শেষের পাতা

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সাবেক প্রতিমন্ত্রীর বাড়িতে রাতভর তাণ্ডব

স্টাফ রিপোর্টার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে

১৫ আগস্ট ২০১৯, বৃহস্পতিবার, ৯:১৮ পূর্বাহ্ন

আটঘাট বেঁধে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় রাতের আঁধারে ভাঙা হয়েছে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান, সাবেক প্রতিমন্ত্রী হারুন আল রশিদের বাড়ি। বাড়িটির দক্ষিণ ও পশ্চিম পাশের সীমানা প্রাচীর গুঁড়িয়ে দেয়া হয় বুলডোজার দিয়ে। ভাঙা হয় দ্বিতল ভবনের এক পাশের দেয়াল। গাছও কেটে ফেলা হয়। লুট করা হয় ওই বাড়িতে থাকা একটি প্রাইভেট ক্লিনিকের অর্ধ কোটি টাকারও বেশি মালামাল। জেলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের কয়েকজন নেতা এ ঘটনায় জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বাড়ি ভাঙচুরের নিন্দা জানিয়েছেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, রাত দুটোর দিকে বাড়ি ও দেয়াল ভাঙার কাজ শুরু হয়। একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, শহরের প্রধান সড়ক বন্ধ করে বুলডোজার বহনের গাড়ি ও বেশ কয়েকটি ট্রাক্টর রাখা হয়। এরপর বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং পাশের একটি ভবনে থাকা সিসি ক্যামেরা অচল করে বাড়ি ভাঙার কাজ শুরু হয়। বাড়িটিতে মডার্ন এক্স-রে ও প্যাথলজি ক্লিনিক নামে একটি প্রতিষ্ঠান ভাড়া রয়েছে। এর একজন কর্মচারী শফিক মিয়া জানান, রাত দুটোর দিকে শব্দ পেয়ে দোতলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে আগতদের পরিচয় জানতে চান। তখন পৌরসভা থেকে এসেছে জানিয়ে গেইট খুলে দিতে বলা হয় তাকে। সে নিচে নামতে নামতে বিদ্যুৎ চলে যায়। এরপর বুলডোজার চালানো হয়। এ সময় অর্ধশত লোক উপস্থিত ছিল সেখানে।     

হারুন আল রশিদ জেলা সদর আসন থেকে পাঁচ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি বিএনপি সরকারের ত্রাণ ও পুনর্বাসন প্রতিমন্ত্রী এবং জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ ছিলেন। বর্তমানে কানাডায় রয়েছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এই প্রবীণ নেতা। তার বাড়ি ভাঙার খবরে সকালে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ সেখানে জড়ো হন। জেলা আওয়ামী লীগ ও বিএনপি’র নেতারাও সেখানে আসেন। বর্বর এই ঘটনার সঙ্গে কারা জড়িত তাদের নামধামও ছড়িয়ে পড়ে মুখেমুখে। হারুন আল রশিদের বাড়ি লাগোয়া পশ্চিম পাশে একটি জায়গা কিনে সেখানে একটি হাসপাতাল করার উদ্যোগ নেন আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী সংগঠনের কয়েকজন নেতা। তারা হচ্ছেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন, শহর যুবলীগের আহ্বায়ক আমজাদ হোসেন রনি, শহর  স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক শফিকুল ইসলাম তৌছির। তাদের সঙ্গে রয়েছেন একাধিক চিকিৎসক এবং ব্যবসায়ীও। শিশু বিশেষজ্ঞ ডাক্তার মো. জাকারিয়া ও  ব্যবসায়ী   উবায়দুল হক ও মো. বাছির এই হাসপাতালের অংশীদারদের অন্যতম। তাদের প্রস্তাবিত ‘ডাক্তার জাকারিয়া মা ও শিশু জেনারেল হসপিটাল’-এ যাওয়ার রাস্তা বের করতে হারুন আল রশিদের বাড়িতে এই ভাঙচুর চালানো হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। গত জুলাই মাসে হাসপাতালটির ম্যানেজিং ডাইরেক্টর হিসেবে ডাক্তার জাকারিয়া পৌরসভার মেয়রের কাছে এক আবেদনে তাদের হাসপাতালের সামনের রাস্তা বিভিন্ন লোকজন দখল করে রেখেছে জানিয়ে তা দখলমুক্ত করার আবেদন জানান। রাতের তাণ্ডবের সময় প্রস্তাবিত ওই হাসপাতাল মালিকদের অনেকে সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তবে ভয়ে তাদের নাম প্রকাশ করার সাহস পাচ্ছেন না কেউ।  মডার্ন এক্স-রে ও প্যাথলজি ক্লিনিকের পরিচালক আজিজুল হক জানান, ক্লিনিকের দুটি ফটক, একটি জেনারেটর, একটি আল্ট্রাসনোগ্রাফি মেশিন ও একটি এসি লুট করে ট্রাকে ভরে নিয়ে গেছে তারা। এ ছাড়া ক্লিনিকের তিনটি জেনারেটর, সাতটি এসি, একটি আলট্রাসনোগ্রাফি মেশিন ও পাঁচটি কম্পিউটার নষ্ট করে দিয়েছে। তার ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অর্ধকোটি টাকার বেশি হবে বলে প্রাথমিক ভাবে ধারণা করছেন তিনি।

ঘটনাস্থল থেকে থানার দূরত্ব কয়েক মিনিটের। শহরের টহল পুলিশও ছিল। জেলা সদর হাসপাতালেও ছিল রাতভর রোগী-মানুষের আসা-যাওয়া। তারপরও দিব্যি শহরের প্রাণকেন্দ্রে এবং প্রধান সড়কের পাশে এমন ঘটনা ঘটলো। তবে সকাল সোয়া ১১টার পর ঘটনাস্থলে আসেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) রেজাউল কবীর ও সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সেলিম উদ্দিনের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল। সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সেলিম উদ্দিন সাংবাদিকদের জানান, রাত থেকে সকাল পর্যন্ত এই ঘটনার সংবাদ কেউ তাদেরকে দেইনি। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) রেজাউল কবীর জানান, পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। মামলা দিলে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এর আগে সকাল ১০টার দিকে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তিনি বলেন- ভয়াবহ অবস্থা। এ ঘটনায় সরকার, পৌরসভা এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধির ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে। আমি এ ঘটনার নিন্দা জানাই।

জেলা বিএনপির সভাপতি হাফিজুর রহমান মোল্লা, সাধারণ সম্পাদক জহিরুল হক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এ বি এম  মোমিনুল হক, সাংগঠনিক সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম সকালে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল বারী চৌধুরী মন্টুও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

এদিকে এ ঘটনার সঙ্গে পৌরসভার কোনো সম্পৃক্ততা নেই বলে জানিয়েছেন পৌরসভার মেয়র নায়ার কবির। তিনি  জানান, পৌরসভার  বুলডোজার নষ্ট। সেটি ভাদুঘর পড়ে রয়েছে। আর তাদের কোনো লোকও সেখানে যায়নি। তিনি জানান, প্রায় দুই মাস আগে চিকিৎসক মো. জাকারিয়া জায়গাটি দখলমুক্ত করে দেয়ার জন্য তার কাছে আবেদন করেন। আবেদনটি পৌরসভার প্রকৌশল শাখায় পড়ে রয়েছে। তিনি বলেন, কাজটি খারাপ হয়েছে। যদি জায়গাটি  বেদখল হয়ে থাকে তাহলে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। একটা চক্র রাতের আঁধারে এই কাজ করতে পারে না। এটি মেনে নেয়া যায় না। জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন, শহর যুবলীগের আহ্বায়ক আমজাদ হোসেন রনি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন তারা ভাঙচুরের কিছুই জানেন না।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status