দেশ বিদেশ

এ যেন খোঁড়াখুঁড়ির নগরী

মারুফ কিবরিয়া

২২ জুলাই ২০১৯, সোমবার, ৯:৫১ পূর্বাহ্ন

এ যেন খোঁড়াখুঁড়ির নগরী। ঢাকায় কিছু পথ পরপরই কাটা রাস্তা। আর তার ফলে লেগে থাকে দীর্ঘ যানজট। রাস্তার এক পাশ কাটা থাকায় যান চলাচলের জায়গা থাকে বেশ সংকুচিত। এতে মানুষের ভোগান্তির সীমা নেই। রাজধানীর এই চিত্র নিত্যদিনের। নিয়ম থাকা সত্ত্বেও সারা বছরজুড়েই চলে খোঁড়াখুঁড়ির কাজ।

সাধারণত বর্ষাকালে বিশেষ করে মে, জুন, জুলাই, আগস্ট ও সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বছরের পাঁচ মাস রাস্তা কাটায় নিষেধ রয়েছে। এ সময় বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া দিনের বেলায় রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি করা যাবে না। সিটি করপোরেশন ছাড়াও অন্য সেবা সংস্থা এ সময় রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির অনুমতি পাবে না। অথচ বর্ষা মৌসুমেই সড়কের বিভিন্ন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানকে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি করে কাজ করতে দেখা যায়। বিটিসিএল, ডেসকো, ওয়াসাসহ প্রায় প্রতিটি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানই বছরের কোনো না কোনো সময় রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির কাজে ব্যস্ত থাকে।

রাজধানীর খিলগাঁও, শাহজাহানপুর, মালিবাগ, বাসাবো, মাদারটেক, মগবাজার এলাকার সড়কগুলোতে বিদ্যুৎ, ওয়াসা, তিতাস গ্যাসের, বিটিসিএলসহ বিভিন্ন সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের কাজ  সারাবছরই চলতে থাকে। সরজমিনে দেখা যায়, মতিঝিলের বাংলাদেশ ব্যাংক সংলগ্ন দক্ষিণ কমলাপুর সড়কের বেশকিছু অংশ এক মাস ধরে পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। এ সড়কের মাঝ বরাবর কেটে পাইপ স্থাপন করছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। এ কারণে এ সড়ক দিয়ে পথচারীরা কোনোরকমে চলাচল করতে পারলেও কোনো যানবাহন চলছে না। এজন্য ওই সড়কের চাপ আশপাশের সড়কে পড়ে ব্যাপক যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। এ সড়কের কিছু দূরেই সাদেক হোসেন খোকা কমিউনিটি সেন্টারের পাশের সব সড়কেই ড্রেন স্থাপনের জন্য রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি করা হয়েছে। আর কে মিশন রোডের মাঝখানে বড় বড় সিমেন্টের পাইপ ফেলে রাখা হয়েছে। এ সড়কে পাইপ স্থাপনের কাজ চলায় যানবাহন চলাচল সীমিত হয়ে পড়েছে। কমলাপুর থেকে টিটিপাড়া পর্যন্ত রাস্তার পাশে সড়ক খুঁড়ে রাখা হয়েছে। এ কারণে রাতদিন ওই সড়কে যানজট তৈরি হচ্ছে।

ব্যস্ততম এলাকা দিলকুশার অন্যতম প্রধান সড়ক খুঁড়ে ড্রেন স্থাপন করা হচ্ছে। রাস্তার বেশির ভাগ অংশ দীর্ঘদিন থেকে খুঁড়ে রাখায় গাড়ি ও জনসাধারণের চলাচলে ব্যাপক ভোগান্তি হচ্ছে। একই চিত্র  বাসাবো বৌদ্ধমন্দিরের পাশের অলিগলিতেও। দীর্ঘদিন থেকে এসব সড়কে খোঁড়াখঁুঁড়ি চলছে। কখনো গ্যাস পাইপ লাইন আবার কখনো বিটিসিএলের কাজের জন্য। অন্যদিকে মেরুল বাড্ডার একটি সড়ক ওয়াসার সুয়ারেজের কাজ চলায় দীর্ঘদিন বন্ধ রয়েছে। এ সড়কে কোনো যানচলাচলও করতে পারে না। বসিলাতে সড়কে উন্নয়নের জন্য অনেক আগে খোঁড়াখুঁড়ি শুরু হয়েছে। কিন্তু কাজ এখনো শেষ হয়নি। ফলে জনসাধারণকে ব্যাপক ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। রাজধানীতে প্রায় তিন বছর আগে মেট্রোরেলের কাজ শুরু হয়েছে। উত্তরা থেকে মিরপুর, শেওড়াপাড়া হয়ে আগারগাঁও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় অফিস পর্যন্ত প্রাথমিকভাবে কাজ করা হয়। এ কারণে সংশ্লিষ্ট এলাকাবাসীকে দীর্ঘদিন থেকে ভোগান্তি সহ্য করতে হচ্ছে। আগারগাঁও থেকে ফার্মগেট, শাহবাগ হয়ে মতিঝিল অংশেও মেট্রোরেলের কাজ চলছে। এ কারণে ফার্মগেট, কাওরানবাজার, বাংলামোটর, শাহবাগ, জাতীয় প্রেস ক্লাব, পল্টন, দৈনিকবাংলা, মতিঝিল এলাকার সড়কে রাতদিন যানজট লেগেই থাকছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকছে সব ধরনের যানবাহন।

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন সূত্র জানিয়েছে, রাজধানীর দুই হাজার কিলোমিটারেরও বেশি দীর্ঘ সড়কের অধিকাংশই এখন ভাঙাচোরা, গর্ত ও খানাখন্দে যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। সড়ক সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ খাতে শত শত কোটি টাকা ব্যয় হলেও এর সুফল পাচ্ছেন না নগরবাসী। বরং পোহাতে হচ্ছে দুর্ভোগ। জানা গেছে, কোনো সড়ক খোঁড়ার পর কাজ শেষে দ্রুত সেটি আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার নিয়ম সিটি করপোরেশনের থাকলেও কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা মানছে না সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status