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার মৃত হারাধন দাসের ছেলে বিজয় দাস (২৬) ও তার বোন সীমা দাস ওরফে সুমাইয়া আক্তার (২৪)। এরমধ্যে বিজয় দাস পেশায় গাড়িচালক। আর তার বোন সুমাইয়া চট্টগ্রাম সরকারি জেনারেল হাসপাতালের আয়া পদে অস্থায়ী ভিত্তিতে কর্মরত।

জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মুনির হোসাইন খান জানান, চট্টগ্রাম জেলা নির্বাচন কার্যালয়ে গত মাসে জাতীয় পরিচয়পত্র নিতে আসা লাকি আক্তার নামে এক রোহিঙ্গা নারীকে আটক করা হয়। এ ঘটনার পর ইসির পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

তিনি বলেন, তদন্তে আমরা তথ্য পাই, আমাদের অফিসের কেউ কেউ এর সঙ্গে জড়িত। এরপর অনুসন্ধান ও অভিযান চালিয়ে গত তিন দিনে কক্সবাজার থেকে প্রথমে একজন ও পরে পাঁচ জনসহ মোট ছয় জনকে আটক করি। এদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে সোমবার সন্ধ্যায় আমরা ডাবলমুরিং থানার অফিস সহায়ক জয়নাল আবেদীনকে জিজ্ঞাসাবাদ করি। তার হেফাজতে নির্বাচন কমিশনের লাইসেন্স করা একটি ল্যাপটপ ছিল। সেটি কোথায় আছে জানতে চাইলে প্রথমে সে কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি।

পরে সে জানায়, ল্যাপটপটি তার বন্ধু বিজয় দাসের কাছে আছে। তার মাধ্যমে আমরা বিজয় দাসকে জেলা নির্বাচন কার্যালয়ে হাজির করি। বিজয় দাস জানায়, ল্যাপটপটি তার বোন সুমাইয়ার কাছে আছে। তাদের মাধ্যমে সুমাইয়াকে ল্যাপটপটি অফিসে আনতে বলা হয়। সুমাইয়া এলে তাকেও আটক করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে আটককৃতরা কিভাবে এনআইডি জালিয়াতি করেছে তার বিবরণ দেন।

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. হাসানুজ্জামান বলেন, লাইসেন্সকৃত ল্যাপটপটি ব্যবহার করে ওয়েবক্যাম দিয়ে ছবি তোলাসহ জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় সব কাজই করা যায়। জাতীয় তথ্যভান্ডারে এন্ট্রিও দেয়া যায়। এই ল্যাপটপটি ব্যবহার করেই তারা এনআইডি জালিয়াতি করেছে।

এই চক্রের সঙ্গে আরও কর্মচারি জড়িত থাকার তথ্য আছে। তাদেরও পর্যায়ক্রমে তদন্তের মাধ্যমে বের করা হবে বলে জানান তিনি।

হাসানুজ্জামান আরও বলেন, তিন জনকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে। এরমধ্যে জয়নাল আবেদীনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হচ্ছে।

সিএমপির কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. কামরুজ্জামান বলেন, এনআইডি জালিয়াতি এই চক্রের একজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হচ্ছে। বাকি দু’জনকে আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করছি। ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ পেলে সে অনুযায়ী আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এর আগে সোমবার সকালে নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন, রোহিঙ্গাদের ভোটার করা বা জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) দেয়ার সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের কোনও কর্মকর্তা-কর্মচারি জড়িত আছে বলে মনে করছি না। তবে সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণসহ অভিযোগ পেলে অবশ্যই আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে নির্বাচন কমিশন।