প্রথম পাতা

আলোচনায় শোভন রাব্বানীর বিলাসী জীবন

স্টাফ রিপোর্টার

১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯, সোমবার, ৯:২৫ পূর্বাহ্ন

নানা অপকর্মে জড়িত থাকার দায়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে অব্যাহতি পাওয়া রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও গোলাম রাব্বানীকে নিয়ে এখন মুখ খুলতে শুরু করেছে সংগঠনটির নেতাকর্মীরা চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, কমিটি বাণিজ্যের গুরুতর অভিযোগের পর এখন আলোচনা চলছে তাদের বিলাসী জীবনযাপন নিয়েও। একটি ছাত্র সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হয়ে কিভাবে ‘আঙুল ফুলে কলা গাছ’ হওয়া যায় তার প্রমাণ শোভন-রাব্বানী।

নেতা হওয়ার আগে স্বাভাবিক জীবনযাপন করলেও দেশের বৃহৎ ছাত্র সংগঠনটির দায়িত্ব নেয়ার সঙ্গে সঙ্গে যেন আলাদিনের চেরাগ হাতে পেয়েছিলেন তারা। শোভন-রাব্বানীর বিলাসবহুল জীবন নজর কাড়তো সবার। দুই নেতাই বসবাস করতেন বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে। তাদের আবাসস্থল ঘিরে রাত দিন থাকতো নেতাকর্মীদের জটলা। দুই জন দুপুর গড়িয়ে বিছানা ছাড়তেন। চলাফেরা করতেন দামি গাড়িতে। ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র বলে এ সংগঠনের কোন নেতা বা কর্মী কোন ধরণের ব্যবসা বাণিজ্যে যুক্ত থাকতে পারবেন না। কিন্তু গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করেই ব্যবসায় জড়ান সাধারণ সম্পাদকের পদ হারানো গোলাম রাব্বানী।

শোভন-রাব্বানী দু’জনে রাজধানীর কাঁঠালবাগান ও হাতিরপুলে ভাড়া ফ্ল্যাটে থাকতেন। কাঁঠালবাগানে শোভন যে বাসায় থাকেন এর মাসিক ভাড়া ৭০ হাজার টাকা। আর হাতিরপুলে ২ হাজার ৬০০ বর্গফুটের একটি ফ্লাটে থাকেন রাব্বানী। এর জন্য ৪০ হাজার টাকা ভাড়া দিতে হয়। নেতাকর্মীদের মধ্যে বলাবলি আছে মোতালেব প্লাজার ১৪০১ নম্বর ফ্লাটটি রাব্বানীর ক্রয় করা। এছাড়াও নেতা হওয়ার পর রাব্বানী টয়োটা কোম্পানির নোয়া মডেলের একটি মাইক্রোবাস ব্যবহার শুরু করেন। শোভনেরও রয়েছে এমন একটি গাড়ি। রাব্বানী ডাকসু নেতা হওয়ার পর ডাকসু ভবনে নিজের জন্য বরাদ্দকৃত কক্ষে এসি লাগিয়েছেন। যদিও ডাকসুর অন্য নেতাদের কক্ষে কোন এসির ব্যবস্থা নেই। ছাত্রলীগের বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, হাতিরপুলে ‘দ্য পারফেক্ট কাট’ নামে বিলাসবহুল সেলুনটিরও মালিক গোলাম রাব্বানী। এছাড়া ঢাকার বাইরে যাতায়াতের ক্ষেত্রে বেশিরভাগ নেতাই আকাশ পথ ব্যবহার করতেন। নিয়ম ভেঙে বিমানবন্দরে তাদের প্রটোকল দেয়ার ঘটনাও ঘটেছে।

শুধু শোভন বা রাব্বানীই যে বিলাসী জীবন যাপন করতেন তা নয় তাদের সময়ে কেন্দ্রীয় ও হল ছাত্রলীগের দায়িত্বে থাকা অনেক নেতাও এমন বিলাসী জীবনে অভ্যস্ত হয়ে পড়েন। তাদের অনেকেই নতুন গাড়ি, মোটরবাইকে চলাচল করতে দেখা যায়। এসব নেতারা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের প্রতিষ্ঠান থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায় করে থাকেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা হওয়ার পর শোভন-রাব্বানী সংগঠন থেকে নিজেকে নিয়েই বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়েন। ১১১টি সাংগঠনিক শাখার মাত্র দু’টিতে তারা কমিটি দিয়েছেন গত ১৪ মাসে। তিনটিতে সম্মেলন হলেও কমিটি গঠনের খোঁজ নেই। ভাই রাজনীতির কারণে বিভিন্ন কর্মসূচিও প্রাণহীন ছিল। নিয়মিত রাত জেগে ছাত্র রাজনীতির আতুরঘর বলে পরিচিত মধুর ক্যান্টিনেও ছিলেন অনিয়মিত। কখনো কখনো আসলেও অবস্থান করতেন কম সময়। শুধু মধুর ক্যান্টিন নয়, বঙ্গবন্ধু এভিনিউর দলীয় কার্যালয়েও তাদের দেখা মেলতো না। দায়িত্ব গ্রহণের পর মাত্র সাতবার কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গিয়েছিলেন তারা। কার্যনির্বাহী কমিটির সভাও হয়নি নিয়মিত। ১০ মাস পর পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করে মাত্র ১টি কার্যনির্বাহী সভা করেছেন শোভন-রাব্বানী। সেটি শুরু করতে চার ঘণ্টা বিলম্ব করেছিলেন। যার কারণে উপস্থিত অনেকে সে সময় ক্ষোভ প্রাকশ করেছিলেন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মেলন তীব্র গরমের মধ্যেও শুরু করতে প্রায় চার ঘণ্টা বিলম্ব করেছিলেন শোভন-রাব্বানী। শোভন-রাব্বানীর উপস্থিত হতে দেরী হওয়ায় সম্মেলন শুরু হতেও বিলম্ব হয়। তীব্র গরমে সেদিন ওয়াসি নামে ছাত্রলীগের এক কর্মী সম্মেলনস্থলে অসুস্থ হয়ে মারা যান। এর জন্য শোভন-রাব্বানীকে দায়ী করা হয়।

শুধু তাই নয় সেদিন শোভন-রাব্বানী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকেও বসিয়ে রাখেন বেশ কিছু সময়। এছাড়াও বিভিন্ন কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগের অনেক সিনিয়র নেতার পর হাজির হতেন শোভন-রাব্বানী। যেটাকে শিষ্টাচার বহির্ভূত বলেই মনে করেন আওয়ামী লীগের নেতারা। ছাত্রলীগের দায়িত্বে থাকা চার নেতাসহ আওয়ামী লীগের অনেক জ্যেষ্ঠ নেতার ফোনও রিসিভ করতেন না তারা। সাংবাদিকরাও মুঠোফোনে পেতেন না শোভন-রাব্বানীকে। সর্বত্রই ‘আপার (শেখ হাসিনা) ছাত্রলীগ’ বলে নিজেদের জাহির করতেন তারা। কিন্তু সংগঠন শক্তিশালী করার কোন উদ্যোগ ছিল না। ছিলেন চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি ও কমিটি বাণিজ্যের মতো জঘন্য সব অভিযোগে অভিযুক্ত। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন কাজের বরাদ্দ থেকে ৪ থেকে ৬ শতাংশ কমিশন দাবি করেন শোভন রাব্বানী। বিষয়টি নিয়ে পাল্টাপাল্টির মধ্যে রাব্বানীর সঙ্গে জাবি ছাত্রলীগের কথোপকথনের একটি অডিও টেপ প্রকাশ হয়েছে।

টাকার বিনিময়ে কমিটি গঠনের বিষয়টিও সামনে আসে। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম রাকিবের টাকার বিনিময়ে নেতা হওয়ার অডিও ক্লিপ ফাঁস হয় গেল সপ্তাহে। যেখানে তিনি ৪০ লক্ষ টাকার বিনিময়ে নেতা হওয়ার তদবির করেন। এদিকে গত ১৩ই সেপ্টেম্বর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের স্থগিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক শেখ জয়নুল আবেদীন রাসেল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে দাবি করেছেন রাব্বানী কমিটি ঠিক করে দিতে তাদের কাছে মাসিক চাঁদা দাবি করেছেন। জয়নুল আবেদনী রাসেল স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘জনাব রাব্বানী সাহেব, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটি স্থগিত করে আমাকে আর তরিকুলকে ডেকে নিয়ে মাসে কত টাকা করে যেন চেয়েছিলেন কমিটি ঠিক করে দেয়ার জন্য? আর জগন্নাথের নতুন ক্যাম্পাসে বালু ভরাটের কাজের জন্য যে ঠিকাদারটা পাঠিয়েছিলেন তার নাম মনে আছে? বালু ভরাট ঘনফুট কত টাকা করে যেন বলেছিলেন? আপনি ভুলে গেলেও আমি ভুলি নাই। সেগুলো প্রমাণসহ দেওয়া হয়েছে। আমাদের কমিটি ভেঙ্গে যে মজাটা নিয়েছিলেন সেই মজাটা এখন আমি পাচ্ছি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status