প্রথম পাতা

আদালতে মিন্নির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি

মো. মিজানুর রহমান, বরগুনা থেকে

২০ জুলাই ২০১৯, শনিবার, ৯:৪১ পূর্বাহ্ন

রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন তার স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি। তবে জবানবন্দিতে তিনি ঠিক কী বলেছেন সে ব্যাপারে বিস্তারিত জানা যায়নি। আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিকে পাঁচদিনের রিমান্ড শেষ হওয়ার আগেই কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে গতকাল বিকাল ৫টার সময় বরগুনার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. সিরাজুল ইসলাম গাজীর আদালতে তোলা হয় তাকে। এ সময় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন মিন্নি। স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি শেষে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়। রিফাত হত্যা মামলায় প্রথমে সাক্ষী থাকলেও পরে মিন্নিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ। এখন তিনিও এ মামলার আসামি।

এ বিষয়ে রিফাত হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বরগুনার সদর থানার ওসি (তদন্ত) মো. হুমায়ুন করিব বলেন, মিন্নি রিফাত হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। জবানবন্দি গ্রহণ শেষে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

এর আগে গত মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বরগুনার মাইঠা এলাকার বাসা থেকে বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোরসহ মিন্নিকে জিজ্ঞাসাবাদ ও তার বক্তব্য রেকর্ড করতে বরগুনা পুলিশ লাইন্সে নিয়ে যায় পুলিশ। এরপর দীর্ঘ ১০ ঘণ্টার জিজ্ঞাসাবাদ ও বিভিন্ন মাধ্যম থেকে পাওয়া তথ্য-উপাত্ত পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিশ্লেষণ ও পুলিশের প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে আটকে যান মিন্নি। বেরিয়ে আসে হত্যাকাণ্ডে তার সম্পৃক্ততার প্রমাণ। এরপরই তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
এরপর বুধবার বিকাল ৩টার দিকে বরগুনার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মিন্নিকে হাজির করে সাতদিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। পরে শুনানি শেষে মিন্নির পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালতের বিচারক মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম গাজী। পরদিন বৃহস্পতিবার বরগুনার পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন জানিয়েছিলেন, মঙ্গলবার দিনভর জিজ্ঞাসাবাদ ও বুধবার রিমান্ড মঞ্জুরের পর পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে রয়েছেন আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি। ইতিমধ্যে মিন্নি স্বামী রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। এ হত্যার পরিকল্পনার সঙ্গেও তিনি যুক্ত ছিলেন।

রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় এখন পর্যন্ত ১৬ অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এদের মধ্যে মিন্নিসহ ১৩ জন অভিযুক্ত রিফাত হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এছাড়া এ মামলার দুইজন অভিযুক্ত রিমান্ডে রয়েছেন। আর এ মামলার প্রধান অভিযুক্ত নয়ন বন্ড বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন।

এদিকে রিফাত শরীফ হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত তিন নম্বর আসামি মো. রাশিদুল হাসান রিশান ফরাজীর পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। গতকাল সকালে বরগুনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো. সিরাজুল ইসলাম গাজী এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

এ বিষয়ে রিফাত হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বরগুনা সদর থানার ওসি (তদন্ত) মো. হুমায়ুন কবির বলেন, রিশান ফরাজীকে আদালতে হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাতদিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। পরে শুনানি শেষে আদালত রিশান ফরাজীর পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
দুই মায়ের কোল খালি করে কবরবাসী হইলি তোরা: নয়ন বন্ডের মা

‘আমার পুত্রবধূ আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির কারণে আজ কতগুলো পরিবার জ্বলছে। দুই মায়ের বুক খালি হয়েছে। কতদিন বলেছি তোরা বন্ধুত্ব আবার জোড়া লাগিয়ে বিভেদ ভুলে জীবনযাপন শুরু কর। কিন্তু আজ বিপরীত হয়ে দুই মায়ের কোল খালি করে কবরবাসী হইলি তোরা।’

গতকাল দুপুরে বরগুনা সরকারি কলেজের পেছনে নিজের বাড়িতে বসে আক্ষেপের সঙ্গে কথাগুলো বলেছিলেন ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত নয়ন বন্ডের মা সাহিদা বেগম।

স্থানীয়দের দেয়া তথ্যানুযায়ী, রিফাত শরীফ এবং নয়ন বন্ড দুইজন খুব কাছের বন্ধু ছিলেন। তারা একই গ্রুপ ‘বন্ড ০০৭’ এর সদস্য ছিল। তাদের দু’জনের প্রথম ঝামেলা শুরু হয় ‘বন্ড ০০৭’ গ্রুপের প্রধান থাকবে কে তা নিয়ে। এরপর ওই গ্রুপে নয়নের সদস্য বেশি হওয়ায় রিফাত নয়নের সঙ্গে বন্ধুত্ব ছিন্ন করে নতুন এক বাহিনীতে যোগ দেয়। পরে রিফাত আরেকটি ছিনতাই গ্রুপ তৈরি করে। যেটার নিয়ন্ত্রণ করতেন রিফাত। আর এ নিয়ে দুইজনের মধ্যে প্রায়ই ঝামেলার সৃষ্টি হয়ে মারামারি পর্যন্ত হতো।

রিফাত হত্যা মামলার বাদী ও তার বাবা দুলাল শরীফ বলেন, আমার ছেলে রিফাত মারা যাওয়ার পর শুনেছি নয়ন আর রিফাতের মধ্যে দ্বন্দ্ব ছিলো। এর আগে, কখনো বুঝিনি ওরা দুইজন দুইজনার শত্রু। তাছাড়া তারা একসময় ভালো বন্ধু ছিল।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status