শেষের পাতা

ছাতকের তরুণী রুবিনাও লাপাত্তা

দেড় মাসেও খোঁজ মেলেনি সিলেটের নাসিমার

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে

২৬ আগস্ট ২০১৯, সোমবার, ৯:৩৩ পূর্বাহ্ন

দেড় মাসেও উদ্ধার হয়নি পুনর্বাসন কেন্দ্র থেকে পালিয়ে যাওয়া সিলেটের তরুণী রুবিনা ও নাসিমা। তারা কোথায় আছে, কেমন আছে জানে না কেউ। তারা উদ্ধার না হওয়ায় স্বস্তিতে নেই সিলেটের পুনর্বাসন কেন্দ্রের কর্মকর্তারাও। পুলিশ তাদের উদ্ধারে তৎপর। কিন্তু এখনো মেলেনি তাদের খোঁজ। ছাতকের বাহাদুরপুর গ্রামের আলাউদ্দিনের মেয়ে রুবিনা আক্তার। ইতিমধ্যে তার বিয়েও হয়েছে। সন্তানও আছে। সিলেট নগরীতেই তিনি বসবাস করতেন। স্বামীর প্ররোচনার কারণে রুবিনা জড়িয়ে পড়ে অসামাজিক কর্মকাণ্ডে। তাকে নিয়ে বিব্রত পিতা আলাউদ্দিন। পুলিশের হাতে আটকের পর রুবিনাকে সুপথে ফিরিয়ে আনতে সমাজসেবা অধিদপ্তর পাঠায় প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে। অন্যদিকে কোম্পানীগঞ্জের টুকেরগাঁও গ্রামের আব্দুল মালেকের মেয়ে নাসিমা জান্নাত। বয়স ১৫ কিংবা ১৬ বছর। এরই মধ্যে জুটেছে বন্ধু-বান্ধব। তাদের প্ররোচনায় জড়িয়ে পড়ে নেশার জগতে। তার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলেন পরিবারের সদস্যরা। অপারগ হয়ে নাসিমাকে তুলে দেন জেলা প্রবেশন অফিসারের কাছে। সেখান থেকে তাকে পাঠিয়ে দেয়া হয় প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে। জেলা প্রবেশন কর্মকর্তা তমির হোসেন চৌধুরী জানিয়েছেন, তাদের দুইজনকে পাঠানো হয়েছিল খাদিমনগরে সমাজসেবা অধিদপ্তর পরিচালিত প্রতিবন্ধী মেয়েদের প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে।

সেখানে তাদের প্রশিক্ষণও দেয়া শুরু হয়। এর মধ্যে রুবিনার পিতা তাকে ছাড়িয়ে নিতে যোগাযোগ করেছিলেন। কিন্তু রুবিনা পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে তিনিও আর আসেন নি। এদিকে, গত ৯ই জুলাই পুনর্বাসন কেন্দ্রের প্রশিক্ষণ ডরমেটরির বাথরুমের অ্যাডজাস্ট ফ্যান ভেঙে পালিয়ে যায় ওই তরুণী। এ ব্যাপারে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের শাহপরাণ (রহ.) থানায় ১০ই জুলাই সামাজিক প্রতিবন্ধী মেয়েদের প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্র খাদিমনগরের সহকারী ব্যবস্থাপক যুক্ত কেইস ওয়ার্কার মোহাম্মদ লুৎফুর রহমান সাধারণ ডায়েরি করেন। তিনি সাধারণ ডায়েরিতে উল্লেখ করেন, সামাজিক প্রতিবন্ধী মেয়েদের প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের বসবাসকারী দুইজন রুবিনা আক্তার (১৮) ও নাছিমা জান্নাত (১৫) ৯ই জুলাই রাত অনুমানিক ৩টায় কেন্দ্রের ডরমেটরি ভবনের টয়লেটের অ্যাডজাস্ট ফ্যান ভেঙে পালিয়ে গেছে। রুবিনাকে গত ৬ই মার্চ শাহপরাণ (রহ.) থানার সাধারণ ডায়রি মূলে নিরাপদ হেফাজতে ও গত ২৬শে জুন নাছিমা জান্নাতকে প্রবেশন কর্মকর্তার মাধ্যমে নিরাপদ হেফাজতে সামাজিক প্রতিবন্ধী মেয়েদের প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে রাখা হয়েছিল। গত ৯ই জুলাই তারা দুইজন পালিয়ে যায়। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তাদের সন্ধান পাওয়া যায়নি।

তাই উদ্ধার কাজে সহযোগিতা করার জন্য শাহপরাণ (রহ.) থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। আর এই সাধারণ ডায়েরির অনুলিপি অবগতির জন্য পরিচালক ও উপ-পরিচালক সমাজসেবা কার্যালয় সিলেট বরাবরে পাঠানো হয়। এ বিষয়ে সিলেট জেলা বারের আইনজীবী জাহাঙ্গীর আলম তার ফেসবুক স্ট্যাটাটে লিখেছেন, ‘মেয়েটির বাড়ি কোম্পানীগঞ্জ। বয়স ১৪-১৫ বছর হবে। যেকোনো কারণে এই মেয়েটি নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। মা-বাবা নিয়ে আসেন আমার কাছে তাকে সংশোধনাগারে পাঠানোর জন্যে। সমাজসেবা অধিদপ্তরের ব্যবস্থাপনায় কিশোরী সংশোধনাগারে পাঠাতে সহযোগিতা চাইলাম প্রবেশন অফিসার তমির হোসেন চৌধুরীর। তার আন্তরিক সহযোগিতায় পাঠানো হলো কিশোরী সংশোধনাগার খাদিমনগরে। কিছুদিন পরে জানানো হলো মেয়েটি পালিয়েছে। কর্তৃপক্ষ শুধু একটা জিডি করেই দায়সারাভাবে দায়িত্ব পালন করলেন। মেয়েটি এখনো নিখোঁজ। হতবাক হলাম কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব বোধ দেখে।’ সামাজিক প্রতিবন্ধী মেয়েদের প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্র খাদিমনগরের সহকারী ব্যবস্থাপক যুক্ত কেইস ওয়ার্কার মোহাম্মদ লুৎফুর রহমান গতকাল বিকালে মানবজমিনকে জানিয়েছেন, ওই দুই তরুণীকে এখনো পাওয়া যায়নি। তবে তারা চেষ্টায় রয়েছেন। তিনি জানান, পালানোর ঘটনায় দুইজন আনসার সদস্যের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status