অনলাইন

জাতিসংঘের অনুসন্ধান রিপোর্ট

রোহিঙ্গাদের গণহারে হত্যায় কোটি ডলার ব্যয় করেছে ৪৫ কোম্পানী

কূটনৈতিক রিপোর্টার

৬ আগস্ট ২০১৯, মঙ্গলবার, ১০:১৭ পূর্বাহ্ন

রোহিঙ্গাদের হত্যা ও বিতাড়নের মাধ্যমে জেনোসাইড সম্পন্ন করতে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীকে অন্তত এক কোটি ২০ লাখ মার্কিন ডলার দিয়েছিল ৪৫টি কোম্পানী ও সংস্থা। ওই কোম্পানীও সংস্থাগুলোই পরে রাখাইন রাজ্য পুনর্গঠনের কাজ পেয়েছে এবং বুলডোজার দিয়ে রোহিঙ্গাদের বাড়িঘরসহ নাম-নিশানা নিশ্চিহ্ন করতে ভূমিকা রেখেছে। মিয়ানমারবিষয়ক জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক সত্যানুসন্ধানী মিশন সোমবার জেনেভায় ১১১ পৃষ্ঠার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করেছে। অবশ্য মিয়ানমার ওই রিপোর্ট প্রত্যাখান করেছে। নেপি’ড পাল্টা বিবৃতি দিয়ে মঙ্গলবার বলেছে, তারা মনে করে ওই রিপোট ভিত্তিহীন, ফলে তারা এটি গ্রহণ করছে না। ওই বিবৃতিতে মিয়ানমার নিজেদের তদন্ত চলমান রয়েছে বলে জানিয়েছে। জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের প্রতিবেদন আগামী মাসে জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের অধিবেশনে উত্থাপন করা হবে। এবারের প্রতিবেদনে প্রথমবারের মতো মিয়ানমার বাহিনীর সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত ব্যবসা-বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ও সংস্থাগুলোকে চিহ্নিত করে বৈশ্বিকভাবে তাদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার আহ্বান জানানো হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গা নিধনযজ্ঞের কথা জেনেও ভারত, ইসরায়েলসহ অন্তত সাতটি দেশ ও ১৪টি বিদেশি ফার্মের অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহের বিষয়টি চিহ্নিত করেছে সত্যানুসন্ধানী মিশন। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, ওই প্রতিষ্ঠান ও দেশগুলোর সহায়তায় মিয়ানমার বাহিনী কোনো ধরনের জবাবদিহি ছাড়াই আন্তর্জাতিক আইনের দৃষ্টিতে গুরুতর অপরাধ ও মানবাধিকার লঙ্ঘন করে চলেছে।

মিয়ানমারবিষয়ক জাতিসংঘের স্বাধীন আন্তর্জাতিক সত্যানুসন্ধানী মিশন বলেছে, নিরাপত্তা পরিষদ ও জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর অবিলম্বে মিয়ানমার সামরিক বাহনী পরিচালিত কম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা উচিত। সাতটি দেশের অন্তত ১৪টি প্রতিষ্ঠান ২০১৬ সাল থেকে মিয়ানমারকে যুদ্ধবিমান, সাঁজোয়া যান, যুদ্ধজাহাজ, ক্ষেপণাস্ত্র ও ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার সরঞ্জামাদি সরবরাহ করেছে বলে উল্লেখ করে জাতিসংঘ নিযুক্ত মিশন তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার আহ্বান জানিয়েছে। মিয়ানমার বাহিনীর হাতে অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম তুলে দেয়া ১৪টি ফার্মের ৫টি চীনের। এ ছাড়া রাশিয়া ও ভারতের দু’টি করে ফার্ম এবং উত্তর কোরিয়া, ফিলিপাইন, ইসরায়েল ও ইউক্রেনের একটি করে ফার্ম মিয়ানমার বাহিনীকে সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ করেছে। জাতিসংঘ ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের নিষেধাজ্ঞা জারির সুপারিশের প্রতিবাদ করেছে মিয়ানমার। তাদের পাল্টা বিবৃতি বলা হয়েছে নিষেধাজ্ঞা কোন সংকটের সমাধান হতে পারে না। জাতিসংঘের স্বাধীন সত্যানুসন্ধানী মিশন তাদের রিপোর্টে এ-ও বলেছে, উপরুল্লিখিত সাতটি দেশ যখন মিয়ানমারকে অস্ত্র ও অন্যান্য সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ করেছে, তখন মিয়ানমার বাহিনী রাখাইন, কাচিন ও শান রাজ্যে বেসামরিক লোকজনের ওপর ধারাবাহিকভাবে ও ব্যাপক মাত্রায় মানবাধিকার লঙ্ঘন ঘটিয়েছে। ২০১৭ সালের ২৫ শে আগস্টের পর সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাকে বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত করে বাংলাদেশে পাঠিয়েছে তারা। রোহিঙ্গা নিধন চেষ্টার বিচারে বিস্তারিত সুপারিশ তুলে ধরে জাতিসংঘ বলেছে, তাদের সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন হলে মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর অর্থনৈতিক ভিত্তি দুর্বল ও সংস্কার প্রক্রিয়ার প্রতিবন্ধকতা দূর হবে। এ ছাড়া এটি কোনো ধরনের নজরদারি ছাড়াই সামরিক অভিযান চালানোর সক্ষমতা, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঝুঁকি কমাবে এবং স্বল্প মেয়াদে জবাবদিহিতায় কাজে আসবে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status