ভারত

কলকাতার ডায়েরি

দিদিকে বলো বনাম দিদিকেই বলছি

পরিতোষ পাল

৪ আগস্ট ২০১৯, রবিবার, ৯:২১ পূর্বাহ্ন

সাম্প্রতিক লোকসভা নির্বাচনের ফলেই স্পষ্ট হয়েছে, তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়য়ের জনপ্রিয়তায় ভাটার টান শুরু হয়েছে। এজন্য যে দলের নেতা ও কর্মীদের সার্বিক ব্যর্থতা দায়ী সেটাও তিনি অনুধাবন করেছেন। দুর্নীতি, স্বজনপোষণ, জনবিচ্ছিন্নতার ধাক্কা লেগেছে দলে। আর তাই দলের সাংগঠনিক শুদ্ধিকরণের দায়িত্ব নিয়েই মমতা দেশের অন্যতম ভোট কৌশলী বলে পরিচিত প্রশান্ত কিশোরের সক্রিয় সহযোগিতা নিচ্ছেন। প্রশান্ত কিশোরই এখন ঠিক করে দিচ্ছেন দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি দিদির নির্দেশ। দিদি নিজেও প্রশান্ত কিশোরের পরামর্শে পাল্টাতে শুরু করেছেন। কিছুদিন আগেই যিনি দলের নেতা ও কর্মীদের এক ঝটকা দিয়ে কাটমানি (ঘুষ) ফেরত দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। এর পরেই দলে জনসংযোগের ফাঁক ভরাট করতে কর্মী ও নেতাদের গ্রামে গিয়ে খাটিয়ায় বসে স্থানীয় মানুষের সঙ্গে সুখ-দুঃখের কথা জানতে বলেছেন। সেই কর্মসূচিকে আরো এগিয়ে নিয়ে গিয়ে মমতা মন্ত্রী ও নেতাদের গ্রামে গিয়ে মানুষজনের সঙ্গে একত্রে খাওয়া-দাওয়া করারও নির্দেশ দিয়েছেন। বলেছেন, এলাকায় রাতও কাটাতে হবে নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের। এরই পাশাপাশি মমতা মানুষের মনের ক্ষোভের আন্দাজ করতে নতুন এক ব্যবস্থার কথা ঘোষণা করেছেন। তার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করে অভিযোগ বা মতামত জানানোর জন্য একটি ফোন নম্বর এবং ওয়েবসাইট চালু করেছেন। নাম দেয়া হয়েছে ‘দিদিকে বলো’। মমতা বলেছেন, যেকোনো সমস্যার কথা জানালে যতটা পারবেন সমাধানের চেষ্টা করবেন। এই ব্যবস্থা চালু হওয়ার একদিনের মধ্যে লক্ষাধিক মানুষ দিদির শরণাপন্ন হয়েছেন বলে জানা গেছে। তবে দিদির এই উদ্যোগকে হাতিয়ার করে পাল্টা প্রচারে নেমেছে সিপিআইএম। ‘দিদিকেই বলছি’ নাম দিয়ে একগুচ্ছ প্রশ্ন তুলে ধরা হচ্ছে। দলের নেতা কর্মীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে দিদির উদ্দেশ্যে করা প্রশ্নগুলো ছড়িয়ে দিতে। কালীঘাটে গিয়ে তৃণমূল কর্মী প্রসূন দত্তের গায়ে আগুন দেওয়ার ঘটনা থেকে রাজ্যের ঋণ বৃদ্ধি বা পঞ্চায়েতে ভোট লুট, সব প্রসঙ্গই রয়েছে প্রশ্নমালায়। সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে সেসব প্রশ্ন।
বিজেপির টার্গেট ১ কোটি সদস্য
সাম্প্রতিক লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির শক্তি বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্যে দলটি এ বছর ১ কোটি সদস্য সংগ্রহ অভিযানে নেমেছে। গত বছর বিজেপি ৪২ লাখ সদস্যকে তালিকাভুক্ত করেছিল। এ বছর এদের নবীকরণের পাশাপাশি নতুন সদস্য সংগ্রহের উপর জোর দিয়েছে। বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ মনে করেন, সমপ্রতি অনুষ্ঠিত লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি এই রাজ্যে যে ২.৩০ কোটি ভোট পেয়েছে, সেই ভোট দাতাদের অর্ধেককে দলের সদস্য হিসাবে তালিকাভুক্ত করা উচিৎ। উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি ৮৬ লাখ ভোট পেয়েছিল। গোটা ভারতে ২০ কোটি মানুষকে সদস্য করার লক্ষ্য ঠিক করা হলেও পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে বিষয়টি ভিন্নভাবে দেখছেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। রাজ্য বিজেপি নেতাদের মতে, এই রাজ্যই এখন দেশের সমস্ত ভাবনার কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত। গত ৬ই জুলাই থেকে শুরু হয়েছে সদস্য সংগ্রহ অভিযান। ইতিমধ্যেই ৫০ লাখের বেশি মানুষ সদস্য তালিকাভুক্ত হয়েছেন। আগামী দিনে লক্ষ্যমাত্রা ১ কোটি সহজেই ছাড়িয়ে যাবে বলে মনে করছেন বিজেপি নেতারা। পর্যবেক্ষকদের মতে, আগামী ২০২১ সালের রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনকে লক্ষ্য রেখে বিজেপি সবরকম প্রস্ততি শুরু করেছে। গত নির্বাচনে বিজেপি সব বুথে কর্মী দিতে পারেনি। আগামী নির্বাচনে যাতে সব বুথে কর্মীর উপস্থিতি নিশ্চিত করা যায় সেদিকে লক্ষ্য রেখেই ১ কোটির বেশি সদস্য সংগ্রহে জোর দেওয়া হয়েছে।
রাস্তার নামকরণে সুনীল ঘরণী খুশি নন
সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় কলকাতার রাস্তার নাম পরিবর্তনের বিরোধিতাই করে গিয়েছেন সবসময়। এবার তার নামেই রাস্তার নামকরণ করা হচ্ছে। কলকাতা পৌরসভা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সুনীল আমৃত্যু যে ম্যান্ডেভিলা গার্ডেনসে ছিলেন সেই রাস্তার নাম পাল্টে করা হচ্ছে. ‘কথাসাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় সরণি’। ম্যান্ডেভিলা গার্ডেনসের ‘পারিজাত’ অ্যাপার্টমেন্টের ৯তলা ফ্ল্যাটটি ছিল সকল কবি-সাহিত্যিকের আড্ডাস্থল। বাংলা কবিতার সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ঠিকানা। সেই ঠিকানা থেকেই সুনীলের মৃত্যুর পর নব পর্যায়ে প্রকাশিত হচ্ছে কবিদের কাগজ ‘কৃত্তিবাস’ পত্রিকা। তবে রাস্তার নামকরণের খবরে সুনীল ঘরণী স্বাতী গঙ্গোপাধ্যায় যতটা না খুশি তার চেয়ে বেশি হতাশ হয়েছেন। স্বাতী বলেছেন, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় নামটুকুই যথেষ্ট। নামের আগে শুধুমাত্র ‘কথাসাহিত্যিক’ যোগ করা হবে কেন? আর যদি যোগ করতেই হয় তবে ‘সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় সরণি’ হলেই বোধ হয় যথার্থ হতো। ‘কথাসাহিত্যিক’ শব্দটিতে শুধুমাত্র সুনীলের গদ্য সাহিত্যকে স্বীকার করা হয়েছে। অথচ সকলেই জানেন সুনীল একই সঙ্গে একজন কবিও। কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায় বলতেন, গদ্য-পদ্যে সুনীলের সমান প্রতিভা। কলকাতা পৌরসভার ‘রোড রিনেমিং কমিটি’র চেয়ারম্যান কবি জয় গোস্বামী। একজন কবির উপস্থিতিতে কী করে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো একজন সাহিত্যিককে শুধুমাত্র ‘কথাসাহিত্যিক’ হিসেবে চিহ্নিত করে রাস্তার নামকরণ করা হচ্ছে তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
অটিজম নিয়ে বাংলা পত্রিকা
গোটা বিশ্বে প্রতি ১৬০ জন শিশুর মধ্যে ১ জন অটিজমে আক্রান্ত। আর ভারতে প্রতি ৬৮ জন শিশুর মধ্যে ১ জন অটিজমের শিকার। পশ্চিমবঙ্গেও সংখ্যাটা খুব কম নয়। অটিজমে আক্রান্ত শিশুদের সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান ও সচেনতা এখনও খুব নিচু স্তরে। চিকিৎসকদেরও অটিজম সম্পর্কে ধারণা খুবই কম। পশ্চিমবঙ্গ অটিজম সোসাইটির অধ্যক্ষ ইন্দ্রনী বসু জানিয়েছেন, অটিজম কোনও রোগ বা অসুখ নয়। এটি একটা জেনেটিক কন্ডিশন। আটিস্টিক শিশুদের জন্য সহানুভূতি নয়, প্রয়োজন মানবিক স্পর্শ। অটিজম মোকাবিলায় প্রথমেই প্রয়োজন অটিস্টিক শিশুদের মা-বাবাকে সচেতন করা এবং সমাজকে বাস্তব অবস্থা বোঝানো। ঠিক এ কাজটি করার লক্ষ্য নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে বাংলায় অটিজম পত্রিকা অটিজম স্পর্শ। এটি প্রকাশ করেছে হাওড়া অটিজম সোসাইটি। পত্রিকাটির সম্পাদিকা ঝিমলি দত্ত পত্রিকা প্রকাশের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলেছেন, অটিজম বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিতে পশ্চিমবঙ্গে অনেক সময়ই ভাষা বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। আসলে অটিজম সংক্রান্ত সব তথ্যই ইংরেজিতে। স্বাভাবিকভাই এেই উদ্যোগের লক্ষ্য পরিষ্কার। পত্রিকাটিতে অটিজম নিয়ে নানা দিক থেকে আলোচনা করা হয়েছে। রয়েছে অটিস্টিক শিশুদের মা-বাবর লড়াইয়ের কথাও। অটিজম নিয়ে নানা বিভ্রান্তিকর ধারণার মূলেও আঘাত করার চেষ্টা হয়েছে। অটিজম স্পর্শ সকলের মধ্যে মানবিকতার স্পর্শ ছড়িয়ে দিক এটাই সকলের প্রত্যাশা।


মেশিনের বিদায় সম্বর্ধনা
এ মানুষের বিদায় সংবর্ধনার কথা আমরা জানি। কিন্তু মেশিনের বিদায় সংবর্ধনার কথা এই প্রথম জানা গিয়েছে। সম্প্রতি ধর্মতলায় দুটি টানেল খননকারী মেশিনকে বিদায় জানানো হলো। ইস্ট ওয়েস্ট মেট্রোর নির্মাণকারী সংস্থা আফকনের প্রকৌশীলরা গেরুয়া চ্যাকেট ও মাথায় হলুদ হেলমেট পড়ে লাইন করে দাঁড়িয়ে ভিট্রি নাইনের মাধ্যমে বিদায় জানালো রচনা ও প্রেরণাকে। আফকনের প্রজেক্ট ম্যানেজার সত্যনারায়ণ কানোয়ার বরেছেন, কোনো মেশিনকে বিদায় জানানোর কথা শোনা যায়নি। তবে রচনা ও প্রেরণা আমাদের কাছে ছিল স্পেশাল। কলকাতার সল্টলেক থেকে হাওড়ার ময়দান পর্যন্ত মেট্রোর কাজের জন্য জার্মানি থেকে আনা হয়েছিল সুবিশাল দুটি টানেল বোরার মেশিনকে। আফকনের এক পদাধিকারীর দুর্ঘটনায় মৃত্যুর পরে তার দুই মেয়ে রচনা ও প্রেরণার নামে মেশিন দুটির নামকরণ করা হয়েছিল। সেই রচনা ও প্রেরণা হাওড়া থেকে হুগলি নদীর নিচ দিয়ে টানেল খনন করার কাজটি করেছে। এর পরও হুগলির এপারে প্রাচীন বাড়ির পাশ দিয়ে টানেল তৈরির কাজও সাফল্যের সঙ্গে করেছে এই মেশিন দুটি। ধর্মতলায় গিয়ে তাদের কাজের সমাপ্তি ঘটে। তবে এই মেশিন দুটি ২০১১ সালে জার্মানি থেকে কলকাতায় আনা হলেও প্রথম ৫ বছর এদের কাজে লাগানো যায়নি। কোন পথে যাবে মেট্রো তাই নিয়েই ছিল বিতর্ক। শেষ পর্যন্ত ২০১৬ সালে এপ্রিলে হুগলি নদীর নিচে খননের কাজ শুরু হয়। ৫২০ মিটার দীর্ঘ টানেল খনন করতে বেশিদিন সময় লাগেনি। ২০১৮ সালের মে মাসে মেশিন দুটি নিরাপদে এসে পৌঁছেছিল ধর্মতলায়। এখানে এসেও এক বছরের অপেক্ষা। দৈত্যাকায় মেশিন দুটিকে উপরে তোলার জন্য ক্রেন পাওয়া যাচ্ছিল না। শেষ পর্যন্ত কিছুদিন আগে বিশালাকায় ক্রেন দিয়ে মাটির নিচ থেকে উপরে তুলে আনা হযেছে মেশিন দুটির বিভিন্ন অংশকে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status