শেষের পাতা

পিয়াজের কেজি একলাফে বেড়ে ৭০ টাকা

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম থেকে

১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯, সোমবার, ৯:০৯ পূর্বাহ্ন

চট্টগ্রামের চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ পাইকারি বাজারে একদিনের ব্যবধানে পিয়াজের কেজি একলাফে বেড়েছে ১৭ টাকা। ফলে খুচরা বাজারে রোববার সকাল থেকে প্রতি কেজি পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা দরে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভারতে পিয়াজের রপ্তানিমূল্য বাড়ানোয় দেশীয় বাজারে এর প্রভাব পড়েছে। যদিও নতুন এলসি বা আমদানি 
করা পিয়াজ এখনো বাজারে আসেনি বলে দাবি ব্যবসায়ীদের।  চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার ও ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হাজী মো. জাহাঙ্গীর আলম এ প্রসঙ্গে বলেন, চট্টগ্রামে পিয়াজের কোনো আমদানিকারক নেই। ঢাকার শ্যামবাজারসহ বিভিন্ন স্থানে আমদানিকারকদের বেঁধে দেয়া দামেই চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে পিয়াজ বিক্রি করা হয়। এখানকার ব্যবসায়ীদের কারসাজি করার কোনো সুযোগ নেই।

তিনি অভিযোগ করেন, হিলি ও ভোমরা স্থল বন্দরের আমদানিকারকরা পিয়াজের দর নিয়ে লুকোচুরি খেলছেন। দাম বাড়ানোর কারণে পাইকারি বাজারে পিয়াজের সরবরাহ অনেক কমে গেছে। ব্যবসায়ীদের কাছে মজুত থাকা পিয়াজই বিক্রি করা হচ্ছে। নতুন এলসি বা আমদানি করা পিয়াজ এখনো বাজারেই আসেনি।
তিনি বলেন, ভারতীয় পিয়াজের রপ্তানিমূল্যের ওপর বাধ্যবাধকতা ছিল না। এখন ভারত সরকার রপ্তানি বেঁধে দেয়ার কারণে পিয়াজের দাম বেড়ে গেছে। শনিবার থেকে নতুন দামে এলসি করার কথা থাকলেও আমদানিকারকরা আগে থেকেই দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন।

জাহাঙ্গীর আলম জানান, ভারতীয় নাসিক জাতের পিয়াজ বৃহসপতিবার বিক্রি হয়েছে মানভেদে ৪০-৪৫ টাকা। সেই পিয়াজ শনিবার বিক্রি হয়েছে কেজিপ্রতি ৬০ টাকা দরে। শনিবার পাইকারি বাজার থেকে যারা পিয়াজ কিনেছেন তারা খুচরা বাজারে ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন।
গতকাল সকালে চট্টগ্রামের পাইকারি বাজার ঘুরে দেখা যায়, ভারতীয় নাসিক জাতের পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৬০ টাকা। মধ্যম মানের ভারতীয় পিয়াজ বিক্রি হয়েছে ৫৫ টাকা দরে। সাউথ জাতের পিয়াজ বিক্রি হয়েছে ৬০ টাকা দরে।
বৃহসপতিবার এই জাতের পিয়াজ ৪৫ টাকা দরে বিক্রি হয়েছিল। পাটনা বিক্রি হয়েছে ৫৫-৫৬ টাকায়।
নগরীর ২ নম্বর গেট ষোলশহর কর্ণফুলী কমপ্লেক্স কাঁচাবাজার ব্যবসায়ী সমিতির আহ্বায়ক আলহাজ মো. এয়াকুব চৌধুরী বলেন, বৃহসপতিবার পর্যন্ত পিয়াজ যা কেনা ছিল তা খুচরা ৬০ টাকা দরে বিক্রি করেছি। তবে পাইকারি বাজার থেকে শনিবার যা কিনেছি, তা রোববার সকাল থেকে কেজিপ্রতি ৭০ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে।

তিনি জানান, আগস্ট মাস থেকে পিয়াজের দাম বাড়তি ছিল। পাইকারি বাজারে ৪৫ টাকা থেকে কমে ৩৩-৩৫ টাকায় নেমে এসেছিল। গত মাসে ভারতে বন্যার কারণে কৃষিপণ্যের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এতে পিয়াজ চাষাবাদের ওপর প্রভাব পড়ে। ভারতীয় আমদানি করা পিয়াজের বাজার আবার অস্থির হয়ে ওঠে। ৩৫ টাকা থেকে বাড়তে বাড়তে ৪৩-৪৫ টাকায় পৌঁছে। পিয়াজের বাজার অস্থির হয়ে ওঠলে ব্যবসায়ীরা পিয়াজ আমদানির নতুন বাজার খুঁজতে থাকে। মিয়ানমার থেকে সামান্য পরিমাণ পিয়াজ আমদানিও করা হয়। এরপর পাইকারি বাজারে ৪৫ টাকা থেকে কমে ৪০-৪২ টাকায় নেমে আসে।

চাক্তাই ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আহসান খালেদ বলেন, মিয়ানমার থেকে ৫ হাজার বস্তায় দুই লাখ টন পিয়াজ আমদানি করা হয়েছিল। বাংলাদেশের বাজার ভারতের উপর নির্ভরশীল। কারণ ভারতীয় পিয়াজের মান ভালো। ক্রেতাদের কাছে ভারতীয় পিয়াজের কদর বেশি।
তিনি বলেন, বন্যার কারণে মহারাষ্ট্র ও কর্ণাটকে পিয়াজের উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অভ্যন্তরীণ বাজারে পিয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে রপ্তানিমূল্য বাড়িয়েছে ভারত সরকার। ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বৈদেশিক বাণিজ্য শাখা শুক্রবার পিয়াজ রপ্তানিমূল্য বাড়িয়ে টনপ্রতি ৮৫০ ডলার নির্ধারণ করে দিয়েছে। এক সপ্তাহ আগে রপ্তানিমূল্য ছিল ২৫০ থেকে ৩০০ ডলার। রপ্তানিমূল্য বাড়ানোর প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশে।

তিনি বলেন, ২০১৭ সালেও ভারত সরকার নিজেদের বাজার স্থিতিশীল রাখতে পিয়াজের রপ্তানিমূল্য ৪৩০ ডলার থেকে বাড়িয়ে ৮৫০ ডলার করেছিল। তখন দেশীয় বাজারে পিয়াজের দাম কেজিপ্রতি ৯০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছিল।
এ সময় ভারতীয় পিয়াজের দাম বেড়ে যাওয়ায় নতুন বাজার সৃষ্টি করা হয়েছিল। দেশীয় বাজার স্থিতিশীল রাখতে তুরস্ক, মিশর, মিয়ানমার ও পাকিস্তান থেকে পিয়াজ আমদানি করা হয়েছিল। এরফলে দেশীয় বাজার কিছুটা স্থিতিশীল হয়েছিল। এবারও দেশীয় বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে তুরস্ক, মিশর, মিয়ানমার থেকে পিয়াজ আমদানির উদ্যোগ নিতে হবে।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে বছরে পিয়াজের চাহিদা পূরণে ভারত থেকে ৭ থেকে ১১ লাখ টন পিয়াজ আমদানি করা হয়।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status