বাংলারজমিন

ব্রহ্মপুত্রের চরাঞ্চলে ১৩০ পরিবারে ঈদ নেই

সিদ্দিক আলম দয়াল, উত্তরাঞ্চল থেকে

১১ আগস্ট ২০১৯, রবিবার, ৮:২৪ পূর্বাহ্ন

 দুই গ্রামের ১শ’ ৩০ টি পরিবারের মধ্যে কোনো কোরবানি হচ্ছে না । কেনা হচ্ছে না শিশু ও বড়দের জন্য কোনো নতুন কাপড়। ঈদের আনন্দ ওই দুই গ্রামে কোনো প্রকার ছায়া পড়েনি। তারা তাদের লণ্ডভণ্ড হয়ে ঘরবাড়ি খাড়া করতে ব্যস্ত। জুটলে খাবেন। না জুটলে সই সই। এ কথা জানালেন ওই দুই গ্রামের মুরব্বী, মাতব্বর ও মসজিদ কমিটির সভাপতি শামসুল হক।
দুই গ্রামের মাতব্বর বলে পরিচিত বৃদ্ধ শামসুল হক জানান, গেল বন্যায় গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার ফজলুপুর ইউনিয়নের চর হারুডাঙ্গা, কোচখালী ও উজালডাঙ্গার চর তিনটির উপর দিয়ে বয়ে যায় ভয়াবহ স্রোত। স্রোতের টানে হারোডাঙ্গা গ্রামের ২ শতাধিক পরিবারের ঘরবাড়ি কেউ সরিয়ে নিতে পেরেছে । আর কারো গবাদী পশু নিয়ে সাঁতরিয়ে কোনমতো নদী পার হয়েছে। তবে তাদের  কেউ ঘরবাড়ি রক্ষা করতে পারেনি। তাদের ঘরবাড়ি চোখের সামনে নদীর মধ্যে তলিয়ে যেতে দেখেছে সবাই। এবার বন্যায় হারুডাঙ্গার চর জেগে নেই। নেই ঠিকানা। চর এখন নদীতে পরিণত হয়েছে। এখনো  স্র্রোত বয়ে যাচ্ছে চর হারুডাংগার উপর দিয়ে। সেখানে এখনো পানি আর পানি। আর যারা বাস করতো তারা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে যে যেভাবে পারে চলে গেছে। তবে স্বজনর সব চলে গেছে রক্তের বাঁধন ছিঁড়ে।
অন্যদিকে কমতে কমতে কমে গেছে পাশের চর কোচখালী ও উজালডাঙ্গার চর। বন্যার সময় অন্যান্য গ্রামের মতো এই গ্রাম দু’টোর অধিকাংশ পরিবারের ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে যায়। তবে দু’-একট বাাড়ির আঙ্গিনা উঁচুকরণের ফলে জেগে ছিলো বেশ খানিকট জায়গা। স্রোতের টানে ও নদীভাঙনে দুই গ্রামের শতাধিক ঘরবাড়ি নদীতে ভেসে যায়। জনবলের অভাবে কেউ তাদের শেষ সম্বলটুকু রক্ষা করতে পারেনি। ফলে অনেক পরিবার খালি হাত পায়ে উজাল ডাঙ্গার চরে আশ্রয় নিয়েছে অন্য বাসিন্দার ঘরে। একসাথে দলবদ্ধভাবে থাকার ফলে প্রশাসন থেকে চাল সহ বিভিন্ন ত্রাণ বিতরণ করেন সেখানে আশ্রিত ১শ’ ৩০ পরিবারের মধ্যে। শিশু-নারী, বৃদ্ধসহ ওই ১শ’ ৩০ পরিবারে বাস করায় তাদের রক্ষা পাওয়া অনেক সহজ হয়েছে। তবে ঘরবাড়ি ছিল অন্তত ৪ শতাধিক পরিবার। নদীভাঙন ও পানিতে ভেসে যাওয়ার ফলে এখন গ্রামে পরিবারের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১শ’ ৩০ এ। বাকিরা কোথায় চলে গেছে তা কেউ খোঁজ রাখেনি। তবে যেভাবেই হোক ছোট্ট টিলার মতো করে ১শ’ ৩০ পরিবার আশ্রয় নিয়ে বন্যার সময়টা পার করে। কিন্তু সকলের আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ। এই গ্রামের বিত্তবান মুনছুর আলী জানান, আমাদের গ্রামের এমন কোনো ঘর নেই যে, ভালো আছে। বাড়ির ঘরগুলে পানির তোড় থেকে রক্ষা পেয়েছে সেসব ঘর হেলে আছে ও  ভেঙে পড়েছে এবং ধসে গেছে। তাই পানির ও শ্রোতের সঙ্গে যুদ্ধ করে বেঁচে আছে তাদের মধ্যে ১শ’ ৩০ পরিবার। অবস্থা বুঝে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমাদের কারো আনন্দ নেই। ঈদের আনন্দের ছোঁয়া কারো মনে লাগেনি। তাই আমরা বসে সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমর সবাই মিলে ঈদের আনন্দের বদলে আমরা সবাই মিলে নিজেদের ঘর-বাড়ি মেরামত করবো। তারপরও যদি কেউ কোরবানি দেয় তাহলে খুশির কথা। উপজেলা চেয়ারম্যান সেলিম পারভেজ জানান, আমরা মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে যথেষ্ট চেষ্টা করি কিন্তু বান-বন্যা তা মানে না। বানভাসী মানুষের মনে হাসি নাই তবে কেউ না খেয়ে নেই। তাদের হয়তো ঈদের আনন্দ হবে না। কিন্তু তাদের ঘরবাড়ি খাড়া করে দাঁড়াতে পারবে- এই তাদের ঈদ।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status