শেষের পাতা

অপেক্ষা শেষ হচ্ছে ‘ফোরলেন প্রকল্প’ ঢাকা-সিলেট সড়কের

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে

১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯, রবিবার, ৯:০০ পূর্বাহ্ন

অর্থপ্রাপ্তির জটিলতা কাটছে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে। শেষ পর্যন্ত প্রকল্পটি আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে। প্রায় ৪ বছর ধরে চলছে অপেক্ষা। প্রথমে চীনের অর্থায়নে এটি হওয়ার কথা ছিল। চীনের সঙ্গে চুক্তিও স্বাক্ষর হয়েছিল। কিন্তু নানা জটিলতায় এটি আর হয়নি। এরপর থেকে প্রকল্প নিয়ে আশা-নিরাশায় দুলছিলেন সিলেটবাসী। বিশাল প্রজেক্ট, বিশাল বাজেট। এত বাজেটের প্রকল্প নিয়ে স্বপ্ন দেখলেও অপেক্ষা শেষ হচ্ছিল না। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক এডিবি সরকারের অগ্রাধিকার এই প্রকল্পে টাকা দিতে সম্মতি দিয়েছে। ফলে কাজ শুরু হতে আর বাধা থাকলো না। প্রধানমন্ত্রীর তরফে এই প্রকল্পের কাজ দ্রুত শুরু করার তাগিদ দেয়া হয়েছে। ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক। সড়কপথে সিলেটের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম। সর্বশেষ বিএনপির সরকারের সময় এই সড়কটির উন্নয়ন কাজ করা হয়েছিল। পরিসর বাড়িয়ে দুই লেনে পরিণত করা হয় এ সড়ক। সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী এম সাইফুর রহমান দূরত্ব কমাতে শেরপুর থেকে শায়েস্তাগঞ্জ পর্যন্ত বাইপাস সড়ক নির্মাণ করেন। কিন্তু এই সড়কও এখন আর যানবাহনের চাপ নিতে পারছে না।

ঝুঁকিপূর্ণ সেতুর কারণে বারবারই বন্ধ হচ্ছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। এছাড়া ঘন ঘন দুর্ঘটনার কারণে মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে সড়কটি। প্রায় দুই মাস আগে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কাছে সেতু ভেঙে পড়ায় এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। এতে করে ট্রেনে বেড়েছিল চাপ। ট্রেনও দুর্ঘটনায় পতিত হয় অতিরিক্ত চাপে। সাবেক অর্থমন্ত্রী ও সিলেটের সন্তান আবুল মাল আবদুল মুহিত ঢাকা-সিলেট মহাসড়ককে চার লেনে উন্নীত করার দাবি জানিয়ে আসছিলেন ২০০৯ সাল থেকে। ঢাকা থেকে সিলেটের যাতায়াতের সময় কমিয়ে আনতে এবং সহজতর করতে তিনিও সরকারের উচ্চ পর্যায়ে এ দাবিটি জোরালো করেন। তার দাবির প্রেক্ষিতে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব গ্রহণের পর সিলেটে এসে আওয়ামী লীগ সেক্রেটারি ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ঢাকা-সিলেট মহাসড়ককে চার লেনে উন্নীত করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। সেই ঘোষণার পর যোগাযোগ মন্ত্রণালয় থেকে এ নিয়ে সার্ভে করা হয়। এবং প্রকল্প প্রস্তাবনা প্রস্তুত করা হয়। সিলেট-ঢাকা মহাসড়ক ছয় লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পে শুরুতে চীনা অর্থায়নের কথা ছিল। এ প্রকল্পটি ২০১৬ সালে ১৪ই অক্টোবর চীনের প্রেসিডেন্ট সি জিনপিংয়ের ঢাকা সফরের সময় উভয় দেশের মধ্যে সমঝোতা স্মারকে (এমওইউ) অন্তর্ভুক্ত হয়। চীন সরকার চায়না হারবার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেডকে এ প্রকল্পের দায়িত্ব দেয়। পরবর্তী চীন সরকার এ প্রকল্পের কাজ শুরু করতে গড়িমসি করে। ফলে নানা জটিলতা দেখা দেয় এ প্রকল্পের কাজ শুরু নিয়ে। গত জাতীয় নির্বাচনের প্রায় ৩ বছর আগে জাতিসংঘের চাকরি ছেড়ে রাজনীতিতে নামেন বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন। সিলেট থেকে শুরু করেন তার রাজনীতির যাত্রা।

রাজনীতি নামার পরপরই বিশেষ করে ঢাকা-সিলেট চারলেন রুট, সিলেট-আখাউড়া ডাবল লাইন, সিলেট ওসমানী বিমানবন্দরকে বর্ধিতকরণসহ নানা প্রকল্পে মনোনিবেশ করেন। নির্বাচনের আগে প্রচারণাকালে তার মুখেও ছিল ঢাকা-সিলেট রুটের কথা। নির্বাচিত হলে এ প্রকল্পের কাজ শুরু করবেন বলে জানান। পরে ২০১৮ সালের ২৯শে মে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ চিঠি দিয়ে সরকারের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগকে (ইআরডি) জানায়, প্রকল্পটি চীনা অর্থায়নের পরিবর্তে সরকারি অর্থায়নে বাস্তবায়ন করা হবে। ওই বছরের ২৯শে জুলাই চীনা দূতাবাসে চিঠি পাঠিয়ে অর্থায়ন প্রক্রিয়া বাতিল করতে অনুরোধ জানায় ইআরডি। তবে এরপরও পরিকল্পনা কমিশন এবং সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগ প্রকল্পটির জন্য নতুন করে  বৈদেশিক সহায়তা অনুসন্ধান করতে ইআরডিকে অনুরোধ জানায়। এর মধ্যে চীনের আরেকটি কোম্পানি অর্থায়নে আগ্রহ দেখালেও তা বেশি দূর এগোয়নি। শেষপর্যন্ত এই প্রকল্পে অর্থায়ন করছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। জানা গেছে, ‘ইম্প্রুভমেন্ট অব ঢাকা (কাঁচপুর)-সিলেট রোড টু ফোর লেন হাইওয়ে অ্যান্ড কন্সট্রাকশন অব সার্ভিস লেন অন বোথ সাইড’ শীর্ষক প্রকল্পের কাজ শুরু হতে দেরি হওয়ায় প্রকল্প ব্যয়ও বাড়ছে। আগের ১২ হাজার ৬৮৬ কোটি ৯৬ লাখ টাকা থেকে ব্যয় বেড়ে ১৪ হাজার ১৪০ কোটি ৮৭ লাখ টাকায় দাঁড়াচ্ছে। প্রকল্পের মেয়াদও বাড়ছে। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত ছিল মেয়াদ। এখন ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়েছে মেয়াদ। এ প্রকল্পে ২১৪ দশমিক ৪৪ কিলোমিটার সড়কের কাজ হবে। নতুন পরিকল্পনায় চারটি ফ্লাইওভার, ১০টি আন্ডারপাস, ৪২টি ফুটওভার ব্রিজ, তিনটি ট্রাক স্ট্যান্ড এবং দুটি রেস্ট হাউজ থাকবে সড়কটিতে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status