বাংলারজমিন

কুলাউড়ায় শিশু পলাশ হত্যাকাণ্ডের তিন সপ্তাহ

থামছে না পরিবারের কান্না

কুলাউড়া (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি

২০ আগস্ট ২০১৯, মঙ্গলবার, ৯:১৯ পূর্বাহ্ন

কুলাউড়ায় শিশু পলাশ হত্যাকা-ের তিন সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও থামছে না তার পরিবারের কান্না। মা-বাবা ও একমাত্র ছোট ভাইয়ের আহাজারির শেষ নেই। পলাশের কথা মনে করেই হাউমাউ করে কেঁদে ওঠেন তারা। কুলাউড়ার ইতিহাসে সবচেয়ে বর্বর শিশু হত্যাকা- এটি। সরজমিন নিহত পলাশের বাড়িতে গেলে যে কারো নিজেকে সংবরণ করা হবে দুষ্কর। আশপাশের বাড়ির লোকজন জড়ো হয়ে পলাশের স্মৃতিচারণ করে পরিবেশকে আরো বিষাদময় করে তোলেন।
নিহত পলাশের মা সন্ধ্যা রানী কর জানান, খেতে বসলে ছেলেটার কথা মনে পড়ে। ভাত পেটে যায় না। ঘুমাতে গেলে মনে হয়, পলাশ আসেনি এখনও। এভাবেই প্রতিটি মুহূর্ত পলাশের স্মৃতি তাদের কুরে কুরে খাচ্ছে। নিহত পলাশের মা- বাবার একটাই চাওয়াÑ আর যেন কোনো মা-বাবাকে এভাবে সন্তান হারাতে না হয়। পলাশের হত্যাকারীদের ফাঁসি চান তারা।
পলাশের বর্বর হত্যাকা-ের বর্ণনা দিতে গিয়ে পাশের বাড়ির হাসনা বেগম বলেন, নিহত পলাশের হাত-পা বাঁধা, মুখের ভেতর হা করা অবস্থায়, প্যান্ট ছিলো হাঁটু পর্যন্ত নামানো। পায়খানার রাস্তায় চালানো বর্বরতা চিহ্ন ছিলো স্পষ্ট। বাড়ির পাশের জমিতে ধান রোপণে আরেকজনকে সহায়তা করছিলো পলাশ। সেখান থেকে দোকানে যাওয়ার কথা বলে ডেকে নেয় জাহেদ। পলাশ আর জাহেদ একসঙ্গে গেলেও বিকালে একা ফেরে জাহেদ। এ সময় তার চোখে-মুখে ছিলো ভীতির ছাপ। পলাশের কথা জিজ্ঞেস করতেই সে উল্টো ঝাড়ি মারে। রাতে যখন সাবেক চেয়ারম্যান শাহজাহানের উপস্থিতিতে বৈঠক বসে তখনও সে পলাশের কথা অস্বীকার করে। পরদিন পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে জাহেদ ঘটনাস্থল গিয়ে পলাশের লাশ দেখিয়ে দেয়।
স্থানীয় লোকজন জানান, রাতে যদি পলাশের সন্ধান দিতো তাহলে হয়তো তাকে জীবিত উদ্ধার করা যেতো। পলাশকে বলাৎকার করে জাহেদ ও রাহেল বাড়িতে এসে বিষয়টি মির্জান আলীকে জানায়। তখন পলাশ জীবিত ছিলো। পরে মির্জান আলীর নির্দেশে ফের ঘটনাস্থলে গিয়ে পলাশের মৃত্যু নিশ্চিত করে। স্থানীয় লোকজন জানান, ঘটনার পর থেকে মির্জান আলীকে বাঁচাতে জোর তৎপরতা চালাচ্ছেন স্থানীয় প্রভাবশালী এক সাবেক জনপ্রতিনিধি।
এদিকে সরেজমিন এলাকায় গিয়ে খুনিচক্রের বিরুদ্ধে পাওয়া যায় ভয়ঙ্কর তথ্য। খুনি রাহেলের চাচা ও জাহেদের বাবা মির্জান আলী একজন ভয়ঙ্কর মানুষ। গাছচোর থেকে একজন বড় মাপের মাদক ব্যবসায়ী এই মির্জান আলী। এলাকার দরিদ্র অসহায় মেয়েদের বিদেশ পাঠানোর নামে হাতিয়েছেন অনেক টাকা। সেই টাকার কারণে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের আয়ের উৎস মির্জান আলী হয়ে উঠে তাদের কাছের মানুষ। তারই পদাঙ্ক অনুসরণ করে দুই ছেলে নাহিদ (পলাতক) ও জাহেদ (জেলহাজতে)।
স্থানীয় লোকজন জানান, মির্জান আলীর দুই ছেলের কাছে স্থানীয় বাসিন্দারা অসহায়। দিনে-দুপুরে তারা মানুষের ঘর থেকে মোবাইল, টাকা-পয়সা চুরি করে নিয়ে যায়। একাধিকবার হাতেনাতে ধরার পরও মেম্বার, চেয়ারম্যান তাদের বিরুদ্ধে কোনো সঠিক বিচার না করায় তারা বেপরোয়া হয়ে ওঠে। এর আগেও মির্জান আলীর ছেলে একই এলাকার অপর এক শিশুকে বলাৎকার করে। আর পলাশকে হত্যার আগে যে বলাৎকার করা হয়েছে, যারা পলাশের লাশ দেখেছে, তারা সবাই বলতে পারবে।
এদিকে ঘটনার পর থেকে মির্জান আলীর স্ত্রী কমলা বেগম ও বড় ছেলে নাহিদ আত্মগোপনে আছেন। 
কুলাউড়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সঞ্জয় চক্রবর্তী জানান, আসামিরা পুলিশের কাছে, আদালতের কাছে এবং সর্বোপরি রিমান্ডে ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছে। এমনকি বলাৎকার করেই শিশু পলাশকে হত্যা করেছে বলে স্বীকার করেছে। 
উল্লেখ্য, কুলাউড়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের বালিচিরি গ্রামের পলাশ শব্দকর (৭) নামক প্রথম শ্রেণির এক শিশু শিক্ষার্থী ৩১শে জুলাই নিখোঁজ হয়। পরদিন ১লা আগস্ট পাশর্^বর্তী কালিটি চা-বাগানের একটি সেকশন থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে জাহেদ আলী (১৫), মির্জান আলী (৪৫) ও রাহেল আহমদ (২৬)কে আটক করেছে পুলিশ।

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status