শেষের পাতা

তদন্তে দুদক

কাস্টমস কমিশনার বেলালের অঢেল সম্পদ

মারুফ কিবরিয়া

৯ আগস্ট ২০১৯, শুক্রবার, ১০:০৬ পূর্বাহ্ন

সরকারের রাজস্ব ফাঁকির মাধ্যমে শত কোটি টাকার সম্পদের মালিক তিনি। একাধারে গড়েছেন বাড়ি গাড়ি। দেশের বাইরেও রয়েছে বাড়ি। আর এর সবই করেছেন বেনাপোল কাস্টমস হাউজের কমিশনার বেলাল হোসেন চৌধুরী। দুর্নীতি দমন কমিশনেও (দুদক) পড়েছে একাধিক অভিযোগ। এসব অভিযোগ আমলে নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করেছে সংস্থাটি। সহকারী পরিচালক নেয়ামুল হাসান গাজীকে বেলাল হোসেন চৌধুরীর বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। দুদক সূত্র জানায়, ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে পণ্য খালাস করে দীর্ঘদিন থেকেই অবৈধ অর্থের মালিক হচ্ছেন বেলাল হোসেন চৌধুরী। বেনাপোল কাস্টমস হাউজে কর্মরত থেকে দিনের পর দিন বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন তিনি। তার বিরুদ্ধে কেউ অভিযোগ দেয়ার সাহস পান না। কেউ অভিযোগ করলে তাদের নানাভাবে হুমকি দেন এই কাস্টমস কমিশনার।

সূত্র জানায়, কাস্টমসে চাকরির পাাশাপাশি নিজেরও একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে বেলাল হোসেন চৌধুরীর। চলতি বছরেই নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নামে ভারত থেকে আমদানি করা সাত ট্রাক মালামাল মাত্র ১১ লাখ টাকার ডিউটি আদায় করে ছেড়ে দেন। তবে শুল্ক গোয়েন্দাদের নজরদারি এড়াতে পারেনি। শুল্ক গোয়েন্দা কর্মকর্তা কাউছার আলম পাটোয়ারী গোপন সংবাদের ভিত্তিতে  ট্রাকগুলো আটক করেন। এখানেই থেমে যাননি বেলাল চৌধুরী। মালামালগুলো ছাড়িয়ে নেয়ার জন্য একাধিকবার তদবিরও করেন তিনি। যে ট্রাকগুলো নিজের তত্ত্বাবধায়নে ছেড়েছিলেন সেগুলোর ডিউটি আশি লাখ টাকা। এভাবে একের পর এক রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে শত শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন বেলাল হোসেন চৌধুরী।

দুদকের অনুসন্ধান সূত্র বলছে, নিজের নামে তেমন কোনো ব্যাংক ব্যালেন্স করেননি এই কাস্টমস কমিশনার। তার ভাই বোন ও শ্যালকের নামে বিভিন্ন ব্যাংক হিসাব রয়েছে। এসব ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে বেলাল হোসেন চৌধুরীর অর্জিত অবৈধ সব অর্থ লেনদেন হয়। ঘুষ-দুর্নীতি ও রাজস্ব ফাঁকির মাধ্যমে পাওয়া টাকাগুলো তাদের ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে পাচার করা হতো। বেলাল হোসেন চৌধুরীর দুর্নীতির খবর বেনাপোল কাস্টমস হাউজের সবার মুখে মুখে। তিনি বেনাপোল বন্দরে যোগ দেয়ার পর থেকেই কাস্টমসকে দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করেন। অবৈধভাবে পণ্য লোড-আনলোডে সহযোগিতা করেন। আর এসব তিনি করেন মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে। কমিশনার বেলাল হোসেন চৌধুরী ঘুষ ছাড়া কোনো ফাইলে হাত দেন না বলে একাধিক অভিযোগ দীর্ঘদিন থেকেই রয়েছে। সূত্র জানায়, বেলাল হোসেন চৌধুরী স্ত্রী সন্তানদের নামে ঢাকায় একাধিক বাড়ি, ফ্ল্যাট ও প্লট কিনেছেন। যার মধ্যে বারিধারার এফ ব্লকের ১২ নং রোডের ১১৯ নং প্লটে একটি বাড়ি রয়েছে তার।  ৫ কাঠা জমির উপর  নির্মিত ওই বাড়িটির আনুমানিক মূল্য ৫ কোটি টাকা। এছাড়া নিউ ইস্কাটনের বিয়াম ভবনের পেছনে একটি ৪ হাজার বর্গফুটের ফ্ল্যাট কিনেছেন বেলাল হোসেন চৌধুরী। স্ত্রীর নামে কেনা ওই ফ্ল্যাটটির আনুমানিক মূল্য ৪ কোটি টাকা। শুধু তাই নয়, কাস্টমস হাউজের এই কমিশনারের রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ডি ব্লকে পাঁচ কাঠা ও পূর্বাচলে ১০ কাঠা প্লট রয়েছে। এছাড়া বসুন্ধরা সিটি শপিং মল ও যমুনা ফিউচার পার্কে দুটি করে দোকানের মালিক বেলাল হোসেন চৌধুরী। রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে অর্জিত অবৈধ অর্থ তিনি কাজে লাগিয়েছেন নিজের গ্রামের বাড়িতেও। বেলাল হোসেন চৌধুরীর গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীতে। সেখানে সোনাইমুড়িতে ৫০ বিঘা জমি কিনেছেন। এছাড়া ভাইয়ের নামে গাজীপুরে রয়েছে একটি পোশাক কারখানাও। যার নাম সাফিনা গার্মেন্টস। ঢাকার অদূরে আশুলিয়াতেও ১০ বিঘা জমির মালিক বেলাল হোসেন চৌধুরী। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে দেশের বাইরেও সম্পত্তির মালিক হয়েছেন তিনি। দুদকের অনুসন্ধান সূত্র বলছে, কাস্টমস হাউজের এই কমিশনার কানাডায় বিপুল অংকের অর্থ পাচার করেছেন। আর সে অর্থ দিয়ে সেখানে একটি বিলাসবহুল বাড়ি কিনেছেন। শুধু তাই নয় ছেলে মেয়েদেরও কানাডাতেই পড়ালেখা করাচ্ছেন বেলাল হোসেন চৌধুরী।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status