প্রথম পাতা

ছাত্রলীগে অস্থিরতা কী হচ্ছে?

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার

১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯, শুক্রবার, ৯:১৮ পূর্বাহ্ন

অদৃশ্য সিন্ডিকেট থেকে মুক্ত করে ছাত্রলীগকে সুনামের ধারায় ফিরিয়ে আনতে গত বছরের ৩১শে জুলাই রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনকে সভাপতি ও গোলাম রাব্বানীকে সাধারণ সম্পাদক করে কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হয় ছাত্রলীগের। কিন্তু প্রত্যাশার ছিটেফোঁটাও পূরণ করতে পারেননি এ দুই নেতা। ত্যাগীদের বাদ দিয়ে কেন্দ্রীয় কমিটিতে বিতর্কিতদের স্থান দেয়া, কমিটি গঠনে আর্থিক লেনদেন, বিলাসী জীবনযাপন, সাংগঠনিক কার্যক্রমে ধীর গতি, মধুর ক্যান্টিনে সময় না দেয়া, জেলা কমিটিগুলো দিতে না পারাসহ নানা ব্যর্থতা সামনে আসছে শোভন-রাব্বানীর বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, নেতৃত্বের  অযোগ্যতার কারণে বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে নেতাকর্মীদের মধ্যেও।

বিভিন্ন সময় নিজেরাই নিজেদের প্রতিপক্ষ হচ্ছে। এছাড়াও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের অনেক সিনিয়র নেতার অনেক পর অনুষ্ঠানস্থলে শোভন-রাব্বানীর উপস্থিত হয়েছেন। যেটাকে শিষ্টাচার বর্হিভূত আচরণ বলে ক্ষোভও প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগের অনেক কেন্দ্রীয় নেতা। এদিকে শীর্ষ দুই নেতার ওপর প্রধানমন্ত্রীর অসন্তোষের খবর সামনে আসাতে। একের পর এক অনিয়মে জড়িয়ে থাকা শোভন-রাব্বানীর প্রতি এতোদিন অনেকে মুখ খুলতে না পারলেও তারা এখন মুখ খুলছেন। অন্যদিকে গণভবনে প্রবেশে এতোদিন ছাত্রলীগ সভাপতি সাধারণ সম্পাদকের স্থায়ী যে পাশ ছিল তা বাতিল করা হয়েছে। জানা গেছে, আগামীকাল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের সভায় শোভন-রাব্বানী নেতৃত্বাধীন কমিটি ভেঙে দেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসতে পারে।

অথবা এ দু’জনকে সরিয়ে ভারপ্রাপ্ত দু’জনকে সভাপতি সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেয়াও হতে পারে বলে আওয়ামী লীগের একটি সূত্র জানিয়েছে। এছাড়া তাদের রেখেই বিকল্প কোন ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়েও আলোচনা আছে। ২ বছর মেয়াদের কমিটির আরও ১০ মাস বাকি থাকায় অনেকে ভাবছেন আগাম সম্মেলন নিয়ে, আবার জল্পনা আছে সম্মেলন ছাড়াই নতুন নেতৃত্ব দেয়ার। গতকাল সেতু ভবনে সাংবাদিকদের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমি এ নিয়ে (ছাত্রলীগ) আর কোনো কথা বলবো না। কারণ আমাদের সভাপতি দেশরত্ন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিষয়টি দেখছেন। এ নিয়ে আমার কোনো মন্তব্য নেই।’ এদিকে ছাত্রলীগের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী যে সিদ্ধান্ত নেন তা মেনে নিতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন সংগঠটির সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী। গতকাল দুপুরে ডাকসুর সামনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে এ কথা বলেন তিনি। এসময় তিনি নিজেদের ভূলত্রুটি স্বীকার করে নিয়ে আগামীতে ছাত্রলীগের দিকে যেন আর কেউ আঙ্গুল তুলতে না পারে সে চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করার কথা জানান।

গোলাম রাব্বানী বলেন, নেত্রীর জন্যই পুরো ছাত্রলীগ পরিবার। আপার মনে কষ্ট দিয়ে আমরা কেউ ছাত্রলীগ করতে চাই না। এজন্য বলবো যে ভুলত্রুটিগুলো হয়েছে, অবশ্যই কিছু ভুলত্রুটি হয়েছে, যা রটে তার কিছুটা হলেও ঘটে। সে জায়গা থেকে আমরা চেষ্টা করবো ভুলত্রুটি শুধরে কাজ করার। ছাত্রলীগ শেখ হাসিনার আমানত। আপা যেভাবে বলবেন আমরা সেভাবেই করব। এদিকে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব যখন ভেঙে দেয়ার আলোচনা চলছে ঠিক তখনই কমিটি গঠনে আর্থিক লেনদেনের একটি অডিও রেকর্ড ফাঁস হয়। যেখানে ৪০ লাখ টাকার বিনিময়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন রাকিবুল ইসলাম রাকিব নামে একজন। অডিও টেপটি প্রকাশের পর থেকে সমালোচনা আরো বাড়ছে শোভন-রাব্বানীর। এছাড়াও গত মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে সভাপতির গাড়ীতে উঠাকে কেন্দ্র করে আবার নিজেদের মধ্যে মারামারিতে জড়ান সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি শাহরিয়ার কবির বিদ্যুৎ ও তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরী জহির।

এরমধ্যে বিদ্যুৎকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় আর আহত অবস্থায় জহিরকে সভাপতি তার গাড়ীতে করে বাসায় নামিয়ে দিয়ে আসেন। মারামারির সময় দু নেতা একে অপরকে জামাত-শিবির বলে গালি দেন। এদিকে ঘটনাস্থলে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে এক সংবাদিকের হাত থেকে মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে জোর করে ভিডিও মুছে দেন আরেক সহ-সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়। এসময় সাংবাদিককে জোর করে সভাপতির গাড়ীতে উঠানো হয়। এ ঘটনায় পরে দুঃখপ্রকাশ করেন রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সহ-সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়। এর আগে গত রোববার রাতে রাব্বানীকে প্রটোকল দিতে না যাওয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার দা’ সূর্যসেন হলের চারটি রুমে তালা দেয় রাব্বানীর সমর্থকরা। বিষয়টি নিয়েও তীব্র সমালোচিত হন রাব্বানী।

গণভবনের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত সোমবার ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে দেয়া প্রবেশ পাস বাতিল করা হয়। এরপরও কয়েক দফা প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতের চেষ্টা চালান তারা। কিন্তু সফল হননি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এখন সরকার দলীয় ছাত্র সংগঠনটির এই শীর্ষ দুই নেতাকে এখন গণভবনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে হলে অস্থায়ী পাস সংগ্রহ করতে হবে। অস্থায়ী এই পাসের মেয়াদ থাকে মাত্র কয়েক ঘণ্টা। গণভবন সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের গণভবনে যাতায়াতের জন্য বিশেষ পাস দেয়া হয়। সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতাদেরও এ ধরনের পাসের পাশাপাশি মৌখিক নির্দেশ দেয়া থাকে যেন তারা দলের সভাপতির সঙ্গে সরাসরি দেখা করতে পারেন। এর আগে গত শনিবার ছাত্রলীগ সভাপতি শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রব্বানীর কর্মকাণ্ডে এক বৈঠকে ক্ষোভ প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই দুজনকে নিয়ে সেদিন উপস্থিত বেশ কয়েকজন নেতাও নেতিবাচক মন্তব্য করেন। গণভবনে গিয়েও সেদিন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা না করেই তাদের ফিরে আসতে হয়। ওই বৈঠকের দুই দিন পর ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের গণভবনে প্রবেশের পাস বাতিল করা হয়।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status