বাংলারজমিন
দেড় মাসেই ২৭ কোটি টাকার সড়কে ভাঙন
ভাঙ্গুড়া (পাবনা) প্রতিনিধি
১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯, রবিবার, ৭:০১ পূর্বাহ্ন
জেলার ফরিদুপর থেকে ভাঙ্গুড়া হয়ে চাটমোহর পর্যন্ত ২৫ কি. মি. একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক মহাসড়ক। স্বল্প সময়ে ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র সড়ক এটি। সম্প্রতি সড়কটি সংস্কার করা হয়েছে যাতে ব্যয় ধরা হয়েছিল ২৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা। কিন্তু নির্মাণের দেড় মাসের মাথায় সড়কের বিভিন্ন অংশে ফাটল ও ভাঙন দেখা দিয়েছে। দীর্ঘদিন চলাচলের অযোগ্য থাকার পরে সংস্কার হওয়া সড়কে এত দ্রুত ফাটল ও ভাঙনে চরম হতাশ ও বিরক্ত এলাকাবাসী। তাদের অভিযোগ, শিডিউল মেনে কাজ না করা ও রাস্তার পাশে যথেষ্ট মাটি না থাকায় এই রাস্তা টেকসই হয়নি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০০৪ সালে তৎকালীন বিএনপি সরকারের সময় এই এলাকাবাসীর দাবির প্রতি সম্মান জানিয়ে সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ী থেকে পাবনার টেবুনিয়া পর্যন্ত সংকীর্ণ সড়ক প্রশস্ত করা হয়। নির্মাণের সাড়ে তিন বছরের মাথায় সড়ক বিভিন্ন জায়গায় ভেঙে যায় ও কার্পেটিং উঠতে শুরু করে। পরবর্তী এক বছরের মধ্যে সড়কটিতে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়ে চলাচলের সম্পূর্ণ অযোগ্য হয়ে পড়ে। পাবনা সওজ বছরের পর বছর নামমাত্র সংস্কারে লাখ লাখ টাকায় খরচ করে এই সড়কে। প্রায় অর্ধযুগ সংস্কারবিহীন থাকার পরে ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া, ফরিদপুর ২৫ কি.মি. অংশ বাকি রেখে দুই পাশের অংশ মেরামত করা হয়। বড় বাস, ট্রাক চলতে না পাড়ায় এই অংশের জনপদ ঢাকার সঙ্গে সহজ চলাচলে বিচ্ছিন্ন হয়ে পরে। অবশেষে পাবনা সওজ ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে এই সড়ক সংস্কারের জন্য দরপত্র আহ্বান করে। পাবনার ঠিকাদার স্বপন চৌধুরীর মালিকানাধীন ধ্রুব কনস্ট্রাকশন ২৭ কোটি ৩৭ লাখ টাকার এই মেরামতের কাজ পায়। এই বছরের প্রথমদিকে ঠিকাদার মেরামতের কাজ শুরু করে। শুরু থেকেই কাজের অনিয়ম নিয়ে অভিযোগ উঠতে থাকে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে। কিন্তু অত্যন্ত প্রভাবশালী স্বপন চৌধুরীর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ধ্রুব কনস্ট্র্রাকশনের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাই নিতে পারেনি পাবনা সওজ। ফলে নির্মাণ চলাকালীন বিভিন্ন জায়গায় ফাটল দেখা দিলে ঠিকাদার ফাটল ঠিক করে দিয়ে কাজ চালিয়ে যায়। সরজমিনে দেখা যায়, অঞ্চলিক এই মহাসড়কটির ফরিদপুর থানাপাড়া ও ভাঙ্গুড়া এলাকার ভেড়ামারা গোরস্থানের এক পাশের অংশ দৈর্ঘ্যে প্রায় দুই ফুট প্রস্থে একফুট গভীরভাবে দেবে গেছে। নির্মাণকালীনও এই অংশ বার বার দেবে গেছে। আবার ফরিদপুরের খলশিাদহ ও ভাঙ্গুড়ার ভেড়ামারা বাজারের বিশাল অংশ সংস্কার চলাকালীনই দেবে গেলে দুই অংশ তখনই ঠিক করে দেয়। ওইসব জায়গায় পুনরায় ফাটল দেখা দিয়েছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ করে বলেন, শিডিউল অনুযায়ী সড়কের যতটুকু কার্পেটিংয়ের নিয়ম ছিল তা মানা হয়নি তাই এত দ্রুত সড়কে ফাটল দেখা দিয়েছে। আবার সড়কের দুই পাশে পর্যাপ্ত সাইড বেড না রাখায় বৃষ্টিতেই সড়ক ভেঙে যাচ্ছে। কার্পেটিং যা হয়েছে এখন কিছু করার নেই তবে সড়কের দুই পাশে মাটি দিয়ে সাইড বেড না বানালে এই সড়ক ভাঙতেই থাকবে টিকিয়ে রাখা যাবে না। সড়কে চলচলকারী অটোমোবাইল ব্যবসায়ী রেজাউল করিম বলেন, সড়ক দেড় মাস হলো ঠিক করা হয়েছে এখনই ভাঙনের এই অবস্থা। ২৭ কোটির রাস্তা ৭০০ দিনে শেষ। এই সড়ক যদি দ্রুত মেরামত না হয় তাহলে আবার আগের মতো একযুগ অপেক্ষা করতে হবে। সওজ পাবনা বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সমীরণ রায় বলেন, সড়কের ভাঙনের বিষয়ে শুনেছি। মূলত অতি বৃষ্টির কারণে এই ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে অতি সত্বর ভাঙ্গা জায়গাগুলো ঠিক করিয়ে দেয়া হবে। তবে বৃষ্টির কারণে কাজে কিছুটা বিলম্ব হতে পারে।