শেষের পাতা

‘কাজ চাই রিলিফ চাই না’

মো. সাওরাত হোসেন সোহেল, চিলমারী (কুড়িগ্রাম) থেকে

১৮ আগস্ট ২০১৯, রবিবার, ৮:৫৬ পূর্বাহ্ন

হঠাৎই হানা দিয়েছিল বৃষ্টি। উজানের ঢল ও বন্যার পানিতে ডুবে গিয়েছিল পুরো চিলমারী। প্রায় দুই সপ্তাহ ছিল থৈ থৈ পানি। বন্ধ হয়ে যায় মানুষের জীবন-জীবিকা। দিনমজুর, শ্রমজীবী মানুষজন হয়ে পড়ে অসহায়। বন্যা আর ভাঙনে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে হাজার হাজার পরিবার। হাজারো মানুষের কান্নায় ভারি হয়ে উঠছে ব্রহ্মপুত্রের পাড়। কথা হয় বাঁধ এলাকার শহিদুল, গোলজার ও মজিবরের সঙ্গে। তারা জানান- রিলিফ আসে, রিলিফ যায়, কেউ পায়, কেউ পায় না।

অনেকে আবার পকেট ভরায়। কিন্তু ভাগ্যের তো পরিবর্তন হয় না। ঘরে চাল-ডাল থাকলেও হাতে নেই কাজ। আর কাজ না থাকায় শুধু আমরা নই হাজার হাজার পরিবার হতাশায় ভুগছে। আমরা চাই না  রিলিফ, আমরা এই রিলিফের ভরসায় থাকতে চাই না। চাই কাজ। আর কাজ করেই আল্লাহর রহমতে ভাগ্যের পরিবর্তন করতে চাই। চাই মাথা উঁচু করে বাঁচতে। এ সময় আজগর আলী নামে মধ্যবয়সী এক ব্যক্তি বলেন, আপনারাই বলেন কত বছর থেকে চিলমারীতে রিলিফ আসছে। কিন্তু কি পরিবর্তন হয়েছে এই অঞ্চলের মানুষের। কাজেই আপনারা লেখেন এই এলাকার মানুষ কাজ চায়। রিলিফের ভরসায় আর থাকতে চায় না। উপজেলার রমনা মডেল ইউনিয়নের জোড়গাছ এলাকার অঞ্জুমান আরা (৭৫)। নদীর তীরে দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া ভিটায় বসে আছেন।

কথা বলতে বলতে দেখিয়ে দেন তার হারানো ঘরবাড়ি ও ভিটা। আর ফেলেন চোখের পানি। বন্যার পানির তোড়ে হারিয়ে যায় তার সাজানো ঘরবাড়ি। সামান্য কিছু উদ্ধার করতে পারলেও রক্ষা করতে পারেনি ভিটামাটি। ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে তা বিলীন হয়ে যায়। পাশের ছিন্নভিন্ন হয়ে যাওয়া প্রতিবেশীর ভিটায় বসে তাকিয়ে ছিলেন নদীর দিকে। তিনি বলেন, ‘ইলিফের চাউল তো পাইছোং তা মুই ইলিফ (রিলিফ) দিয়ে কি করিম। চাও না মুই ইলিফ মোক একনা জায়গা দেও। আর কয়ডা টিন দেও ঘর তুলিম। ব্রহ্মপুত্র মোর সউগে কাড়ি নিছে।’ শুধু আঞ্জুমান আরা নন তার মতো শতশত মানুষের ঘরবাড়ি ব্রহ্মপুত্র ও বন্যার পানির তোড়ে ভেসে গেছে। মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে জোড়গাছ পুরাতন বাজার, খড়খড়িয়া, কাঁচকোল, বুরুজেরপাড়া, মনতোলা, অষ্টমীরচরসহ বেশকিছু গ্রাম হয়ে গেছে ছিন্ন-বিছিন্ন। শুধু তাই নয়, চোখের পলকেই ব্রহ্মপুত্রে বিলীন হয়ে গেছে শতশত ঘরবাড়ি ও ভিটা। নেই থাকার জায়গা। নেই ঘর তোলার আসবাবপত্র। অনেকে বউ বাচ্চা নিয়ে অন্যের জায়গায়, বাঁধের রাস্তায়, আশ্রয়ণে রেখে রোজগারের আশায় পাড়ি দিয়েছেন অজানার উদ্দেশ্যে।

তাদের দাবি হামরা (আমরা) ইলিফ (রিলিফ) চাই না, হামাক কাম (কাজ) দেন থাকবের জায়গা দেন। ত্রাণের চাল পেয়েও তাদের চোখের জল থামছে না। তারা চায় কাজ। কথা হয়, শ্রমিক সাহেব আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, জীবন বাঁচাতে আমরা রিলিফ চাই না, কাজ করে অন্যদের মতো সম্মানজনকভাবে বাঁচতে চাই। মানুষের দুঃখ কষ্টের কথা স্বীকার করে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শওকত আলী সরকার বীর বিক্রম বলেন, সত্যি বলতে এই এলাকার মানুষের হাতে কাজ বা কর্মসংস্থান না থাকায় অন্যের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। আমরা এর সমাধানের জন্য চেষ্টা করছি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status