শেষের পাতা

মসলার বাজার গরম

এলাচের কেজি ৩০০০ টাকা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

৯ আগস্ট ২০১৯, শুক্রবার, ১০:০৯ পূর্বাহ্ন

কোরবানির ঈদের আর মাত্র দুই দিন বাকি। আর তাই মসলার চাহিদা এখন তুঙ্গে। আর এই চাহিদার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সব ধরনের মসলার দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এর মধ্যে কেজিতে ১ হাজার টাকা বেড়ে এলাচ বিক্রি হচ্ছে ৩০০০ টাকায়। এছাড়া জিরা, দারুচিনি, গোলমরিচের দামও বেড়েছে। পাশাপাশি আদা ও রসুনের দামও বেড়েছে। কাওরান বাজারসহ রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এবং টিসিবি, ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।

ক্রেতারা জানান, প্রতি বছরই কোরবানির ঈদে মসলার চাহিদা বেশি থাকে। এ সুযোগ কাজে লাগান কিছু অসৎ ব্যবসায়ী। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে দাম এতটা বেড়ে যাওয়া অস্বাভাবিক। তবে ক্রেতাদের অভিযোগ অস্বীকার করে ব্যবসায়ীরা বলছেন, গুদাম থেকে পণ্য বেশি দামে কিনতে হচ্ছে বলে দাম বেড়েছে।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সবচেয়ে বেশি চাহিদা এলাচ, দারুচিনি ও জিরার। এর মধ্যে বেশি বেড়েছে এলাচের দাম। মাসখানেক আগে যে এলাচ প্রতি কেজি বিক্রি হতো ১,৮০০ থেকে ২,২০০ টাকা, একই এলাচ বিক্রি হচ্ছে ২,৬০০ থেকে ৩০০০ টাকায়। আর এলাকার খুচরা বিক্রেতারা নিম্নমানের এলাচ বিক্রি করছেন ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার ২০০ টাকায়।

রাষ্ট্রয়াত্ত প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) দৈনিক বাজার দরেও একই চিত্র দেখা গেছে। টিসিবির হিসাবে বর্তমানে এক কেজি এলাচি বিক্রি হচ্ছে ২৫০০ থেকে ৩০০০ টাকা।

এছাড়া বাজারে দারুচিনি কেজিতে ৫০ টাকা বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ৩৮০ থেকে ৪৫০ টাকায়। মানভেদে জিরা কেজিতে ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেড়েছে। বর্তমানে জিরা বিক্রি হচ্ছে ৩৮০ থেকে ৫০০ টাকা কেজি। কিসমিশ ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গোলমরিচের দাম কেজিতে বেড়েছে ২০০ থেকে ৪০০ টাকা। বর্তমানে কালো গোলমরিচ বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ৯০০ টাকা। আর সাদা গোলমরিচ বিক্রি হচ্ছে ১,২০০ থেকে ১,৪০০ টাকা। মানভেদে প্রতি কেজি জয়ফল ১,০০০ থেকে ১,২০০ টাকা, জয়ত্রী ২,০০০, লবঙ্গ ৮৫০, কাঠবাদাম ৮৫০, তেজপাতা ১৫০ টাকা থেকে ১৮০, পেস্তাবাদাম ২০০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। লবঙ্গের কেজি পাইকারি বাজারে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা, আলু বোখারা পাইকারি বাজারে ৪০০ টাকা, কাজু বাদাম ৮৫০ থেকে ১ হাজার টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। প্রতিটি পণ্যের দাম ৫০, ১০০ ও ২০০ টাকা কেজিপ্রতি বেড়েছে।

এদিকে বাজারে থাইল্যান্ড ও মিয়ানমারের আদা ১৪০ টাকা থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দুই সপ্তাহ আগেও আদা বিক্রি হয়েছে ১০০ থেকে ১২০ টাকায়। দেশি আদা বিক্রি হচ্ছে ২৮০ টাকা করে। এটিও দুই সপ্তাহ আগে ২১০ থেকে ২২০ টাকা কেজি প্রতি বিক্রি হয়েছে। রসুন দেশি ১২০ টাকা থেকে ১৩০ টাকা, ভারতীয় রসুন ১৬০ টাকা থেকে ১৭০ কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে। দুই সপ্তাহ আগেও এসব ১০০ থেকে ১১০ এবং ভারতীয় রসুন ১২০ থেকে ১৪০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।

মসলা বিক্রতা সাইদুল জানান, কয়েক সপ্তাহে ধরে মসলার দাম বাড়ছে। ঈদের আগে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় পাইকাররা দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। কেনা বেশি হওয়ায় দাম বাড়তি রাখতে হচ্ছে।

এদিকে পাইকারি বাজারের প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারে। রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মানভেদে প্রতি কেজি জিরা ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, দারুচিনি ৩০০ থেকে ৩৫০, তেজপাতা ১৫০ থেকে ১৮০, সাদা গোলমরিচ ১,০০০, কালো গোলমরিচ ৮০০ থেকে ৯০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

মসলার দাম বাড়ার কারণ হিসেবে খুচরা বিক্রেতারা জানান, ঈদুল আজহা তথা কোরবানির ঈদের কারণে পণ্যের দাম বাড়ছে। পাইকারি বাজারে দাম বাড়ানোর কারণে খুচরা বাজারে দাম বাড়াতে হচ্ছে। গত মাসে এলাচি বিক্রি করেছি ২,২০০ টাকা। এখন পাইকারি দাম ২,৩০০ থেকে ২,৪০০ টাকার ওপর। আমরা বিক্রি করব কত টাকা? দোকান ভাড়া মাল আনায় খরচ রয়েছে।
পুরান ঢাকার পাইকারি মসলা বাজারের সিজান অ্যান্ড ব্রাদার্সের বিক্রেতা জানান, মাসখানেক আগে কিছুটা দাম বেড়েছিল। তবে গত এক দুই সপ্তাহে মসলার দাম বাড়েনি, আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া এবার মাসলার সরবরাহ পর্যাপ্ত রয়েছে। দাম বাড়ার কোনো কারণই নেই।

এদিকে দাম নিয়ন্ত্রণে মসলার বাজারে অভিযান চালাচ্ছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। এ বিষয়ে অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আব্দুল জব্বার মণ্ডল বলেন, কোরবানির ঈদে মসলার চাহিদা বেশি থাকে। এ সুযোগে ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে দেন। দাম নিয়ন্ত্রণে রাজধানীর পুরান ঢাকার বিভিন্ন পাইকারি মসলার বাজারে অভিযান চালানো হচ্ছে। অযৌক্তিক দাম না বাড়াতে সতর্ক করা হয়েছে। এ সময় ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এবার পর্যপ্ত মজুত রয়েছে। ঈদের আগে আর দাম বাড়বে না বলে আশ্বস্ত করেন তারা।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status