দেশ বিদেশ

চিদাম্বরমকে ৫ দিনের সিবিআই রিমান্ড মঞ্জুর আদালতের

কলকাতা প্রতিনিধি

২৩ আগস্ট ২০১৯, শুক্রবার, ৮:৫৬ পূর্বাহ্ন

ভারতের কংগ্রেস নেতা এবং সাবেক অর্থ ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদাম্বরমকে ৫ দিনের জন্য সিবিআই রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। বিচারক তার রায়ে ২৬শে আগস্ট পর্যন্ত চিদাম্বরমকে সিবিআই হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার বিকালে চিদাম্বরমকে সিবিআই আদালতে পেশ করা হয়েছিল। সেখানে সিবিআই-এর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, চিদাম্বরমের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছিল। সেই কারণেই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সিবিআই-এর হয়ে সওয়াল করে অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা বলেছেন, এটি আর্থিক দুর্নীতির একটি ‘ক্লাসিক কেস’। সেই সঙ্গেই চিদম্বরমের বিরুদ্ধে তদন্তে অসহযোগিতার অভিযোগও আনা হয়েছে। তবে আদালতে চিদাম্বরমের পক্ষে অভিষেক মনু সিঙ্ঘি এবং কপিল সিবাল তদন্তকারী সংস্থার সব যুক্তি খণ্ডন করে বলেছেন, কিভাবে আইএনএক্স মামলায় অভিযুক্ত ইন্দ্রাণী মুখার্জিকে সাবেক মন্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা সাজানোর জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। চিদাম্বরম সিবিআইয়ের সঙ্গে সহযোগিতা করছেন না বলে যে দাবি করা হচ্ছে তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন চিদাম্বরমের আইনজীবীরা। এদিন সওয়াল জবাবের মধ্যেই চিদাম্বরম বিচারপতির অনুমতি নিয়ে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়েই বলেছেন, তাকে যে প্রশ্নগুলি করা হয়েছে, তার সবগুলোর তিনি উত্তর দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, দয়া করে প্রশ্নোত্তরের নথি দেখুন। এমন একটাও প্রশ্ন নেই, যার উত্তর আমি দিইনি। আমাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, বিদেশে আমার কোনো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট আছে কিনা। জবাবে আমি বলেছি, না। জানতে চাওয়া হয়েছিল, আমার ছেলের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট আছে কিনা বিদেশে। আমি বলেছি, হ্যাঁ। ২০১৮ সালের ৬ই জুন তাকে যেসব প্রশ্ন করা হয়েছিল, সেগুলোরও উত্তর দিয়েছেন তিনি আদালতে জানিয়েছেন। অর্থাৎ তিনি যে তদন্তে অসহযোগিতা করছেন না, সেটাই বোঝাতে চেয়েছেন সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। এরই মধ্যে বৃহস্পতিবার আইএনএক্স মামলার মূল অভিযুক্ত ইন্দ্রাণী মুখার্জি রাজসাক্ষী হতে চেয়ে দিল্লি হাইকোর্টে আবেদন করেছেন। আদালত সেই আরজি মঞ্জুর করেছেন বলেও জানা গেছে। গত বুধবারই কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা সেন্ট্রাল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (সিবিআই) চিদাম্বরমকে নাটকীয় পরিস্থিতিতে গ্রেপ্তার করেছে জোড়বাগে তার বাড়ি থেকে। এরপরই তাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে সিবিআইয়ের দপ্তরের গেস্ট হাউসে। সেখানেই তাকে রাখা হয়েছে। নিয়মমত বুধবারই তার মেডিকেল পরীক্ষা হয়েছে। তবে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে তাকে দীর্ঘক্ষণ জেরা করেছেন সিবিআইয়ের আধিকারিকরা। বিকাল তিনটের পরে তাকে সিবিআই আদালতে হাজির করানো হয়েছে। সিবিআই ৫ দিনের জন্য চিদাম্বরমকে হেফাজতে নেবার জন্য আবেদন জানিয়েছিল। বুধবার রাতে পি চিদাম্বরমকে গ্রেপ্তার করা নিয়ে সন্ধের পর থেকে নাটকের পর নাটক হয়েছে। এ দিন রাতে চিদাম্বরম ২৪ আকবর রোডের কংগ্রেস দপ্তরে আইনজীবীদের নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। তবে এ খবর জানার পরই সিবিআই আধিকারিকরা সেখানে ছুটে যান। কিন্তু তার আগেই চিদাম্বরম বাড়ি চলে গিয়েছিলেন। এর পর সিবিআই আধিকারিকরা জোড়বাগে চিদাম্বরমের বাড়িতে গিয়ে গেট খোলার অনুরোধ জানালেও গেট খোলা হয় নি। তবে গেট না খোলায় দেয়াল টপকে বাড়িতে ঢুকে তারা ভারতীয় সময় রাত পৌনে দশটা নাগাদ চিদাম্বরমকে গ্রেপ্তার করেছেন। তবে দলীয় দপ্তরে সংবাদ সম্মেলনে চিদাম্বরম বলেছেন, আমার নাম এই মামলার এফআইআরে নেই। মিথ্যেবাদীরা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যে কথা বলে চলেছে। আমি গ্রেপ্তারের বিরুদ্ধে রক্ষাকবচের দাবি করেছিলাম। দিল্লি হাইকোর্ট তা মঞ্জুরও করেছিল। ফলে আমি গত ১৫ মাস জামিনে ছিলাম। কিন্তু মঙ্গলবার আদালত সেই জামিন খারিজ করে দিয়েছেন। তবে আমি পালিয়ে যাইনি। বুধবার সুপ্রিম কোর্টেও উপস্থিত ছিলাম। গোয়েন্দা সংস্থাগুলির কাছে আমার আবেদন, আইনকে সম্মান করুন। গণতন্ত্রে আমার পূর্ণ আস্থা রয়েছে। বর্তমানে ভারতের সংসদের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভার সদস্য চিদাম্বরম অতীতে বিভিন্ন সময় অর্থমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পেনশনবিষয়ক মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। নির্বাচিত হয়েছিলেন সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভার সদস্য হিসেবেও। চিদাম্বরমের বিরুদ্ধে অভিযোগ, প্রথম ইউপিএ সরকারের আমলে অর্থমন্ত্রী থাকাকালীন সময়ে চিদাম্বরম পিটার ও ইন্দ্রাণী মুখোপাধ্যায়ের আইএনএক্স মিডিয়া গোষ্ঠীকে বেআইনি ভাবে বিদেশি লগ্নি আনার ছাড়পত্র দিয়েছিলেন। তার বিনিময়ে চিদাম্বরম তার ছেলে কার্তিও সংস্থাকে সাহায্য করতে বলেছিলেন। পিটার-ইন্দ্রাণী কার্তিকে তিন কোটি রুপি ঘুষ দিয়েছিলেন বলেও অভিযোগ। এর আগে চিদাম্বরমের পুত্র কার্তিকে এই আইএনএক্স মিডিয়া মামলাতেই সিবিআই গ্রেপ্তার করেছিল। প্রায় তিন সপ্তাহ সিবিআই হেফাজতে ছিলেন কার্তি। গত মঙ্গলবার দিল্লি হাইকোর্ট চিদাম্বরমের আগাম জামিন বাতিল করে দেয়ার পর থেকে তার কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না বলে গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআই ও ইডি দাবি করেছিল। একটি দুর্নীতি মামলায় সিবিআই ও এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের গোয়েন্দারা হন্যে হয়ে তাকে খুঁজছিলেন। তবে বুধবার সারাদিন ধরে সুপ্রিম কোর্টে চিদাম্বরমের গ্রেপ্তারি ঠেকাতে জামিনের চেষ্টা করার পরও আবেদনের শুনানি হয় নি। সন্ধ্যার পরে জানা গেছে, আগামী শুক্রবার তার জামিন আবেদনের শুনানি হতে পারে। ফলে চিদাম্বরমের গ্রেপ্তারি একরকম নিশ্চিত হয়ে উঠেছিল। বুধবার সকালেই চিদাম্বরমের বিরুদ্ধে লুক আউট নোটিশ জারি করেছিল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। ফলে দেশের বাইরে যাওয়ার পথ বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। বুধবার সুপ্রিম কোর্টে একটি পিটিশন দাখিল করে চিদাম্বরমের আইনজীবীরা জানিয়েছেন, ‘বেপাত্তা’ বলে তদন্তকারী সংস্থা দু’টি যে দাবি করছে, তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। তিনি পালিয়ে যাননি এবং বিচার প্রক্রিয়াকেও এড়াচ্ছেন না। তবে আদালতকে সিবিআই পাল্টা জানায়, যে আর্থিক তছরুপের অভিযোগ চিদাম্বরমের বিরুদ্ধে উঠেছে তা নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত। মঙ্গলবারই আইএনএক্স মিডিয়া মামলায় দিল্লি হাইকোটের্র বিচারপতি সুনীল গৌর চিদাম্বরমের জামিন খারিজ করে দিয়ে রায়ে বলেছেন, প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে, সাবেক অর্থমন্ত্রী পি চিদাম্বরমই আইএনএক্স মিডিয়া আর্থিক কেলেঙ্কারি মামলার ‘কিংপিন’ অর্থাৎ প্রধান ষড়যন্ত্রী। আইএনএক্স মিডিয়ায় বিদেশি বিনিয়োগে অসঙ্গতির অভিযোগে চিদাম্বরমের বিরুদ্ধে তদন্ত করছে ইডি এবং সিবিআই। তবে এদিন চিদাম্বরমকে হেফাজতে নেবার পর কার্তি চিদাম্বরম বলেছেন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে সব করা হচ্ছে। এই মামলায় চিদাম্বরমকে যেভাবে জড়ানো হয়েছে তার নিন্দা করে কংগ্রেসের সাবেক সভাপতি রাহুল গান্ধী বলেছেন, ইডি, সিবিআই এবং মেরুদণ্ডহীন সংবাদ মাধ্যমের একাংশকে কাজে লাগিয়ে চিদাম্বরমের চরিত্রহননের চেষ্টা করেছে মোদি সরকার। ক্ষমতার এই নির্লজ্জ অপব্যবহারের তীব্র নিন্দা করেছেন রাহুল। চিদাম্বরম ইস্যুতে সরব হয়েছেন প্রিয়াঙ্কা গান্ধীও। কংগ্রেস চিদাম্বরমের পাশে দাঁড়িয়ে বলেছে, অর্থনীতির দুর্দশা থেকে অনুচ্ছেদ ৩৭০ রদ করার মতো বিষয়ে চিদাম্বরম গুরুত্বপূর্ণ বিরোধী স্বর ও মস্তিষ্ক হিসেবে কাজ করতেন। রাজ্যসভাতে সরকারকে আক্রমণে তার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কংগ্রেসের অভিযোগ, এই কারণেই চিদাম্বরমকে নিশানা করা হচ্ছে। অন্যদিকে বিজেপি নেতা ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কিরেন রিজিজু বলেছেন, দুর্নীতির সঙ্গে কোনো রাজনৈতিক দলকে জড়ানো উচিত নয়। দুর্নীতির তদন্তে আইনি প্রক্রিয়ার সঙ্গে সহযোগিতা করা উচিত সকলের। এদিকে, চিদাম্বরমের গ্রেপ্তারি প্রসঙ্গে বৃহস্পতিবার মুখ খুলেছেন পশ্চিমবঙ্গেও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। দেশে আর গণতন্ত্র খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। মমতা বলেছেন, আমি আইনি বিষয় নিয়ে কিছু বলছি না। কিন্তু অনেক সময় পদ্ধতিগুলো ভুল হয়। চিদাম্বরম একজন প্রবীণ রাজনীতিক। তিনি দেশের সাবেক অর্থমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। যে পদ্ধতিতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তা অত্যন্ত হতাশাজনক, দুঃখজনক এবং খারাপ।

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status