দেশ বিদেশ

দেশের বাইরে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল ‘জঙ্গি’ তাহেরের

রুদ্র মিজান

২৩ আগস্ট ২০১৯, শুক্রবার, ৮:৫৬ পূর্বাহ্ন

পরিকল্পনা ছিল শিগগিরই দেশের বাইরে গিয়ে অন্যান্য জঙ্গিদের সঙ্গে মিলিত হওয়া। সরাসরি জঙ্গি তৎপরতায় লিপ্ত হতে প্রস্তুতি নিচ্ছিল আবু তাহের। তার আগেই গোয়েন্দা জালে আটকে যায় সে। দীর্ঘদিন নজরদারির পর তাকে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করেছে সিটিটিসি’র সাইবার সিকিউরিটি এন্ড ক্রাইম বিভাগের সদস্যরা।
গ্রেপ্তারের পর গুরুত্বপূর্ণ নানা তথ্য দিয়েছে তাহের। বৃহস্পতিবার আদালতের মাধ্যমে তাকে দুই দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আব্দুল্লাহ আল মুজাহিদ নামে পরিচিত তাহের। একাধিক আইডি থেকে উগ্রবাদী প্রচারণা চালাতো। এমনকি ‘অচিরেই আমরা আসছি’ জানিয়ে হত্যার হুমকি দিতো ফেসবুকের বিভিন্ন পোস্টের মাধ্যমে। শ্রীলঙ্কায় ইস্টার সানডের সকালে চার্চ ও হোটেলে আত্মঘাতী সিরিজ বোমা হামলার ঘটনাকে সমর্থন করেও পোস্ট করেন তিনি। এসব কারণেই তার প্রতি গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়। শৈশব থেকেই উগ্র মানসিকতা নিয়ে গড়ে উঠেছে তাহের। মা-বাবার একমাত্র সন্তান। বাবা নেই। হবিগঞ্জের তাহিরপুর আলিয়া মাদ্রাসা থেকে দাখিল পাশ করে ভর্তি হয় আউশকান্দি রশিদিয়া পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজে। সেখান থেকে এইচএসসি পাস করে। আলীমের পাশাপাশি হবিগঞ্জের বৃন্দাবন সরকারি কলেজে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষে অধ্যয়ণরত তাহের। এরমধ্যেই জড়িয়ে যায় উগ্রবাদী কর্মকাণ্ডে। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসারউল্লাহ বাংলা টিমের মাওলানা জসিম উদ্দিন রাহমানীর অনুসারী তাহের। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উস্কানিমূলক পোস্ট দিতো, মন্তব্য করতো। ধারণা করা হচ্ছে, দেশের কুখ্যাত জঙ্গিদের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা রয়েছে। সূত্রমতে, এক সপ্তাহের মধ্যে পাশ্ববর্তী দেশ ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিলো তারা। এজন্য প্রস্তুতিও নিচ্ছিলো। এরমধ্যেই গত ২১শে আগস্ট রাতে নবীগঞ্জের বাড়ি থেকে তাকে আটক করে সিটিটিসি’র সাইবার সিকিউরিটি এন্ড ক্রাইম বিভাগের সদস্যরা। এ বিষয়ে পরদিন বৃহস্পতিবার এএসআই ইয়াছিন বাদি হয়ে রমনা থানায় একটি মামলা করেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পুলিশ পরিদর্শক (এসআই) মো. সজীবুজ্জামান জানান, দীর্ঘদিন চেষ্টা চালিয়ে নবীগঞ্জ থেকে তাকে গ্রেপ্তার করেছি। কিছু দিনের মধ্যে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিলো তার।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, জসিম উদ্দিন রাহমানীর অনুসারীরা মূলত ভার্চুয়াল জগতেই প্রথমে তার প্রতি আকৃষ্ট হয়। পরবর্তীতে অনুসারীদের মধ্যে যোগাযোগ গড়ে উঠে। তারা নানা ধরণের নেতিবাচক চিন্তা, হামলা এসব বিষয়ে জড়িত হয়ে যায়। আবু তাহেরের সঙ্গে জঙ্গি নেতাদের কার কার যোগাযোগ রয়েছে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। গ্রেপ্তারের পর তার কোনো পাসপোর্ট পাওয়া যায়নি। তাহলে ভারতে কিভাবে যেতে চেয়েছিলো এ নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তবে সংশ্লিষ্টদের ধারণা অন্যান্য সন্ত্রাসীদের মতোই অবৈধভাবেই ভারতে যেতে চেয়েছিলো আবু তাহের। এসব বিষয়ে সিটিটিসি’র সাইবার সিকিউরিটি এন্ড ক্রাইম বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার আ. ফ. ম আল কিবরিয়া বলেন, অনেকেই ভার্চুয়াল মাধ্যমে জঙ্গি তৎপরতায় জড়িয়ে যাচ্ছে। নানা ধরণের উগ্র পোস্ট দিচ্ছে, একই নীতিতে বিশ্বাসীদের মধ্যেও যোগাযোগ হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন কর্মকাণ্ড থেকেই আবু তাহেরকে সনাক্ত করা হয়েছে। তিনি বলেন, অনলাইনে দেশে-বিদেশে অন্যান্য জঙ্গিদের সঙ্গে আবু তাহেরের যোগাযোগের বিষয়টি যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। তাহেরের মতো আরও অনেককেই নজরদারিতে রাখা হয়েছে। নিয়মিত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মনিটরিং করা হচ্ছে বলে জানান তিনি। গ্রেপ্তারকৃত আবু তাহের হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ থানার উত্তর গহরপুরের মৃত মো. রফিক উদ্দিনের পুত্র।

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status