শেষের পাতা

যে কারণে সিলেটে মহিলা কাউন্সিলর লাকীর ওপর হামলা

স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট থেকে

২২ জুলাই ২০১৯, সোমবার, ৯:৫৩ পূর্বাহ্ন

বাসার সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন মহিলা কাউন্সিলর রেবেকা আক্তার লাকী। পাশেই এবিসি পয়েন্ট। যুবলীগ ও ছাত্রলীগের কর্মীদের ভিড় ছিল ওই পয়েন্টে। হঠাৎ করে শুরু হয় হট্টগোল। কর্মীরা জড়িয়ে পড়ে হাতাহাতিতে। কাউন্সিলর হিসেবে চোখের সামনে এ দৃশ্য দেখে এগিয়ে গেলেন লাকী। কিন্তু তিনিও রক্ষা পেলেন না। ধাক্কা দিয়ে তাকে ফেলে দেয়া হয় মাটিতে। এরপর হাতে থাকা লাঠি দিয়ে পিটিয়ে আহত করা হয়। একদিন মেডিকেলে চিকিৎসা গ্রহণ শেষে লাকী ফিরেছেন বাসায়। কিন্তু এ ঘটনায় ক্ষোভ দেখা দিয়েছে এলাকায়। কাউন্সিলরের ওপর হামলার বিষয়টি মেনে নিতে পারছেন না কেউ।

তবে লাকীর এ ঘটনার জন্য পূর্বের ঘটনাকে দায়ী করেছেন। এ জন্য তিনি দায়ী করেছেন পাশের ওয়ার্ডের আরেক কাউন্সিলরকে। সিলেট নগরীর উপশহরের এবিসি পয়েন্ট। নগরবাসীর কাছে পরিচিত এই পয়েন্ট। নানা ঘটনার উর্বর স্থান এটি। আছে রাজনীতিও। স্থানীয় যুবলীগ ও ছাত্রলীগের একটি গ্রুপের আড্ডাস্থল। হয় ছিনতাইও। মাদক বিকিকিনির অভিযোগও আছে ওই পয়েন্টে। এ কারণে আগে বেশ কয়েকবার এই পয়েন্টে অভিযান চালিয়েছে র‌্যাব ও পুলিশ। এই পয়েন্টকে ঘিরে গত শনিবার থেকে ফের উত্তেজনা দেখা দিয়েছে এলাকায়।

আর এবারের উত্তেজনার কারণ হচ্ছে স্থানীয় ২২, ২৩ ও ২৪ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রেবেকা আক্তার লাকীর ওপর হামলা। হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরে আসার পর কাউন্সিলর রেবেকা আক্তার লাকী মানবজমিনকে জানিয়েছেন, তার বাসা হচ্ছে এবিসি পয়েন্টেই। ছায়ালোক ২৮ নম্বর বাসার বাসিন্দা তিনি। শনিবার বিকালে তিনি বাসার নিচে দাঁড়িয়ে সবজি কিনছিলেন। এমন সময় দেখেন তার বাসার সামনেই দু’দল যুবক মারামারি করছে। তাদের হাতে দেশে তৈরি অস্ত্র। তিনি এগিয়ে যান। তাদের শান্ত করার চেষ্টা করেন। এমন সময় নাবিল নামের এক যুবক এসে তাকে ধাক্কা দেয়। এতে তিনি মাটিতে পড়ে যান। এবং সাইদুলসহ কয়েকজন এসে তাকে লাঠি দিয়ে এলোপাতাড়ি মারধর করে। পরে স্থানীয় এলাকাবাসী ও পুলিশ চলে আসলে তারা পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় আহত হলে তাকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৬ষ্ঠ তলার ৬০১ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। শনিবার সন্ধ্যায় ভর্তির পর গতকাল দুপুরের পর তিনি রিলিজ নিয়ে বাসায় ফিরে এসেছেন।

ডাক্তাররা তাকে বিশ্রামে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন বলে জানান। কাউন্সিলরের স্বামী আব্দুল মালেক জানিয়েছেন, কাউন্সিলর লাকীর ওপর এই হামলা পরিকল্পিত। যারা শনিবার লাকীর ওপর হামলা করেছে তারা আগেও বাসায় হামলা করেছিল। তিনি বলেন, উপশহরে ২২ নং ওয়ার্ডের আওতাধীন একটি বাসার স্বামী-স্ত্রীর পারিবারিক বিরোধের বিষয়টি সালিশের জন্য এসেছিল কাউন্সিলর লাকীর কাছে। পরে লাকী বিষয়টি শেষ করে দেয়ার জন্য স্থানীয় উপশহর ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই সোহেল রানার কাছে তাদের পাঠান। আর এতে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিল সালেহ আহমদ সেলিম। এই ঘটনার জের ধরে উপশহরের যুবলীগ ও ছাত্রলীগের অংশটি তার বাসায় হামলা করে। এ ঘটনার পর সিলেটের বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডের কাউন্সিলররা তাদের বাসায় এসেছিলেন। তারা বিষয়টি নিয়ে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর কাছে বিচারপ্রার্থী হয়েছিলেন। মেয়র বিষয়টি দেখে দেবেন বলে আশ্বস্ত করেছিলেন। কিন্তু তার আগেই লাকীর ওপর হামলার ঘটনা ঘটলো। মেয়রের কাছে বিচার চাওয়ার কারণে লাকীর পক্ষ থেকে থানায় মামলা করা হয়নি বলে জানান তিনি।

মালেক জানান, এবারের ঘটনায় তার এলাকা তেররতনের মানুষ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তারা বিষয়টি নিয়ে সামাজিকভাবে বসবেন। এবং পরবর্তী করণীয় তারা নির্ধারণ করবেন। আর লাকী সুস্থ হয়ে উঠলে এ ব্যাপারে মামলা দায়ের করবেন বলে জানান। তবে কাউন্সিলর লাকীর ওপর হামলার ঘটনা তাকে জানানো হয়নি বলে জানিয়েছেন ২২ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সালেহ আহমদ সেলিম। এ জন্য বিষয়টি তিনি জানেন না। লাকীর সঙ্গে তার কোনো বিরোধ নেই। বরং সহকর্মী হিসেবে তারা এক সঙ্গে উপশহরের মানুষের সেবা করছেন বলে জানান। তিনি বলেন, যুবলীগের সম্মেলনকে কেন্দ্র করে এবিসি পয়েন্টে শনিবার যুবলীগ ও ছাত্রলীগের বিবদমান দু’গ্রুপের মারামারির বিষয়টি তিনি শুনেছেন।

পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এর বেশি তার কিছু জানা নেই বলে জানান সেলিম। এদিকে উপশহর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সোহেল রানা জানিয়েছেন, কাউন্সিলর সেলিমের পক্ষের নেতাকর্মীরা উপশহরের এবিসি পয়েন্টে ছিল। এ সময় বহিরাগত কিছু যুবক ওই পয়েন্টে এলে উত্তেজনা দেখা দেয়। রেবেকার ওপর আঘাত করেছে বহিরাগতরা। হামলাকারীকে তারা খুঁজছেন বলে জানান। এ ঘটনায় মামলা হলে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে জানান সোহেল রানা। এদিকে স্থানীয় তেররতন এলাকার লোকজন জানিয়েছেন, বেশ কয়েকটি এলাকার প্রবেশমুখ হচ্ছে এবিসি পয়েন্ট। এ কারণে ওই পয়েন্টের গুরুত্ব বেড়েছে। আগেও এ পয়েন্টে মিন্নত নামের এক যুবকের হাত কর্তন করা হয়েছিল। নানা ঘটনার কারণে পয়েন্টটি এলাকার মানুষের কাছে আতঙ্কের জনপদে পরিণত হয়েছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status