শেষের পাতা

বদলে গেছে হাটের চিত্র

মারুফ কিবরিয়া

১০ আগস্ট ২০১৯, শনিবার, ৮:২৫ পূর্বাহ্ন

কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে রাজধানীর পশু হাটগুলো জমজমাট হয়ে উঠছে। পাঁচদিন আগে হাট বসা শুরু হলেও এই কয়দিন ক্রেতা শূন্যই ছিল। তাছাড়া দুইদিন বৃষ্টির কারণে পশু নিয়ে বিপাকেও পড়তে হয়েছে গরু ব্যবসায়ীদের। ক্রেতা না থাকায় অলস সময় কাটিয়েছেন তারা। তবে গতকাল ছুটির দিনেই বদলে গেছে  পশুর হাটের চিত্র। কমবেশি প্রতিটি অস্থায়ী হাটেই বেড়েছে ক্রেতার সংখ্যা। অবশ্য ক্রেতাদের আনাগোনা বাড়লেও তেমন বিকিকিনি হতে দেখা যায়নি। হাটে আসা অনেকের অভিযোগ ব্যাপারীরা দাম ছাড়ছেন না। অন্যদিকে ব্যাপারীদেরও দাবি, প্রত্যাশিত দাম না পাওয়ায় গরু বিক্রি করছেন না। তবে তারা বলছেন, দুদিন হাতে রয়েছে, এই সময়টায় পশুর হাট আরো জমে উঠবে। গতকাল রাজধানীর ভাটারা হাটে গিয়ে দেখা যায়, সকাল থেকেই ক্রেতারা ভিড় করছেন পশুর হাটে। কেউ গরু দেখছেন আবার কেউ খাসির ব্যাপারীদের চারপাশে ঘোরা ফেরা করছেন।

এদের কয়েকজনকে দেখা যায়, দর কষাকষিও করছে। সিরাজগঞ্জ থেকে সুবজ উদ্দিন এসেছেন ১২টি গরু নিয়ে। এর মধ্যে একটি মাত্র গরু বিক্রি করতে পেরেছেন গত পাঁচদিনে। সবুজের আনা গরুগুলো প্রতিটিই মাঝারি ধরনের। গড়ে ৯০ থেকে ১ লাখ টাকার মধ্যে বিক্রি করবেন বলে জানান এই ব্যাপারী। তিনি বলেন, গত  এক বছর ধরে গরুগুলোর যত্ন করছি। ৯০ হাজার টাকা করে বিক্রি করবো ভাবছি। কিন্তু সবাই দামাদামি করে যাচ্ছে। কিনছে না। আমিও এখনও আশায় আছি। দুইটা দিন তো আছে। নীলফামারী থেকে সুজন এসেছেন ৪টি গরু নিয়ে। বড় আকৃতির এই গরুগুলো দেড় লাখ টাকা মূল্য হাঁকাচ্ছেন তিনি।  সুজন বলেন, একেকটা গরু পেছনে আমার ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা খরচ গেছে।  দেড় লাখ টাকা চাইছি তো বেশি না। সবাই বলছে দাম বেশি। ব্যাপারীরা দাম ছাড়ছেন না বলে ক্রেতারাও তাই দিয়ে আসছেন এমন নয়। যাদের বাসা ভাটারা কিংবা বাড্ডা এলাকায় তারা আপাতত দেখার মাঝেই আছেন। ঈদের আরো দুদিন সময় থাকায় এখনই বেশি দাম দিয়ে কিনতে নারাজ ক্রেতারা। ফয়সাল হাসান নামের এক ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন, এই কয়দিন তো হাটে আসার সুযোগ পাইনি। শুক্রবার টার্গেট ছিল। তাই এলাম। কিন্তু ব্যাপারীরা দাম ছাড়ছেন না। কিনবো কীভাবে! অবশ্য এখনই  বেশি দাম দিয়ে হুট করে  একটা কিনে বোকামি করতে চাই না। দেখি দাম কমলে হয়তো কাল কেনা যাবে। উত্তর বাড্ডার ব্যবসায়ী হাসানুজ্জামান বলেন, অন্য বছরের চেয়েও এবার দাম অনেক। গরু কিনতে আসলাম আজই। গত দুদিন বাসা থেকে তো বের  হতে পারলাম না। কিন্তু ব্যাপারীরা যে গরু ৯০ হাজার টাকা সেটা দেড় লাখের বেশি চেয়ে বসে আছে। কমাতে বললে ৫ হাজার কমানোর কথা বলে চুপ করে থাকে।

এদিকে একই হাটের আরো কয়েকজন ব্যাপারীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায় প্রত্যাশা অনুযায়ী ক্রেতা পাচ্ছে না না তারা। টাঙ্গাইল থেকে দুটি গরু নিয়ে হাটে এসেছেন আবু তাহের। তিনি বলেন, তিন দিন হলো হাটে এসেছি। কিন্তু ক্রেতা পাচ্ছি না। গরু দুটির মধ্যে একটি ১ লাখ ও অন্যটি ৯০ হাজার টাকা পেলেই বিক্রি করবেন বলে জানান তিনি।  ফরিদপুর থেকে ১৬টি গরু নিয়ে এসেছেন সবুর মিয়া। তিনি বলেন, চার দিন আগে এসেছি। এখন পর্যন্ত মাত্র তিনটি গরু বিক্রি করেছি। নাটোর থেকে আসা মাহিদুল ইসলাম জানান, তিনি তার এলাকা থেকে ৩০টি গরু কিনে এনেছেন বিক্রি করার জন্য। একটি গরুও বিক্রি করতে পারেননি। তবে আশা করছেন, এই দুদিনে গরুগুলো বিক্রি করতে পারবেন।

এদিকে শুক্রবার দুুপুরের পর রাজধানীর আরেক পশুর হাট আফতাবনগরেও দেখা যায় ক্রেতাদের ভিড়। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ব্যাপারীরা সারিবদ্ধভাবে গরু ছাগল দাঁড় করিয়ে রেখেছেন। ক্রেতাদেরও ভিড় দেখা গেছে। তবে দরকষাকষি পর্যন্তই সীমাবদ্ধ। এই হাটে কয়েকজনকে অবশ্য গরু নিয়ে স্বস্তিতে বাড়ি ফিরতে দেখা গেছে। হাসান নামের একজন জানান, অনেক দরকষাকষির পর গরু কিনতে পেরেছেন। দাম ছাড়ছিল না। শেষ পর্যন্ত বড় আকৃতির লাল রঙের একটি গরু ১ লাখ ৬২ হাজার টাকায় কেনা হলো তার। হাসান বলেন, এত বড় হাট। এত গরু এসেছে। কিন্তু বেপারীরা নিজের সিন্ধান্ত নিয়ে বসে থাকেন। এক লাখ আশি হাজার বলেছে সেখানেই শেষ। এর নিচে নামবে না।

এভাবে চার ঘন্টা ঘুরে একটা গরু কিনেছি। সৌরভ তার বাবাকে নিয়ে হাটে এসেছেন। আফতাব নগরেই বাসা। তিনি জানান, গরুর দাম অনেক। তবে বাসার এলাকায় যেহেতু হাট আছে। চিন্তা নেই বাকি দুদিনেও কেনা যাবে। সৌরভ আরো জানান, দুই ঘন্টায় পঁচিশটির মতো গরু দেখেছেন। কিন্তু কোনোটির দাম তার বাজেটের সঙ্গে মেলে না। এই হাটে ঝিনাইদহ থেকে ৭টি গরু নিয়ে এসেছেন আরিফ নামের এক বেপারী। তিনি বলেন,  গত বছরও লস গেছে। যে টার্গেট নিয়ে আসি সেটা হয় না। গরু বেচা হয় না। আশি হাজার টাকা খরচ করে যদি ২০ হাজার টাকা লাভ না পাই তাইলে হবে কিভাবে? এবারও মনে হয় লস নিয়া বাড়ি যাবো। অবস্থা খুব খারাপ। রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনের পশুর হাটের চিত্র গত দুইদিনের চেয়ে গতকাল বেশ বদলে গেছে। সরজমিন, গাবতলী, কমলাপুর স্টেডিয়াম সংলগ্ন হাটগুলোতে ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে।

প্রসঙ্গত, এবার ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের আওতায় ২৩টি অস্থায়ী ও একটি স্থায়ী পশুরহাট বসেছে। এই হাটগুলোর মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ১০টি এবং দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১৪টি হাট রয়েছে। রাজধানীর উত্তর সিটি করপোরেশনের যেসব স্থানে পশুর হাট বসেছে সেগুলো হলো- উত্তরা ১৫ নম্বর সেক্টরের হাট, খিলক্ষেত বনরূপা হাট, খিলক্ষেত তিনশ ফুট সড়ক সংলগ্ন উত্তর পাশে, ভাটারা (সাঈদনগর) পশুর হাট, ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট খেলার মাঠ, মোহাম্মদপুর বুদ্ধিজীবী সড়ক সংলগ্ন (বছিলা) পুলিশ লাইনসের খালি জায়গা, মিরপুর সেকশন-৬ (ইস্টার্ন হাউজিং) খালি জায়গা, মিরপুর ডিওএইচএসের উত্তর পাশের সেতু প্রপার্টি ও উত্তর খান মৈনারটেক শহিদনগর হাউজিংয়ের খালি জায়গা। অপরদিকে, দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের যেসব স্থানে কোরবানির পশুর হাট বসেছে সেগুলো হলো- আমুলিয়া মডেল টাউনের আশপাশের খালি যায়গা, উত্তর শাহজাহানপুর খিলগাঁও রেলগেট বাজারের মৈত্রী সংঘের মাঠ সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, ঝিগাতলা-হাজারীবাগ মাঠ সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, লালবাগ রহমতগঞ্জ খেলার মাঠ হাট, কামরাঙ্গীরচর ইসলাম চেয়ারম্যান বাড়ি মোড়, পোস্তগোলা শ্মশানঘাট হাট, শ্যামপুর বালুর মাঠসহ আশপাশের খালি জায়গা, মেরাদিয়া বাজার সংলগ্ন আশপাশ এলাকার খালি জায়গা, ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের সামসাবাদ মাঠ সংলগ্ন আশপাশ এলাকার খালি জায়গা, কমলাপুর স্টেডিয়াম সংলগ্ন বিশ্বরোডের আশপাশের খালি জায়গা, শনির আখড়া ও দনিয়া মাঠ সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, ধূপখোলা ইস্ট অ্যান্ড খেলার মাঠ, ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউয়ারটেক মাঠ সংলগ্ন আশপাশ এলাকার খালি জায়গা ও আফতাবনগর ইস্টার্ন হাউজিং মেরাদিয়া বাজার।

এবারের হাটগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থাও বেশ জোরদার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ। হাটে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশের একটি ক্যাম্পও রাখা হয়েছে। সে সঙ্গে মাইকিংয়ের মাধ্যমে হাটে কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতির শিকার হলে তা জানাতে অনুরোধ করছেন পুলিশ সদস্যরা।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status