শেষের পাতা

পশ্চিমাঞ্চলের ট্রেনে অন্তহীন দুর্ভোগ

লণ্ডভণ্ড শিডিউল ঠিক হয়নি এখনো

শুভ্র দেব

১৮ আগস্ট ২০১৯, রবিবার, ৮:৫৫ পূর্বাহ্ন

চিলাহাটীগামী নীলসাগর এক্সপ্রেসের যাত্রী আকাশ। মধ্য বয়সী এই যাত্রী সপরিবারে গতকাল সকাল ৭টায় কমলাপুর রেলস্টেশনে পৌঁছান। উদ্দেশ্য সকাল ৮টায় চিলাহাটীর উদ্দেশ্যে ট্রেন ছেড়ে যাবে। তারপর চলে যায় ছয় ঘণ্টা। ট্রেনতো ছাড়ার খবরই নাই বরং প্ল্যাটফরমে পর্যন্ত আসেনি। যদিও স্টেশন কর্তৃপক্ষ শিডিউল চার্টে ১২ টা ১০ মিনিটে ট্রেনটি ছাড়ার সম্ভাব্য সময় ধরে রেখেছিলেন। কিন্তু দুপুর ১টা পর্যন্ত নীলসাগর এক্সপ্রেস ট্রেনটি প্ল্যাটফরমে পৌঁছাতে পারেনি। আর এদিকে স্ত্রী ও তিন বছর বয়সী সন্তানকে নিয়ে বেশ বিপাকেই সময় পার করছিলেন আকাশ। ক্ষোভ প্রকাশ করে বললেন স্বস্তির ট্রেন ভ্রমণ দিন দিন অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পৃথিবীর সব দেশে যখন রেল ভ্রমণ নিরাপদ ও ভোগান্তিহীন করা হচ্ছে সেখানে আমাদের দেশে অন্যচিত্র।

শুধু আকাশই নন কমলাপুর রেলস্টেশন এমন দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন শত শত ট্রেন যাত্রী। পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের ট্রেনে শিডিউল বিপর্যয় কাটছেই না। ঈদ যাত্রার আগে থেকে শুরু হওয়া ট্রেনের লন্ডভন্ড শিডিউল এখনও ঠিক হয়নি। ধারাবাহিকভাবে পশ্চিমাঞ্চলের প্রত্যেকটি ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় হচ্ছে। কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে সর্বোচ্চ ছয় থেকে সাত ঘণ্টা দেরি করে ট্রেন ছেড়ে যাচ্ছে। কোনো কোনো ট্রেন আরও বেশি দেরি করছে। এতে করে ওই লাইনের যাত্রীদের ভোগান্তির শেষ নেই। স্টেশন কর্তৃপক্ষ ট্রেনে যাত্রীদের বেশি চাপ, স্টেশনে যাত্রী উঠানামানোর জন্য সময় বেশি যাচ্ছে ও বন্যার কারণে লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কথা তুলে ধরছেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রেল বিভাগের গাফিলতির কারণে ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় হচ্ছে। যেখানে রেল সেবার মান উন্নত হওয়ার কথা সেখানে মান আরও নিম্নমুখী হচ্ছে। যাত্রীদের দুর্ভোগ গোছাতে কর্তৃপক্ষকে আরও বেশি গুরুত্ব দেয়া দরকার।

শনিবার সরজমিন কমলাপুর রেল স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, আটটি প্ল্যাটফর্মের সবকটিতেই যাত্রীদের ভীড়। ট্রেনের অপেক্ষায় থাকা অনেক যাত্রীরাই ক্লান্ত হয়ে শুয়ে বসে সময় কাটাচ্ছেন। অনেকের সঙ্গেই কথা বলে দেখা গেছে তাদের মধ্যে রেলকর্তৃপক্ষের ওপর চাপা ক্ষোভ কাজ করছে। ঈদ শেষ হয়েছে তবুও ট্রেনের শিডিউল বোর্ডের দিকে তাকালে যাত্রীদের নিরাশ হওয়া ছাড়া আর কিছুই করার নাই। শিডিউল বোর্ডে গতকাল বেলা ২টা পর্যন্ত দেখা যায়, চিলাহাটীগামী নীলসাগর এক্সপ্রেস সকাল ৮টায় ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও স্টেশন কর্তৃপক্ষ ট্রেনটি ছাড়ার সম্ভাব্য সময় লিখে রেখেছেন ১২টা ১০ মিনিটে। রংপুরগামী রংপুর এক্সপ্রেস সকাল ৮টার স্থলে বিকেল সাড়ে ৪টায়, লালমনি এক্সপ্রেস সোয়া ৯টার স্থলে বিকেল ৪টায়, সিলেটগামী জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস দুপুর ১২টার স্থলে ১টায় কমলাপুর ছেড়ে যাবে বলে জানালো হয় রেলওয়ের নোটিশ বোর্ডে। অন্যদিকে কমলাপুর স্টেশনে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ১৬টি ট্রেন যাত্রী নিয়ে ঢাকায় পৌঁছেছে। তার মধ্যে কোনো ট্রেনই নির্ধারিত সময়ে স্টেশনে পৌছায় নি। তবে প্রতিটি ট্রেনেই ছিল উপচে পড়া ভিড়। ভিড় ঠেলে নারী-পুরুষ, শিশু-বৃদ্ধ সবাই ফিরছেন ব্যস্ত নগরীতে।

রংপুর এক্সপ্রেসের যাত্রী রুমানা নাফিস বলেন, ছোট ছেলে মেয়েদের নিয়ে সেই সকাল বেলা স্টেশনে এসেছি। ট্রেন কখন আসবে, কখন ছাড়বে তার কোনো সঠিক তথ্য স্টেশন কর্তৃপক্ষও দিতে পারছে না। নিরাপদ ভ্রমণের জন্য রেলপথকে বেছে নেই। কিন্ত এই দুই ঈদ থেকে অসম্ভব দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। জানিনা কর্তৃপক্ষ এই বিষয়গুলোকে কিভাবে নিচ্ছে। তবে যাত্রী হিসাবে আমাদের কষ্টের শেষ নাই। লাইন ধরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে টিকেট সংগ্রহ করে যদি এমন দুর্ভোগের যাত্রা হয় তবে এটা কে মেনে নিবে। একই ট্রেনের আরেক যাত্রী সোলায়মান মিয়া বলেন, এই লাইনে একসময় এমন দুর্ভোগ ছিল না। সম্প্রতি এই দুর্ভোগ শুরু হয়েছে। কর্তৃপক্ষ যেরকম কারন দেখায় বাস্তবের সঙ্গে তার কোন মিল নাই। শিডিউল বিপর্যয়ের পেছনে অন্য কোনো কারণ হয়তো আছে। যদি এভাবে বিপর্যয় অব্যাহত থাক তবে মানুষ ট্রেন ভ্রমণ থেকে বিমুখ হবে। লালমনি এক্সপ্রেসের যাত্রী জগদীশ সাহা বলেন, নয়টার ট্রেন সময় দিয়েছে বিকাল সাড়ে চারটায়। স্টেশনের মধ্যে কি এত ঘণ্টা কাটানো যায়। সঙ্গে স্ত্রী-সন্তান আছে। ঈদের সময় ঝামেলা বেশি থাকে তাই তখন যাইনি। কিন্তু এখন একই দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছি। ঈদের ছুটি শেষে কর্মস্থল জয়পুরহাটে যাবেন একটি ঔষধ কোম্পানীর কর্মকর্তা মাসুদ মিয়া। তিনি বলেন, ভেবেছিলাম সকাল ট্রেনে জয়পুরহাট গিয়ে অফিস করব। কিন্তু তা হলো না, এখনো ট্রেন আসেনি। কখন আসবে? কখন ছেড়ে যাবে? আর কখন গন্তব্যস্থলে পৌঁছাব। ছুটি শেষে নির্ধারিত সময়ে অফিসে পৌঁছাতে না পারায় চাকুরি থাকবে কিনা তাও জানিনা।

কমলাপুর রেলস্টেশনের স্টেশন ম্যানেজার মোহাম্মদ আমিনুল হক বলেন, ট্রেনে যাত্রীদের চাপ বেশি। যেসব যাত্রীরা গ্রামে ঈদ করতে গিয়েছিল তারা আবার ঢাকায় ফিরছে। তাই যাত্রীর চাপ বেশি থাকায় এবং যাত্রীদের ট্রেনে উঠার সুযোগ নিশ্চিত করতে প্রতিটি স্টেশনে একটু বেশি সময় ট্রেন দাঁড়াচ্ছে। এজন্য প্রতিটা স্টেশনেই বাড়তি সময় লাগছে। আর রংপুর ও লালমনিরহাটে বন্যার কারণে ট্রেন লাইন দুর্বল হয়ে গেছে। তাই ধীর গতিতে ট্রেন চলাচল করছে। তাই ট্রেনের সিডিউল ঠিক রাখা যাচ্ছে না। তবে পুর্বাঞ্চলের লাইনে কোন সমস্যা নাই। সময়মত ট্রেন যাওয়া আসা করছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status