বিশ্বজমিন

মালয়েশিয়ায় জঙ্গলে দিনাতিপাত করছে আতঙ্কিত বাংলাদেশীরা

মানবজমিন ডেস্ক

১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯, শুক্রবার, ১:০০ পূর্বাহ্ন

উন্নত জীবনের আশায় মালয়েশিয়া পাড়ি দেয়া বাংলাদেশীরা আতঙ্কিত জীবন কাটাচ্ছেন মালয়েশিয়ায়। অনেকের কাজের পারমিট বাতিল করে দেয়া হয়েছে। নিয়োগদাতাদের কাছ থেকে পালাতে গিয়ে জঙ্গলে অস্থায়ী খুপরিতে দিনাতিপাত করছেন তারা। ধরা পড়লে দেশে ফেরত আসতে হবে। প্রায় এক বছর ধরে জঙ্গলেই দুর্বিষহ জীবন যাপন করছেন এমন ১৬ বাংলাদেশি। মালয়েশিয়ার অনলাইন-ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম মালয়সিয়াকিনি ও মালয় মেইল।

জঙ্গলে দিনাতিপাত করা ১৬ বাংলাদেশীর একজন হচ্ছেন আল আমিন। তিনি বলেন, বাংলাদেশে আমার বাড়ির গরুরাও এর চেয়ে ভালো পরিস্থিতিতে থাকে। তিনিসহ আরো কয়েকজন বাংলাদেশিকে সম্প্রতি কাজ থেকে বরখাস্ত করে দেয়া হয়েছে। তাদের অভিযোগ, সম্প্রতি তাদের মজুরি কমিয়ে দেয়া হয়। তারা সেলানগরের কাপারে একটি ছাপা কারখানায় কাজ করতেন। সেখানে শ্রমিকদের জন্য নির্ধারিত মেসে থাকতেন। তবে শ্রমিক সংখ্যা বেশি হওয়ায় চারজনের কক্ষে ২০ জন পর্যন্ত মানুষ থাকতো। অতিরিক্ত লোক থাকায় ও ঋণের নামে তাদের মজুরি কমিয়ে দেয়া হয় গত বছর। যদিও তাদের ঋণ নিয়োগদানের সময়ই চুক্তির আওতায় শোধ হয়ে যাওয়ার কথা। নিয়োগদাতাদের এমন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানালে আল আমিন সহ অনেককে চাকরিচ্যুত করা হয়।

তারা জানান, তাদের নিয়োগদাতা ও বাংলাদেশ হাই কমিশনের মধ্যে কোনো সমঝোতা না হওয়ায় তাদের চাকরিতে পুনর্বহাল করা হয়নি। দেয়া হয়নি নতুন কাজের পারমিট। তাদের দুই সহকর্মীকে আটক করে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। তাদের প্রাপ্য বেতনও পরিশোধ করা হয়নি। এরপরই বাকিরা ভয়ে হাইওয়ের কাছে এক জঙ্গলে পালান। অদূর ভবিষ্যতে কাজের পারমিট ফিরে পাবার আশায় রয়েছেন তারা।
মালয়সিয়ানিকির প্রতিবেদনে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাই কমিশনের কর্মকর্তা মুকসেদ আলীকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, ফোনে কথা বলা, সিগারেট খাওয়া ও প্রতিষ্ঠানের দেয়া জুতা না পরার কারণে ওই শ্রমিকদের শাস্তি দেয়া হতো। শেষমেষ প্রতিষ্ঠানের বিধি ভঙ্গের দায়ে তাদের ফেরত পাঠানো হয়।

জঙ্গলে বাসরত দলের আরেক সদস্য হচ্ছেন কিশোরগঞ্জের নোয়াকান্দি গ্রামের মান্নান মিয়া। তিনি জানান, মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য কামাল চন্দ্র দাস নামের এক দালালকে ১২ হাজার রিঙ্গিত দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ওই লেনদেনের কোনো কাগজপত্র নেই তার কাছে। ওই দালাল তার টাকা মেরে দিয়েছে। তাকে বৈধ কাগজপত্র দেয়া হয়নি। প্রফেশনাল ভিসায় গিয়েও অবৈধ রয়ে গেছেন তিনি।
তিনি বলেন, আমার সব স্বপ্ন গিলে খেয়েছে দালালরা। পরিবারকে সাহায্য করা তো পরের কথা, নিজের জীবন নিয়েই আতঙ্কে আছি আমি। সারাদিন কঠোর পরিশ্রম করেও রাতে এসে এই জঙ্গলে ঘুমাতে হচ্ছে।

মালয় মেইল জানিয়েছে, মালয়েশিয়ায় গত এক বছরে প্রতিদিন গড়ে দুজন করে বাংলাদেশী শ্রমিকের মৃত্যু হচ্ছে। বেশিরভাগেরই মৃত্যু হচ্ছে হার্ট এটাক বা স্ট্রোক হয়ে। তাদের বেশিরভাগেরই বয়স ১৮ থেকে ৩২ বছরের মধ্যে। সবমিলিয়ে গত এক বছরে এরকম মৃত্যু হয়েছে অন্তত ৭৩৬ জন শ্রমিকের। আর ২০০৫ সাল থেকে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন মোট ৪ হাজার ৩২১ জন। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় মৃত্যুর হার বেড়েছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status