এক্সক্লুসিভ

রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন পরিকল্পনা স্থগিত করার আহ্বান হিউম্যান রাইটস ওয়াচের

মানবজমিন ডেস্ক

২২ আগস্ট ২০১৯, বৃহস্পতিবার, ৮:১৭ পূর্বাহ্ন

যতক্ষণ পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তন নিরাপদ, স্বেচ্ছায় ও মর্যাদার সঙ্গে না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সরকারের এ প্রক্রিয়া শুরু করার পরিকল্পনা স্থগিত করা উচিত বলে মন্তব্য করেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। এ বিষয়ে দেয়া এক বিবৃতিতে তারা বলেছে, নতুন করে রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন শুরু হওয়ার কথা ২২শে আগস্ট। কিন্তু বাংলাদেশে আশ্রয়শিবিরে রোহিঙ্গারা এর প্রতিবাদ করেছে। তারা বলছে, মিয়ানমারে যে সহিংসতা ও নিষ্পেষণ থেকে পালিয়ে এসেছে, ফিরে গেলে তাদেরকে সেই একই অবস্থার মুখোমুখি হতে হবে। তাই শরণার্থীদের নিরাপত্তা, মৌলিক অধিকার, নাগরিকত্বের সম অধিকার নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।
বিবৃতিতে তারা বলেছে, বাংলাদেশ সরকার ২২ হাজার রোহিঙ্গার একটি তালিকা হস্তান্তর করেছে মিয়ানমারের কাছে। তার মধ্য থেকে প্রাথমিকভাবে মিয়ানমার ৩৪৫৪ জনকে ভেরিফাই করেছে। এসব মানুষকে ফেরত পাঠানোর মধ্য দিয়ে রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক এজেন্সি ইউএনএইচসিআর এবং বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ বলেছে, তারা নিশ্চিত হতে চাইছে যে, এসব রোহিঙ্গা স্বেচ্ছায় ফিরে যেতে চাইছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক পরিচালক মীনাক্ষী গাঙ্গুলি বলেছেন, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে পর্যায়ক্রমিক নিপীড়ন ও সহিংসতার সমাধান করতে পারেনি মিয়ানমার এখনও। তাই দেশে ফিরে গেলে নিরাপত্তা নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার প্রতিটি বিষয়ে কারণ রয়েছে তাদের। রোহিঙ্গাদের প্রতি উদারতা দেখিয়েছে বাংলাদেশ, যদিও ওই আশ্রয়শিবিরগুলোর অবস্থা জটিল। তাই বলে কোনো শরণার্থীকে নিরাপদ নয়, এমন স্থানে ফেরত পাঠানো উচিত হবে না।
জাতিসংঘ এ প্রক্রিয়ায় আলোচনা শুরু করার পর অনেক রোহিঙ্গা শরণার্থী হিউম্যান রাইটস ওয়াচকে বলেছেন, তারা মিয়ানমারে ফেরত যেতে চান। কিন্তু বর্তমানে সেখানে যে অবস্থা তাতে ফিরে যাওয়াটা তাদের জন্য নিরাপদ নয়। প্রাথমিক তালিকায় যেসব শরণার্থীর নাম আছে তাদের অনেকে সমঝোতামূলক আলোচনায় উপস্থিত হতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। একজন শরণার্থী হিউম্যান রাইটস ওয়াচকে বলেছেন, মিয়ানমারে হাজার হাজার রোহিঙ্গা আছেন। তারা এখনও বন্দিশিবিরে। ওই শরণার্থী তাদের রাখাইন রাজ্যে ২০১২ সাল থেকে উন্মুক্ত আকাশের নিচে স্থাপিত খোলা বন্দিশিবিরে থাকা এক লাখ ২৫ হাজার রোহিঙ্গার প্রসঙ্গে এসব কথা বলেছেন। তিনি বলেন, যদি ওইসব মানুষকে মুক্ত করে দেয়া হয় এবং তাদেরকে তাদের গ্রামে যেতে দেয়া হয়, তাহলে বুঝবো দেশে ফিরে যাওয়া নিরাপদ এবং আমরাও দেশে ফিরে যাবো।
২৬ নম্বর ক্যাম্পের একজন শরণার্থী। তার পরিবারে রয়েছে ৬ সদস্য। তার নাম রয়েছে ওই তালিকায়। তিনি বলেন, আমরা মিয়ানমারে ফিরে যেতে চাই না। কারণ, সেখানে আমাদের প্রিয়জনদের অনেকের দাফন করতে পারিনি। তাদেরকে হত্যা করে গণকবর দেয়া হয়েছে। ২৪ নম্বর ক্যাম্পের একজন নারী শরণার্থী বলেন, দ্বিতীয়বারের মতো আমি পালিয়ে বাংলাদেশে এসেছি। আমার স্বামীকে হত্যা করেছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। আমি সেখানে ফিরে যেতে চাই না। কারণ, আমি যে অবস্থার মুখোমুখি হয়েছি, চাই না সেই একই অবস্থার শিকার হোক আমার পরবর্তী প্রজন্ম।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ আরো লিখেছে, প্রত্যাবর্তন পরিকল্পনার কথা ঘোষিত হওয়ার পর মিয়ানমারে নৃশংসতার জন্য দায়ীদের বিচার দাবি করে বিক্ষোভ করেছেন শরণার্থীরা। তারা মিয়ানমার সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, তাদেরকে পূর্ণাঙ্গ নাগরিকত্বের নিশ্চয়তা দিতে, তাদের ভূমি ও সম্পদ তাদের কাছে ফেরত দিতে। এ ছাড়া তাদের বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, যা সেনাবাহিনী পুড়িয়ে দিয়েছে তার ক্ষতিপূরণ দাবি করেছে তারা।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status