এক্সক্লুসিভ

বাবুর সাজায় কারাভোগ বাবলুর

সিংড়া (নাটোর) প্রতিনিধি

১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯, সোমবার, ৭:৩১ পূর্বাহ্ন

পুলিশের অসতর্কতার কারণে এক আসামির সাজায় ৫৯ দিন হাজত খেটেছেন অন্য ব্যক্তি। নাটোরের মুখ্য বিচারিক হাকিমের আদালতের একটি মারামারির মামলায় সিংড়া উপজেলার আঁচলকোট গ্রামের দেবদাসের ছেলে বাবুকে দুই বছরের দণ্ডাদেশ দেন। কিন্তু তার পরিবর্তে কারাগারে পাঠানো হয় ইয়াকুব আলীর ছেলে বাবলু শেখ নামের এক চা বিক্রেতাকে। আদালতের নথিপত্র ও বাদীর অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ২০০১ সালের ১৫ই এপ্রিল সদর উপজেলার গাঙ্গইল গ্রামে একটি মারামারির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় কাজী আবদুল মালেক বাদী হয়ে শ্রী বাবুসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে নাটোর সদর থানায় ১৮/০৪/২০০১ইং তারিখে একটি মামলা করেন। মামলার নম্বর ১৪।
তৎকালীন নাটোর সদর থানার উপ-পরিদর্শক মমিনুল ইসলাম বাবুকে অভিযুক্ত করে ১৫/০৫/২০০১ইং তারিখে মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। একই বছরের ২৮শে ডিসেম্বর পুনরায় বাবুকে অভিযুক্ত করে সদর থানার উপ-পরিদর্শক হেলেনা পারভীন তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। মামলার এজাহারে উল্লিখিত আসামি বাবুকে গ্রেপ্তার না করে ইয়াকুব আলীর ছেলে বাবলু শেখকে ২০০২ সালের ৭ই নভেম্বর গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠায় পুলিশ। এই ভুলের বিষয়টি আদালতকে অবহিত না করে ৬ দিন পর ১৩ই নভেম্বর আসামির আইনজীবী বাবু পরিচয়েই বাবলু শেখের জামিন করান। পরে ওই পরিচয়েই বাবলু শেখের বিরুদ্ধে আদালত অভিযোগ গঠন, সাক্ষ্য গ্রহণ ও আসামি পরীক্ষা করেন। যুক্তিতর্ক শেষে ২০১৬ সালের ২৩শে জুন মুখ্য বিচারিক হাকিম মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান সিদ্দিকী আসামি বাবুর বিরুদ্ধে দুইবছর সশ্রম কারাদণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরো তিন মাসের সশ্রম কারাদণ্ডাদেশ দেন। ওই দিন কাঠগড়া থেকে বাবলু শেখকে কারাগারে পাঠিয়ে দেয়া হয়। পরে তিনি ১৬/০৮/১৬ইং তারিখে আপিলের মাধ্যমে জামিনে বের হন। এদিকে মূল ঘটনা জানতে যাওয়া হয় সদর উপজেলার গাঙ্গইল গ্রামে। কথা হয় মামলার বাদী কাজী আবদুল মালেকের স্ত্রী ওলেগান বেগমের সঙ্গে। তিনি বলেন, তার স্বামী প্রায় ১৫ বছর আগে মারা গেছেন। তিনিসহ পরিবারের সবাই জানে এ মামলার কার্যক্রম এতদিনে স্থগিত হয়ে গেছে।
একই গ্রামের বাসিন্দা ও এ মামলার সাক্ষী নবীউল্লাহ বলেন, বাবু নামের কেউ অত্র এলাকায় নাই। তবে যে বাবলু শেখকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছিল এ মামলার সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা নেই। আঁচলকোট গ্রামে গেলে কথা হয় গ্রামের বাসিন্দা মকছেদ আলী প্রাং, জনাব আলী ও গ্রাম্য ডাক্তার বিশ্বনাথ সরকারের সঙ্গে, তারা জানায় অত্র এলাকায় বাবু নামের কেউ কোনোদিনই ছিল না, বাবলু শেখ এলাকার একজন সহজ-সরল মানুষ। তাকে ফঁাঁসানো হয়েছে। বাবলু শেখ বলেন, আমি বাবলু শেখ, বাবু না। আমি একজন নিরীহ ও সহজ-সরল মানুষ। অন্য আসামিদের সঙ্গে তিনি দিনের পর দিন আদালতে হাজিরা দিয়েছেন। সাক্ষ্য গ্রহণের সময় ভুল পরিচয়ের বিষয়টি জানার পর আইনজীবীর মাধ্যমে তার ভোটার পরিচয়পত্র আদালতে জমা দিয়ে ঘটনায় দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি।
কিন্তু তাতেও সমাধান পাইনি। তাই বিনা অপরাধে দুইবারে ৫৯ দিন কারাভোগ করেছি।
বাবলু শেখের অন্যতম আইনজীবী দেওয়ান লুৎফর রহমান বলেন, বাবলু শেখের জামিনের সময় অন্য আইনজীবী ছিলেন। তিনি দাবি করেন, ‘পরে আমি বাবলু শেখের জাতীয় পরিচয়পত্র আদালতে উপস্থাপন করে ত্রুটির বিষয়টি অবগত করেছি। এরপরও তার সাজা হওয়ার বিষয়টি দুর্ভাগ্যজনক।’
বাবলু শেখের বর্তমান আইনজীবী শামীম উদ্দিন বলেন, মামলার তদন্তকারী দুইজন কর্মকর্তা ও আগের আইনজীবীর গাফিলতির কারণে বিনা দোষে কারাভোগ করতে হয়েছে বাবলু শেখকে। তিনি পরবর্তী শুনানিতে খালাস পাবেন বলে আমি আশাবাদী।
নাটোর সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ফরিদুল ইসলাম বলেন, অনেক আগের বিষয়, না জেনে বলতে পারছি না। খোঁজ-খবর নিয়ে পরে বলতে পারব।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status