বাংলারজমিন

পাকুন্দিয়ায় ২৫ বছর শিকলবন্দি রতন

পাকুন্দিয়া (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি

১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯, সোমবার, ৭:২৭ পূর্বাহ্ন

পাকুন্দিয়া উপজেলার পাটুয়াভাঙা ইউনিয়নের দক্ষিণ সাটিয়াদী গ্রামের মৃত আবদুল মমিনের ছেলে রতন মিয়া (৫৫)। তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে তিনি তৃতীয়। প্রায় ২৫ বছর ধরে বসতবাড়ির বারান্দার একটি অন্ধকার কক্ষে শিকলবন্দি অবস্থায় আছেন তিনি। ওই অন্ধকার কক্ষটাই তার পৃথিবী। রাতদিন। এ কক্ষেই তার খাওয়া-দাওয়া, প্রস্রাব-পায়খানা ও ঘুমানোসহ যাবতীয় সবকিছু। জানা গেছে, রতন মিয়া অবিবাহিত। তিনি কোনো পড়াশোনা করেননি। বাড়িতেই কৃষিকাজ করতেন। প্রায় ৩০ বছর আগে মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হন। এ কারণে বছর তিনেক পর ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন তিনি। এর কিছুদিন পর থেকেই তাকে শিকলবন্দি করে রাখা হয়েছে।
সরজমিনে রতন মিয়ার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির পূর্বপাশের বসতঘরের বারান্দার একটি ছোট অন্ধকার কক্ষের মাঝখানে একটি পাকা পিলার। পিলারের সঙ্গে রতন মিয়ার ডান পা শিকল দিয়ে বাঁধা। মেঝেতে একটি বিছানায় তিনি দু’হাঁটু গেড়ে মাথা নিচু করে বসে আছেন। দীর্ঘদিন এভাবে থেকে সুন্দর ফুটফুটে লোকটি শুকিয়ে গেছেন। মাঝে মধ্যে ভিড় ভিড় করে কথা বলেন। এ কক্ষেই তার খাওয়া-দাওয়া, প্রস্রাব-পায়খানা ও ঘুমানোসহ যাবতীয় সবকিছু।
রতন মিয়ার বড় ভাই আঙ্গুর মিয়া বলেন, রতন মিয়া আর দশজন বালকের মতোই সুস্থ ও সবল ছিল। সংসারের কাজকর্ম স্বাভাবিক নিয়মেই করে যেত। কিন্তু প্রায় ৩০ বছর আগে তাদের জমিতে পাশের বাড়ির হযরত আলীর একটি গরু ছুটে গিয়ে ধান গাছ খাচ্ছিল। খবর পেয়ে রতন মিয়া ওই গরুটিকে ধরে নিয়ে বাড়ি নিয়ে আসছিল। এ সময় হযরত আলী দৌড়ে এসে রতন মিয়ার হাত থেকে গরুটি নিয়ে যেতে চেষ্টা করে। এ সময় দু’জনের মধ্যে তর্ক বিতর্ক ও ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে হযরত আলী গরু বাঁধার একটি খুঁটি দিয়ে রতন মিয়ার মাথার একপাশে সজোরে আঘাত করে। এতে রতন মিয়ার প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। পরে স্থানীয়ভাবে তাকে চিকিৎসা দেয়া হয়। কিছুদিন পর রতন মিয়া অস্বাভাবিক আচরণ করতে শুরু করে। পরে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার একটি হাসপাতালে নিয়ে কয়েক দফা চিকিৎসা দেয়া হয়। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। চিকিৎসক বলেছেন, রতন মিয়া কোনোদিনই স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে না। পরে তাকে বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে আসা হয়।
আঙ্গুর মিয়া আরো বলেন, বাড়িতে আনার পর তার অস্বাভাবিক আচরণ বাড়তে থাকে। বাড়ির বাইরে গেলেই লোকজনের ওপর চড়াও হয় এবং লোকজনকে মারতে শুরু করে। তাই তাকে বাধ্য হয়ে বাড়িতে শিকলবন্দি করে রাখা হয়েছে। তবে তার সেবাযত্নে কোনো কমতি নেই। হযরত আলীর বিষয়ে জানতে চাইলে আঙ্গুর মিয়া বলেন, বিষয়টি তখন গ্রামীণ দরবার সালিশের মাধ্যমে মীমাংসা হয়ে যায়।
তবে ঢাকার কোন হাসপাতাল এবং কোন চিকিৎসকের অধীনে রতন মিয়ার চিকিৎসা করিয়েছিলেন সে ব্যাপারে সঠিক কোনো তথ্য দিতে পারেননি বড় ভাই আঙ্গুর মিয়া।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. রুহুল আমীন বলেন, মানসিক ভারসাম্যহীনদের জন্য সমাজসেবা অধিদপ্তরের কোনো ব্যবস্থা নেই। তবে রতন মিয়ার যদি প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড না থাকে তাহলে আমরা এ বিষয়ে ব্যবস্থা করে দিতে পারবো।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নাহিদ হাসান বলেন, বিষয়টি আমি সাংবাদিকদের মাধ্যমে অবগত হয়েছি। খোঁজখবর নিয়ে বিষয়টি দেখা হবে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status