দেশ বিদেশ

নারায়ণগঞ্জে শিশু ধর্ষণের অভিযোগে এবার ৫ সহযোগীসহ মসজিদের ইমাম গ্রেপ্তার

স্টাফ রিপোর্টার, নারায়ণগঞ্জ থেকে

৮ আগস্ট ২০১৯, বৃহস্পতিবার, ৯:৪৭ পূর্বাহ্ন

নারায়ণগঞ্জে এবার ঝাড়ফুঁকের কথা বলে মসজিদের ভেতর নিজের কক্ষে নিয়ে শিশুকন্যাকে ধর্ষণ করেছে এক লম্পট ইমাম। শুধু তাই নয়, ধর্ষণের ঘটনা কাউকে বললে প্রাণনাশের হুমকি দেয়া হয় ধর্ষিতা শিশুটিকে। কিন্তু শিশুটি বাড়িতে গিয়ে ঘটনা প্রকাশ করে দেয়। বিষয়টি জানানো হয় মসজিদ কমিটিকে। কিন্তু বিচার না করে উল্টো মসজিদ কমিটি ইমামকে রক্ষায় মাঠে নামে। এবং ধর্ষিতার পরিবারকে শাসাতে থাকে। এখানেই শেষ নয়, শিশুটির অবস্থা খারাপের দিকে যেতে থাকলে দ্রুত তাকে হাসপাতালে ভর্তি করে তার পরিবার। কিন্তু হাসপাতাল থেকে শিশুটিকে অপহরণের চেষ্টা চালায় ইমামের সহযোগীরা। নিরুপায় হয়ে ধর্ষিতার পিতা হাসপাতালের এক নার্সের কাছ থেকে বোরকা নিয়ে সেই বোরকা পরে গোপনে র‌্যাব-১১ এর কার্যালয়ে গিয়ে পুরো ঘটনা জানায়। এরপর গতকাল বুধবার ভোরে ইমাম ফজলুর রহমানকে চাঁদমারি এলাকার বায়তুল হাফেজ জামে মসজিদের তৃতীয় তলা থেকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তার ফজলুর রহমান ওই মসজিদের ইমাম এবং নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া থানার মৃত রিয়াজ উদ্দিনের ছেলে। এ ঘটনায় ফজলুর রহমানের অপর ৫ সহযোগীকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা হলো- রমজান আলী, গিয়াস উদ্দিন, হাবিব এ এলাহী, মোতাহার হোসেন ও শরিফ হোসেন। ধর্ষণের ঘটনাটি ঘটেছে গত ২রা আগস্ট নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার চাঁদমারি এলাকায়। বিষয়টি নিয়ে গতকাল বুধবার দুপুরে র‌্যাব-১১ এর প্রধান কার্যালয় সিদ্ধিরগঞ্জের আদমজীতে সংবাদ সম্মেলন করে র‌্যাব।
র‌্যাব-১১’র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলেপ উদ্দিন বলেন, ধর্ষিতা শিশুটির বাবা একটি সিকিউরিটি কোম্পানিতে কাজ করেন। মা গার্মেন্ট শ্রমিক। ধর্ষিতা শিশুটি ফতুল্লার শিবু মার্কেট এলাকার একটি মাদ্রাসায় দ্বিতীয় শ্রেণিতে লেখাপড়া করে। শিশুটি রাতে ঘুমের মধ্যে প্রায়ই কেঁদে উঠতো। নিম্ন আয়ের পরিবারটি শিশুটির এই সমস্যা সমাধানে বিভিন্ন কবিরাজের কাছে ঝাড়ফুঁক চিকিৎসা করায়। কিন্তু তাতে কোনো কাজ না হওয়ায় তারা জানতে পারে চাঁদমারি বায়তুল হাফেজ জামে মসজিদের ইমাম ফজলুর রহমান ঝাড়ফুঁকের মাধ্যমে এ রোগের চিকিৎসা করেন। তারা ফজলুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি ২-৩ বার মেয়েটিকে ঝাড়ফুঁক করেন। কিন্তু তাতে কোনো কাজ হয়নি। এরপর তিনি ‘বাড়ি বন্ধ’ করতে মেয়েটির বাড়িতে যান। এরপরেও অবস্থার কোনো উন্নতি না হওয়ায় মেয়েটির বাবা ফজলুর রহমানের সঙ্গে গত ৪টা আগস্ট মাগরিবের নামাজের পর যোগাযোগ করলে তিনি পরদিন ৫ই আগস্ট ফজরের নামাজের পর মেয়েটিকে নিয়ে মসজিদে আসতে বলেন। মেয়েটিকে ৫ই আগস্ট ফজরের নামাজের পর মসজিদে নিয়ে গেলে ইমাম ফজলুর রহমান বাবা-মেয়েকে মসজিদের তৃতীয় তলায় ইমামের শয়ন কক্ষে নিয়ে যায়। এরপর মেয়েটির বাবাকে মোম ও আগরবাতি আনতে বাইরে পাঠিয়ে দেয় সে। কিন্তু এত ভোরে কোনো দোকান খোলা না থাকায় মেয়েটির বাবা বাইরে দোকান খোলার জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। এরই মধ্যে ফজলুর রহমান মেয়ের বাবাকে ফোন করে তার জন্য একটি পানও নিয়ে আসতে বলে। আর মসজিদের মুয়াজ্জিনকে নিচের কলাপসিবল গেট তালা লাগাতে বলে। এরপর ফজলুর রহমান শিশু মেয়েটিকে হাত বেঁধে এবং মুখে স্কচটেপ লাগিয়ে ধর্ষণ করে। ধর্ষণ শেষে আলামত নষ্ট করতে নিজেই পানি দিয়ে শিশুটির যৌনাঙ্গ ধুয়ে দেয়। পরে শিশুটির গলায় ছোরা ধরে এ কথা কাউকে না বলতে শাসিয়ে দেয়। এ কথা কাউকে জানালে জবাই করে হত্যারও হুমকি দেয়া হয় মেয়েটিকে। এদিকে ৪০-৪৫ মিনিট পর মেয়েটির বাবা মোম ও আগরবাতি নিয়ে মসজিদে ফিরে গেলে ফজলুর রহমান তড়িঘড়ি শিশুটিকে তার বাবার কাছে বুঝিয়ে দেয়। মেয়েটি বাড়ি ফিরে সব ঘটনা তার বাবা-মাকে খুলে বলে।
এদিকে ঘটনা জানার পর মেয়েটির বাবা ওই দিনই মসজিদ কমিটির কাছে এর বিচার দাবি করলে মসজিদ কমিটির কিছু সংখ্যক লোক ও আশেপাশে থাকা ধর্ষকের কিছু ভক্ত মিলে শিশু ও তার পরিবারটিকে চরমভাবে হেনস্থা করে।
ধর্ষক ফজলুর রহমান তার অনুসারীদের দিয়ে এমন একটি পরিস্থিতির সৃষ্টি করে যেন, ভুক্তভোগী পরিবারটি থানা বা হাসপাতালে যেতে না পারে। এরপর শিশুটির অবস্থা আরো খারাপ হতে থাকে। ফলে, গত ৫ই আগস্ট শিশুটিকে নারায়ণগঞ্জ দেড়শ’ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে গোপনে ভর্তি করে। ধর্ষক ফজলুর রহমান ও তার অনুসারীরা শিশুটিকে হত্যা ও অপহরণ করার উদ্দেশ্যে হাসপাতালেও কয়েক দফায় চেষ্টা চালায়। হাসপাতালের ধর্ষকের অনুসারীরা হাসপাতালের এমন একটি পরিস্থিতি সৃষ্টি করে যে, শিশুটিকে হাসপাতালে লুকিয়ে রেখে শিশুটির বাবা-মাকে দীর্ঘসময় ধরে হাসপাতালের টয়লেট ও বেডের নিচে লুকিয়ে থাকতে হয়েছে। পরদিন ৬ই আগস্ট রাতে এক পর্যায়ে শিশুটির বাবা হাসপাতালের এক নার্স-এর কাছ থেকে একটি বোরকা চেয়ে নিয়ে পরে র‌্যাব-১১’র আদমজীস্থ অফিসে এসে অভিযোগ দেন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status