দেশ বিদেশ

দোয়ারাবাজারে সন্তানের পিতৃ পরিচয় নিয়ে তুলকালাম, ডিএনএ টেস্টের নির্দেশ আদালতের

দোয়ারাবাজার (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি

৯ আগস্ট ২০১৯, শুক্রবার, ১০:১২ পূর্বাহ্ন

সন্তান প্রসবের ৫ বছর পর পিতৃপরিচয় নিয়ে তুলকালাম কাণ্ড ঘটিয়েছেন সন্তানের জননী। আর এ ঘটনায় পিতৃ পরিচয় নিয়ে ধূম্রজালের সৃষ্টি হলে বিষয়টি শেষ পর্যন্ত আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। আদালত স্থানীয় পুলিশকে ডিএনএ টেস্টের নির্দেশ দিয়েছেন। ঘটনা সূত্রে জানা যায়, গ্রামের সহজ সরল প্রকৃতির এক ধরনের বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী মেয়ে রিপা বেগম। সে দোয়ারাবাজার উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের পশ্চিম টিলাগাঁও গ্রামের ইদ্রিস আলীর কন্যা। ৫ বছর পূর্বে অপ্রাপ্ত বয়স্ক ওই বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী এক পুরুষের কাম লালসার শিকার হয়ে গর্ভবতী হয়ে পড়ে। বিয়ে ছাড়াই তার গর্ভে সন্তান চলে আসায় এলাকাজুড়ে তখন তোলপাড় সৃষ্টি হয়। কিন্তু প্রকৃত পক্ষে গর্ভজাত ওই সন্তানের জনককে তা নিয়ে সন্দেহ-সংশয় দেখা দেয়! এ নিয়ে ধূম্রজালের সৃষ্টি হলে ২০১৪ সালের ২০শে সেপ্টেম্বর সামাজিকভাবে বিয়ে দেয়া হয় জাকির নামের এক ছেলের সঙ্গে। বিয়ে দেয়ার পরে সন্তানের পিতৃ পরিচয় নিয়ে বেরিয়ে আসে অন্য কিছু।
প্রতিবন্ধী মেয়ের পরিবার সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালে মেয়েটি গর্ভবতী হয়ে পড়ে। ফলে গ্রাম পঞ্চায়েতের লোকজন মেয়ের পরিবারের কথা অনুযায়ী ওই সময় তার নিকটাত্মীয় একই গ্রামের মিন্টু মিয়ার পুত্র জাকিরের ওপর দায় চাপিয়ে তার সঙ্গেই বিয়ে দেয়া হয়। এলাকাবাসী জানায়, জাকির ও তার পরিবার সমাজে নিরীহ হওয়ায় মোড়লদের চাপে সন্তান সম্ভবা প্রতিবন্ধী মেয়েকে বিয়ে করতে বাধ্য হয়। জোরপূর্বক দায় চাপিয়ে বিয়ে দেয়ায় লজ্জায় এলাকা ছাড়া হয় জাকির। এদিকে ২০১৪ সালের ২০শে সেপ্টেম্বর জাকিরের সঙ্গে বিয়ের কয়েক মাস পর মেয়েটি কন্যা সন্তান প্রসব করে। জন্ম নেয়া শিশুর পিতা জাকির বলেই তখন জন্ম নিবন্ধন করা হয়। কিন্তু তখনো মূল ঘটনা আড়ালেই থেকে যায়। উল্লেখ্য, মেয়ের বাবা ইদ্রিস আলী গ্রামের কিছু সংখ্যক মানুষের কথায় এবং ওই সময়ে মান সম্মানের কথা চিন্তা করে জাকিরের সঙ্গে বিয়ে দেয়ার পর অভ্যন্তরীণ কারণে সংসার করা হয়ে ওঠেনি মেয়েটি। বিয়ের পর জাকির বাড়ী ঘর ছেড়ে পালিয়ে যায়। এ নিয়ে দুই সংসারেই দীর্ঘ জুটঝামেলা লেগে থাকে। জাকিরও তখন সাফ জনিয়ে দেয় ওই সন্তান তার নয়। কিংবা বিয়ের পূর্বে মেয়েটির সঙ্গে কোনো প্রকার যৌন সম্পর্ক ছিল না। গ্রামবাসী চাপ সৃষ্টি করে একতরফা সিদ্ধান্তে তার সঙ্গে মেয়েটির বিয়ে দেয়া হয়েছে। কিন্তু কখনো তার কথা কেউ শোনেনি বলে সে জানায়। এ নিয়ে পারিবারিক ভাবে দীর্ঘ দিন ধরে অশান্তি ও ঝামেলা চলছিল। এ অবস্থায় বিয়ের ৫ বছর পর সন্তানের পিতৃ পরিচয় নিয়ে মুখ খুলে সন্তানের জননী প্রতিবন্ধী রিপা বেগম। স্থানীয় সালিশ বিচারে রিপা বেগম অভিযোগ করেন, ওই সন্তানের পিতা জাকির নয় শিফা বেগমের জৈবিক পিতা একই গ্রামের হাবীবুর রহমানের পুত্র মাহবুব। মেয়ের পরিবার গ্রামের নিরীহ মানুষ হওয়ায় মূল ঘটনাকারী ও তার আত্মীয়স্বজনের প্ররোচনায় এবং স্থানীয় মোড়লদের চাপে তারা মূল বিষয় আড়াল করতে তাকে বাধ্য করা হয়েছিল বলেও অভিযোগ তুলেন। পরে এর দায়ভার চাপিয়ে জাকিরের সঙ্গে জোরপূর্বক বিয়ে দেয়ার অভিযোগ তুলেন ওই প্রতিবন্ধী। বিয়ের প্রায় ৫ বছর পরে খোদ সন্তানের জননী এমন বিষয় প্রকাশ করলে এ নিয়ে আরো জটিলতার সৃষ্টি হয়। স্থানীয়ভাবে একাধিকবার সালিশ বিচারও অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু কোনো ভাবে বিষয়টি সমাধান সম্ভব হয়নি।
অপর দিকে মাহবুব ও তার পরিবার সন্তান প্রসবের ৫ বছর পর সন্তানের পিতা দাবি অযৌক্তিক ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে তা মেনে নিতে রাজি নয়। একপর্যায়ে স্থানীয় সালিশ এমন বিষয়ে সমাধান দিতে ব্যর্থ হলে অবশেষে প্রতিবন্ধী মেয়ের বাবা ইদ্রিস আলী আদালতের দ্বারস্থ হন।
পশ্চিম ঠিরাগাঁও গ্রামের হাবীবুর রহমানের পুত্র মাহবুব কর্তৃক তার মেয়ে ধর্ষিত হয়ে বিয়ের পূর্বেই গর্ভবতী হন, তার মেয়ে এমন অভিযোগ এনে তিনি নিজেই বাদী হয়ে সুনামগঞ্জ জজকোর্টে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মাহবুবের বিরুদ্ধে মামলা করে (মামলা নং ২২৮/২০১৯)।
মামলায় তিনি উল্লেখ করেন, ২০১৪ সালে তাঁর প্রতিবন্ধী অপ্রাপ্ত মেয়ে রিপা বেগমকে সকলের অগোচরে জোরপূর্বক ধর্ষণ করার ফলে সে গর্ভবতী হয়ে পড়লে মাহবুব ও তার পরিবার গ্রামের প্রভাবশালী হওয়ায় ভয়ভীতি দেখিয়ে স্থানীয় কিছু মোড়লের প্ররোচনায় এর দায়ভার জাকিরের ওপর চাপিয়ে দিয়ে বিয়ে দিতে বাধ্য করেন। পরে সামাজিক ভাবে জাকিরের সঙ্গে বিয়ে দিলেও সংসার হয়নি। আদালতে মামলা দায়েরের পর থেকে মাহবুব ও তার পরিবারের লোকজন মেয়ের পরিবারকে নানা ভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ সামাজিক ভাবে এক ঘরে করে রাখার হুমকিও দিচ্ছেন বলে অভিযোগ তুলেন। অতি সম্প্রতি এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে মারধরের ঘটনাও ঘটে। এদিকে সন্তান প্রসবের ৫ বছর পর ওই নারী মুখ খুললে ফের পিতৃ পরিচয় নিয়ে রীতিমত টানাটানি শুরু হয়। মেয়ের বাবা এ নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হওয়ায় এলাকায় টানটান উত্তেজনা দেখা দেয়। এ ঘটনার পর থেকে মামলায় অভিযুক্ত মাহবুব এলাকা ছাড়া হয়ে যায়। মামলা দায়েরের পর আদালত রিপা বেগমের সন্তানসহ জাকির ও মাহবুব উভয়ের ডিএনএ টেস্ট পূর্বক স্থানীয় পুলিশ তদন্ত প্রতিবেদন দেয়ার নির্দেশনা দেন। এরই প্রেক্ষিতে পুলিশ উভয়ের ডিএনএ টেস্ট প্রক্রিয়ার জন্য প্রস্তুতি নিলে মাহবুব এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়।
দোয়ারাবাজার থানার ওসি আবুল হাসেম জানান, সন্তানের পিতৃ পরিচয় নিয়ে ধূম্রজালের সৃষ্টি হয়ায় বিজ্ঞ আদালত পুলিশ তদন্ত এবং উভয়ের ডিএনএ টেস্ট করার নির্দেশ দিয়েছেন। বিষয়টি তদন্ত পূর্বক ডিএনএ টেস্ট করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status