দেশ বিদেশ
নোয়াখালীতে অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূ ও শিশুকন্যা খুন
স্টাফ রিপোর্টার, নোয়াখালী থেকে
১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯, সোমবার, ৯:০৩ পূর্বাহ্ন
সুধারামে আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূ ও তার শিশু কন্যাকে হত্যা করেছে পাষণ্ড শ্বশুর-শাশুড়ি। গত শনিবার সুধারামের দুর্গম কাজির চরে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ ও এলাকাবাসী জানায়, এ ঘটনায় ঘাতক শ্বশুর ও শাশুড়িকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ছাড়া সুধারাম মডেল থানায় ৪ জনকে আসামি করে মামলা হয়েছে। নিহত গৃহবধূ ফারহানা বেগম পান্নার পিতা আবুল কালাম জানান, এক সপ্তাহ আগে পান্নার স্বামী আবুল কালাম পান্নাকে কাপড় কিনে দেন। এ ব্যাপারে পান্নার শ্বশুর আইয়ুব আলী ক্ষিপ্ত হয়ে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে শনিবার বেলা সাড়ে ১১টায় স্বামীর অবর্তমানে পান্নাকে বেদম মারধর করে। এক পর্যায়ে ৪ মাসের অন্তঃসত্ত্বা পান্নার তলপেটে লাথি দিলে সে ঘটনাস্থলে মারা যায়। ঘটনা ৩ বছরের শিশু শারমিন দেখে ফেলায় তাকেও দাদা আইয়ুব আলী গলাটিপে হত্যা করে ঘরে তালা দিয়ে রাখে। নোয়াখালী সদর উপজেলার আন্ডারচর ইউনিয়নে শিশু সন্তান শারমিন আক্তার লামিয়া (৩) এবং অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূ ফারহানা বেগম পান্নার (২৪) ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। রোববার সকালে উপজেলার কাজীর চর গ্রামের আইয়ুব আলীর বাড়ি থেকে নিহতদের লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহত গৃহবধূ পান্না কাজীর চর গ্রামের ইটভাটার শ্রমিক মো. সুমনের স্ত্রী এবং শিশু লামিয়া সুমনের মেয়ে। সুধারাম থানা পুলিশ স্থানীয়দের বরাত দিয়ে জানায়, উপজেলার কাজীর চর গ্রামের আইয়ুব আলীর ছেলে সুমনের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী ফারহানা বেগম পান্না পারিবারিক কলহের জের ধরে শিশু সন্তান শারমিন আক্তার লামিয়াসহ গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে নিহত মা-মেয়ের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিহত গৃহবধূর শ্বশুর আইয়ুব আলী এবং শাশুড়ি হাসিনা আক্তারকে আটক করা হয়। নিহত গৃহবধূ ফারহানা বেগম পান্নার বড় ভাই মো. হারুন অভিযোগ করে বলেন, গত ৫ বছর আগে কাজীর চর গ্রামের আইয়ুব আলীর ছেলে মো. সুমনের সঙ্গে পারিবারিকভাবে পান্নার বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই পারিবারিক কলহের জের ধরে শ্বশুর-শাশুড়ি ও ননদ পান্নাকে প্রায় নির্যাতন করতো। শনিবার দিনভর সুমনের মা হাসিনা আক্তারসহ পরিবারের লোকজন পান্নাকে নির্যাতনের পর শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। এ সময় পান্নার শিশু সন্তান শারমিন আক্তার লামিয়া ঘটনাটি দেখে ফেলায় তাকেও শ্বাসরোধ করে হত্যা করে সুমনের পরিবারের সদস্যরা। এরপর তারা পান্না এবং লামিয়ার লাশ ঘরের মধ্যে গলায় ফাঁস লাগিয়ে ঝুলিয়ে রাখে। নিহত গৃহবধূ, শিশু লামিয়া ও পান্নার অনাগত সন্তানসহ ত্রিপল হত্যার তদন্তপূর্বক বিচার দাবি করেন পান্নার পরিবারের সদস্যরা। সুধারাম মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ নবীর হোসেন মানবজমিনকে বলেন, পুলিশ শনিবার বিকাল ৩টায় থানা এলাকার কাজিরচরের আইয়ুব আলীর বাড়ি থেকে ৪ মাসের অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূ ফারহানা বেগম পান্না (২৪) ও তার মেয়ে শারমিন আক্তার (৩) এর লাশ উদ্ধার করেন। রোববার এ লাশ দুটি ময়না তদন্তের জন্য নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে প্রেরণ করেছেন। এ ব্যাপারে নিহত গৃহবধূর পিতা আবুল কালাম বাদী হয়ে পান্নার শ্বশুর আইয়ুব আলী, দেবর পারভেজ ও রাজু এবং ননদ রুমানাকে আসামি করে খুনের মামলা করেছে। পুলিশ পান্নার ঘাতক শ্বশুর আইয়ুব আলীকে গ্রেপ্তার করেছে।