এক্সক্লুসিভ

বছরজুড়েই পানির জন্য হাহাকার

শাহনেওয়াজ বাবলু

২২ জুলাই ২০১৯, সোমবার, ৮:৩৬ পূর্বাহ্ন

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় পানির তীব্র সংকট চলছে। তীব্র তাপদাহে পানির চাহিদা বাড়লেও সরবরাহ কমেছে। একাধিক এলাকায় রান্না-বান্নাসহ জরুরি কাজও করা যাচ্ছে না। ওয়াসার পানি ব্যবহারের অনুপযোগী হওয়ায় অনেক এলাকার মানুষ বোতলজাত পানি ব্যবহার করছেন। কিছু কিছু এলাকায় ওয়াসার ট্যাপে পানিই আসে না। মাঝে মধ্যে যেটুকু পানি আসে, তাতেও থাকে দুর্গন্ধ-ময়লা। দেখা যায় শ্যাওলা। এ পানি আগে ফুটিয়ে খাওয়া গেলেও এখন ফুটানো, ফিটকারি দিয়েও ময়লা ধূর করা যায় না। এ কারণে রাজধানীর কয়েকটি এলাকায় স্থানীয় বাসিন্দাদের উদ্যোগে মসজিদে ডিপ টিউবওয়েল বসানো হয়েছে। এই পানি দিয়ে মসজিদের মুসল্লিরা ওজু ও জরুরি কাজে পানি ব্যবহার করেন। টিউবওয়েল থেকে পাইপের মাধ্যমে বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে আলাদা পানির ট্যাপের সংযোগ দেয়া হয়েছে। সেখান থেকে মানুষ খাবার পানি সংগ্রহ করে। এ পানি সংগ্রহের জন্য সকাল থেকে রাত পর্যন্ত রাস্তার মোড়ে মোড়ে মানুষের ভিড় লেগে থাকে।

গতকাল সরজমিনে উত্তরার ১০, ১২ ও ১৩ নম্বর সেক্টর, আবদুল্লাহপুর, খালপাড় ও সুইসগেট, কামারপাড়া, ফুলবাড়ীয়া, ধউর, খিলক্ষেতের পুরো এলাকা, তেজগাঁওয়ের নাখালপাড়া, আজরতপাড়া, পূর্ব নাখালপাড়া, লিচু বাগান, শ্যামলী, খিলজী রোড, পিসি কালচার সোসাইটি, উত্তর কাফরুল, দারুস সালাম রোড, মিরপুর ১৩-এর সি ব্লকের ১ নম্বর রোড, পশ্চিম বাইশটেকি, পূর্ব বাইশটেকি এলকা ঘুরে একই চিত্র দেখা যায়। এছাড়া মোহাম্মদপুর এলাকার মোহাম্মদী হাউজিং, চানমিয়া হাউজিং এবং আলী অ্যান্ড নুর রিয়েল এস্টেট এলাকা, সূত্রাপুরের রেবতি মোহন দাস লেন, জুরাইন, লক্ষ্মীবাজার একরামপুর, বাংলামোটর বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের গলি, মগবাজারের মধুবাগ, যাত্রাবাড়ি, মীরহাজীরবাগ, গেন্ডারিয়া, পোস্তগোলা, নাজিমউদ্দিন রোড, চকবাজার, ইমামগঞ্জ, পাতলাখান লেন, আগামাসি লেন, আরমানিটোলা, বংশালের সিদ্দিক বাজার, বিআরটিসি বাস ডিপো, কাপ্তানবাজার, নাজিরাবাজার, পাকিস্তান মাঠ, চানখাঁরপুল, নাজিমউদ্দিন রোড, সাতরোজা, হোসনি দালাল রোড, মালিবাগ, বেইলি রোড, শান্তিনগর, ডেমরার মাতুয়াইল, মোমেন বাগ, ডগাইর এলকায় দেখা যায় তীব্র পানির সংকট। এছাড়া এসব এলাকা পানি সংকটের পাশাপাশি দুর্গন্ধ ও ময়লাযুক্ত পানি সরবরাহের খবরও পাওয়া গেছে।

এসব এলাকার ভুক্তভোগীরা জানান, পানি না পেয়ে কয়েক দিন ধরে তারা দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন। তাদের অভিযোগ ওয়াসা অফিসে ঘুরে বাড়তি টাকা দিয়েও পানি পাচ্ছেন না। তীব্র গরমের মধ্যে আবার পানিসংকটের কারণে ভোগান্তি কয়েক গুণ বেড়ে গেছে। কখনো কখনো ওয়াসা থেকে বলা হয়, গভীর রাতে পানি আসতে পারে। এ অবস্থায় রাত জেগে পানির আশায় বসে থাকলেও পানির দেখা আর মিলে না।

মিরপুর ১১ নম্বর এলাকার বাসিন্দা মনির হোসেন বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই আমরা পানির সংকটে আছি। অনেক সময় দিনরাতে এক ফোঁটা পানিও পাই না। তখন ওয়াসা অফিসে যোগাযোগ করা হলে তারা পানি দিতে পারবে না বলে জাননিয়ে দেয়। তীব্র গরমের মধ্যেও আমাদের গোসল না করে থাকতে হয়।

সুপেয় পানির দাবিতে আন্দোলনকারী জুরাইন এলাকার বাসিন্দা মিজানুর রহমান বলেন, এতো আন্দোলন হচ্ছে। কিন্তু পানি সমস্যার কোনো সমাধান হচ্ছে না। কিছুদিন আগে একটি টকশোতে আমাদের এলাকায় ওয়াসার ময়লা পানির একটি ভিডিও দেখিয়েছিলাম। ওই টকশোতে ওয়াসার এমডিও ছিলেন। তখনই তিনি আমাকে বলেছেন, এই এলাকার পানির সমস্যা সমাধানের জন্য দ্রুত তিনি উদ্যোগ নিবেন। কিন্তু ওই টকশোর পর ওয়াসার কোন কর্মকর্তাকে আর এলকায় দেখিনি।

রাস্তার পাশের ট্যাপ থেকে পানি নিতে আসা একই এলাকার বাসিন্দা কামরুন নাহার বলেন, ওয়াসার পানিতে দুর্গন্ধ আর ময়লা আসে। খাওয়ার জন্য প্রতিদিন মসজিদের ডিপের পানি নেই। ২ টাকা, ৫ টাকা যখন যা পারি দেই। এক মাস হল এই এলাকায় এসেছেন তিনি। এর মধ্যে বেশ কয়েক দিন ওয়াসার লাইনে হলুদ ও নীল কালারের ময়লা পানি আসার কথাও জানান তিনি।

ওয়াসার মডস জোন-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী আল আমিন বলেন, তীব্র গরমের কারণে পানির চাহিদা বেড়েছে। এ জন্য কিছু কিছু এলাকায় পানির সংকট দেখা দিয়েছে। দু-একদিন বৃষ্টি হলেই এ সংকট কেটে যাবে বলে তিনি আশা করেন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status