দেশ বিদেশ

পশুর হাটে ডেঙ্গু আতঙ্ক

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম থেকে

১০ আগস্ট ২০১৯, শনিবার, ৮:২০ পূর্বাহ্ন

কোরবানির ঈদের বাকি আর মাত্র দু’দিন। কিন্তু ক্রেতার দেখা নেই। গতকাল কিছু ক্রেতা দেখা গেলেও তাদের মাঝে ছিল ভয়, আতঙ্ক। যারা গায়ে মাছি বসলেও উঠছেন লাফ দিয়ে। গরু বিক্রেতাদের কেউ না কেউ মশা নয়, এটা মাছি বলে এক গাল হাসি দিয়ে ভয়টা কমানোর চেষ্টা করছেন।
গতকাল দুপুর ২টা থেকে ৪টা পর্যন্ত সরজমিন গিয়ে এমন দৃশ্য চোখে পড়ে চট্টগ্রামের সর্ববৃহৎ পশুর হাট সাগরিকা বাজার ও বিবির হাটে।
নগরীর চান্দগাঁও থানার ফরিদের পাড়া এলাকা থেকে বিবির হাটে গরু কিনতে আসা মৌলভী নজরুল ইসলাম (৬৫) বলেন, ডেঙ্গুতে মানুষ মরছে। দেশে নাকি এর কোনো চিকিৎসা নেই। তাই মশার কামড়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মরতে চাই না।
তিনি বলেন, এডিস মশার কামড়ে ডেঙ্গু হচ্ছে। এ মশা নাকি দিনে কামড়ায়। জমানো পানি আর ময়লা-আবর্জনার ভাগাড় নাকি এ মশার বাসস্থান ও জন্মস্থান। সে হিসেবে গরুর বাজার নিশ্চয় এডিস মশার কারখানা। গরু কিনতে এসে এ মশার কামড়ে মরতে চাই না।
নগরীর মোহাম্মদপুর সুন্নিয়া মাদ্রাসা এলাকা থেকে আসা সোলায়মান শাহ (৫২) বলেন, ভাই বিবিরহাট বাজারটা ঘুরে দেখেন। যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনার স্তূপ। শত শত গর্তে পানি জমে আছে। যার উপর দাঁড়িয়ে কোরবানির পশু বেচাকেনা চলছে।
তিনি বলেন, পুরো বাজারে মশা-মাছি ভ্যান ভ্যান করছে। গরু-ছাগল ও বিক্রেতারা মশা-মাছির কামড় খাচ্ছে প্রতিনিয়ত। এরমধ্যে ডেঙ্গু (এডিস) মশা অবশ্যই আছে। তাই ডেঙ্গুর ভয়ে ময়লা-আবর্জনা ও পানি জমে থাকা এলাকায় গরু দেখতে যাচ্ছি না। ক্রেতারা জানান, প্রতিবছর কোরবানির পশু কিনতে আগে ভাগে পশুর হাটে নামলেও এবার ডেঙ্গুর ভয়ে নামছে না কেউ। কোরবানির দু’দিন আগে গতকাল কোরবানির পশু দেখতে আসলাম। সুবিধে মতো না হলেও গরু কিনে নিয়ে যাব। হাটে দু’বার আসার ইচ্ছা নেই। কারণ টাকার চেয়ে জীবনের মূল্য অনেক বেশি।
একই কথা বলেছেন নগরীর দ্বিতীয় বৃহত্তম সাগরিকা পশুর হাটের ক্রেতারা। নগরীর ষোলশহর দুই নম্বর গেট আবাসিক এলাকার বাসিন্দা আবুল কাসেম বলেন, ডেঙ্গুর ভয়ে সাধারণত বাড়ি থেকে বের হচ্ছি না। সেখানে গরু কিনতে এসে মশার কামড় খেতে হচ্ছে। এতে ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে আছি। তিনি বলেন, সাগরিকা গরুর বাজারের যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনার স্তূপ। যেখান থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। সেই সঙ্গে উড়ছে মশা-মাছি। ছোট-বড় গর্তে পানিও জমে আছে। যেগুলোর কারণে সাগরিকা গরুর বাজার ডেঙ্গু মশার কারখানা হতে পারে। সে ভয়ে বেশি দাম হলেও ২ লাখ ৭০ হাজার টাকায় একটি দেড় লাখ টাকা করে দুটি গরু কিনে ফেলেছি। শুধু ক্রেতারা নয় এ হাটে গরু বিক্রেতারাও ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে আছেন। কুষ্টিয়া মার্কেট হিসেবে পরিচিত কুষ্টিয়া থেকে আসা গরুর ব্যাপারীদের অধিকাংশই এখন জ্বরে ভুগছেন বলে জানান তানভির হোসেন নামে এক বিক্রেতা। তিনি বলেন, কুষ্টিয়া থেকে আসা গরুর ব্যাপারীদের কেউ কেউ গরু নিয়ে ৩-৪ দিন ধরে সাগরিকা বাজারে অবস্থান করছেন। এ সময়ে মশার কামড়ে তাদের সবাই কাহিল হয়ে পড়েছেন। প্রায় ১৭-১৮ জন ব্যাপারী জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন। গরুর জন্য তাদের কেউ চিকিৎসাও নিতে পারছেন না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাগরিকা পশুর হাটের ইজারাদার অলিউল্লাহ বলেন, ডেঙ্গুর ভয়ে ক্রেতারা পশু কিনতে আসছে না এটা ঠিক। তবে বাজার বসার আগে আমরা পুরো পশুর হাট পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করেছি। তবে পশুর হাটাহাটি ও মলমূত্র ত্যাগে ময়লা-আবর্জনা তো একটু হবেই। এক্ষেত্রেও স্বেচ্ছাসেবকরা সঙ্গে সঙ্গে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করছে। আর পশুরহাটে মশা-মাছি তো ভ্যান ভ্যান করবেই। এতেই ক্রেতাদের মাঝে ডেঙ্গু ভয় বিরাজ করছে।
তিনি বলেন, কোরবানির ঈদের আর মাত্র দু’দিন বাকি। গতকাল থেকে হাটে পশু বিক্রি শুরু হলেও ক্রেতা তেমন নেই। কিন্তু বাজারে পশু অনেক। হাটে ডেঙ্গুর কোনো ভয়ও নেই। কারণ পশুরহাটে নিয়মিত ওষুধ চিটাচ্ছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। আমি বলব, ক্রেতারা নির্ভয়ে কোরবানির পশু কিনতে হাটে আসতে পারবেন। একই কথা বলেছেন বিবির হাটের ইজারাদার জামশেদুল খানও।
চট্টগ্রামের ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন জিএম তৈয়ব আলী এ প্রসঙ্গে বলেন, পশুর হাটে ডেঙ্গু আক্রান্তের ভয় থাকতেই পারে। আমরাও আশঙ্কা করছি পশুর হাটের কারণে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ঈদ পর্যন্ত বাড়তে পারে। তবে ডেঙ্গু প্রতিরোধে চট্টগ্রামের সবকটি পশুর হাটে ওষুধ চিঠিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। এতে চট্টগ্রামে ডেঙ্গুর প্রকোপ তেমন উদ্বেগজনক নয়।
তিনি বলেন, চট্টগ্রামের পশুর হাটগুলোর ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার তাগিদ আগে থেকেই দেয়া আছে। এডিস মশার জন্মস্থান ধ্বংস করার বিষয়ে ইজারাদারদের সতর্ক করা হয়েছে। এরপরও পশু বেচাকেনায় ক্রেতা-বিক্রেতাদের সতর্ক থাকতে হবে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status