বাংলারজমিন

অভিভাবকরা উদ্বিগ্ন খুলনায় শিক্ষার্থীরা অনৈতিক সম্পর্কে জড়াচ্ছে

স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা থেকে

২৩ আগস্ট ২০১৯, শুক্রবার, ৮:৪৭ পূর্বাহ্ন

ফেসবুক-ইন্টারনেটে পর্নোছবি, পাশ্চাত্যের অপসংস্কৃতির অনুকরণ ও শিক্ষাঙ্গনে মাদকের ছড়াছড়ির কারণে খুলনায় সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে জড়াচ্ছে শিক্ষার্থীরা। গত দুই সপ্তাহে এ ধরনের কয়েকটি ঘটনায় থানায় মামলা হলে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন অভিভাবকরা। অপরাধ বিশ্লেষকদের মতে, ‘সংস্কৃতির ভারসাম্যহীনতা’ এ ধরনের অপরাধের বড় কারণ। সামাজিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা, পারিবারিকভাবে সন্তানদের নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত করা ও বিদেশি অপসংস্কৃতি চর্চা বন্ধের মাধ্যমে এ ধরনের অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
জানা যায়, গত ১৭ই আগস্ট খুলনায় বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণের অভিযোগে সোনাডাঙ্গা থানায় মামলা করেন খুলনা নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির এক ছাত্রী (২০)। এজাহারে ওই ছাত্রী নিজেকে অন্তঃসত্ত্বা দাবি করলে পুলিশ একই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অভিযুক্ত শিঞ্জন রায়কে গ্রেপ্তার করে। আলাদা ঘটনায় ১৯শে জুন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক ছাত্রী ধর্ষণের অভিযোগে কোস্ট গার্ডে কর্মরত তানজিল ইসলামের বিরুদ্ধে খুলনা থানায় মামলা করেন। ফেসবুকের মাধ্যমে তাদের পরিচয় এবং বর্তমানে অন্তঃসত্ত্বা ওই ছাত্রী তার সন্তানের পিতৃত্বের পরিচয় দাবিতে মামলা করেছেন বলে পুলিশ জানিয়েছে। এছাড়া গত ৩রা জুলাই খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পাপ্পু কুমার চারুকলা ইনস্টিটিউটের লাইব্রেরিতে এক ছাত্রীকে ধর্ষণ করে। পাপ্পু কুমারকে বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
মানবাধিকার কর্মীদের দাবি, খুলনার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনৈতিক এসব ঘটনা ক্রমেই বাড়ছে। এসব অপরাধের পেছনে মিশ্র সংস্কৃতির কুপ্রভাব, বিষণ্নতা, মাদক ও পারিবারিক নৈতিক শিক্ষার অভাবকে দায়ী করেছেন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. মো. আবদুল জব্বার। তিনি বলেন, ফেসবুক-ইন্টারনেটের কারণে ছেলেমেয়েরা সহজেই কাছাকাছি চলে আসে। প্রায়ই দেখা যায়, পার্কে বা রেস্টুরেন্টে ছেলেমেয়েরা ঘনিষ্ঠভাবে আড্ডা দিচ্ছে। অবাধ মেলামেশার ফলে তাদের মধ্যে শারীরিক আকর্ষণ তৈরি হয়। তিনি বলেন, আমরা বর্তমানে ‘মিকস্‌ড কালচার’ (মিশ্র সংস্কৃতি)’র একটা ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছি। যেখানে পাশ্চাত্য সংস্কৃতি, ভারতীয় সংস্কৃতি, আছে বাঙালি সংস্কৃতি ও মধ্যপ্রাচ্যের সংস্কৃতি। এই ‘মিকস্‌ড কালচার’র মধ্যে থেকে বাঙালি সংস্কৃতির মূল্যবোধে পচন ধরেছে। অন্যের সংস্কৃতি, তাদের পোশাক-সাজসজ্জা অনুকরণ করতে গিয়ে সংস্কৃতির ভারসাম্যহীনতায় কোনটা গ্রহণীয় আর কোনটা বর্জনীয় এই বোধটা আমরা হারাতে বসেছি।
আর সামাজিক এ অবক্ষয়ের পেছনে পারিবারিক ও প্রাতিষ্ঠানিক নৈতিক শিক্ষার অভাবকে বড় কারণ বলে মনে করেন নর্দান ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজি, খুলনার উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জাহিদ হোসেন। তিনি বলেন, হঠাৎ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় পরিসরে শিক্ষার্থীরা যখন বিপরীত জেন্ডারের সঙ্গে অবাধে মেলামেশা ও অবস্থান করছে। তখন তাদের মধ্যে সাময়িক ‘রিয়ালিটি শক বা অর্গানাইজেশন বিহ্যাভিহার টার্ম’ শুরু হয়। এর সঙ্গে আধুনিকতার নামে পাশ্চাত্য সংস্কৃতির পর্নোগ্রাফি একত্রিত হয়ে তারা বিপদগামী হয়ে পড়ে।
মাথাচাড়া দিয়ে ওঠা অপরাধের লাগাম টানতে পরিবার, সমাজ ও প্রশাসনের সম্মিলিত প্রচেষ্টার ওপর জোর দিয়েছেন বিশ্লেষকরা। খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার খন্দকার লুৎফুল কবির বলেন, মাদক নির্মূল ও অসামাজিক কার্যকলাপ বন্ধে আবাসিক হোটেল ও সন্দেহজনক স্থানগুলোতে অভিযান চালানো হচ্ছে। তবে এ ধরনের অপরাধের সঙ্গে সামাজিক অবক্ষয় ও নৈতিকতা জড়িয়ে আছে। শুধু পুলিশ নয়, পিতা-মাতা অভিভাবকদের এ অপরাধ দমনে সক্রিয় হতে হবে।




   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status