এক্সক্লুসিভ

দেখা দিচ্ছে খাদ্য সংকট

উত্তরাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি

বাংলারজমিন ডেস্ক

২০ জুলাই ২০১৯, শনিবার, ৯:১২ পূর্বাহ্ন

দেশের উত্তরাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটেছে। বন্যার পানিতে প্রতিদিনই ডুবছে ঘরবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সড়ক, মহাসড়ক। বানভাসি মানুষের আশ্রয় মিলছে না বাঁধেও। গবাদিপশু নিয়ে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন বন্যাদুর্গতরা। ত্রাণের জন্য চলছে হাহাকার। বিস্তারিত প্রতিনিধিদের পাঠানো রিপোর্টে-
উত্তরাঞ্চল প্রতিনিধি জানান, গাইবান্ধার বন্যা পরিস্থিতি অপরিপর্তিত রয়েছে। জেলা শহরের ৪টি ওয়ার্ডসহ ৫ উপজেলার ৩৮টি ইউনিয়নের ২৫৩টি গ্রামের ৫ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এ পর্যন্ত সাপের কামড়ে ও পানিতে ডুবে মৃত্যু হয়েছে ৯ জনের। এদিকে গাইবান্ধা জেলা শহরের অধিকাংশ দোকান ও অফিসে পানি উঠেছে। ডুবে আছে জেলার ১৬৫টি চরাঞ্চল। রাস্তা ডুবে যাওয়ায় জেলা শহর থেকে বিছিন্ন হয়ে পড়েছে ৫টি উপজেলার যোগাযোগ। নদীর বাধে ও খোলা আকাশের নিচে খেয়ে না খেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে এসব বানভাসি মানুষ। গবাদিপশু সহায় সম্বল নিয়ে ছুটছেন নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে। দুর্গত এলাকাগুলোতে পৌঁছায়নি পর্যাপ্ত ত্রাণ। দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি ও পয়ঃনিষ্কাশনের সমস্যা।
অব্যাহত পানি বৃদ্ধি ও প্রবল পানির চাপে ভাঙ্গা বাধ দিয়ে পানি প্রবেশ করে প্রতিদিন প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। বাড়ছে দুর্গতের সংখ্যা। প্রতিদিন ভাঙছে বাঁধ। বাঁধ ভাঙনের ফলে নতুন করে ভাঙনে বিলীন হয়ে যাচ্ছে অনেক ঘড়বাড়ি। অনেকেই নিজেদের ঘরবাড়ি ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা করতে নিজেরাই চাঁদা তুলে মেরামতের চেষ্টা করছে। এইসব এলাকার মানুষ বন্যা আশ্রয়কেন্দ্রে, বিভিন্ন বাঁধে ও উঁচু জায়গায় মাথা গোঁজার ঠাঁই পেলেও টানা কয়েকদিনের বন্যায় মানুষের হাতে কাজ না থাকায় এসব পরিবারের মধ্যে দেখা দিয়েছে চরম খাদ্যাভাব। হাতে কাজ না থাকায় চরম সংকটে দিন চলছে তাদের। চারদিকে থই থই পানিতে প্লাবিত হওয়ায় বন্যার শুরু থেকেই তারা কোনো কাজ করতে পাচ্ছ না। তাই ধারদেনা করে চলছে সংসার। বন্যায় ঘরবাড়ি সব হারিয়ে এখন নিস্ব তারা। সরকারি হিসেবে গাইবান্ধার ৫ উপজেলায় ৫শ’ ২০ কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা ১৮৭ কিলোমিটার, পাকা রাস্তা, ৫৮ কিলোমিটার বাঁধ ও ১৮ টি কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়াও এসব এলাকায় ফসলহানি হয়েছে দশ হাজার আটশ’ তেত্রিশ হেক্টর জমির। এদিকে গাইবান্ধার বাদিয়াখালীতে রেললাইনের ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ায় রেললাইন দেবে যাওয়ায় বুধবার থেকে গতকাল পর্যন্ত ঢাকার সাথে উত্তরাঞ্চলের রেল যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।
সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি বৃস্পতিবার রাত থেকে অনেকটা থমকে দাঁড়িয়েছে। তবে এখনো তা বিপদসীমার ৯৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ কারণে যমুনা নদীতীরবর্তী ৫টি উপজেলা কাজিপুর, সদর, বেলকুচি, চৌহালী ও শাহজাদপুর উপজেলায় প্রতিনিধিই নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। বেশি দুর্ভোগে পড়েছে চরাঞ্চলের মানুষ। এসব এলাকার ফসলি জমি ও হাটবাজার ইতিমধ্যে তলিয়ে গেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় ২১ হাজার পরিবারে লক্ষাধিক মানুষ। সরকারি হিসেবে এটি বলা হলেও এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। এদিকে, রাস্তায় পানি উঠায় সিরাজগঞ্জের কাজিপুর-ধুনট সড়ক যোগাযোগ দিন যাবত বন্ধ রয়েছে। সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম জানান, বৃৃহস্পতিবার রাত থেকে পানি বৃদ্ধির হার কমে এসেছে। ইতিমধ্যে কাজিপুর পয়েন্টে ৫ সেন্টিমিটার পানি কমেছে। সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে বেড়েছে মাত্র ১ সেন্টিমিটার। এদিকে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সিরাজগঞ্জ শহররক্ষা বাঁধ হার্ড পয়েন্টের একটি স্থানের কয়েকটি পাথর সরে যাওয়ায় ধসের আশঙ্কা করা হয়েছিল। কিন্তু রাতেই সেখানে অতিরিক্ত পাথর নিক্ষেপ করে সেটি নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে।
গতকাল দুপুরে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব কবির বিন আনোয়ার বাঁধ এলাকা পরিদর্শন করেন। এসময় তিনি বলেন, সিরাজগঞ্জের বাঁধগুলো এখনও নিরাপদ রয়েছে। এগুলোতে সার্বক্ষণিক মনিটরিং চলছে। যেকোনো সমস্যা দেখা দিলে তা মোকাবিলায় আমরা প্রস্তুত রয়েছি। পাউবোর পাশাপাশি এজন্য সেনাবাহিনীকেও প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় তারা আমাদের সার্বিক সহযোগিতা দেবে। পরিদর্শনকালে টাঙ্গাইল ঘাটাইল সেনানিবাসের জিওসি মেজর জেনারেল শামীম আহম্মেদ, পাউবোর রাজশাহী বিভাগীয় প্রধান প্রকৌশলী (ডিজাইন) মোতাহার হোসেন ও ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক তোফাজ্জল হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
নওগাঁ প্রতিনিধি জানান, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে গতকাল ভোরে নওগাঁর রানীনগরে নান্দাইবাড়ী-মালঞ্চি নামক স্থানে ছোট যমুনা নদীর বেরি বাঁধ ভেঙে ৩টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ৮০০ পরিবারের প্রায় ১৫ হাজার লোক। মালঞ্চি গ্রামের নওগাঁ-আত্রাই আঞ্চলিক সড়কের ২টি কালভার্টের নিচ দিয়ে প্রবল বেগে বন্যার পানি প্রবেশ করছে। এতে আত্রাই, রানীনগর, বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার ফসলি জমির মাঠসহ বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। বাঁধ ভেঙে নান্দাইবাড়ী-মালঞ্চি ও কৃষ্ণপুর গ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকা বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। ডুবে গেছে বাড়িঘরসহ সবজি ক্ষেত। বন্যার পানিতে বাড়িঘর ডুবে যাওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছে ৩টি গ্রামের মানুষ। অনেকে বাড়িঘর ছেড়ে আসবাবপত্র ও গবাদিপশু নিয়ে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিচ্ছেন। গোনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল হাসনাত খান হাসান বলেন, আমার এলাকার ছোট যমুনা নদীর নান্দাইবাড়ি, মালঞ্চি, কৃষ্ণপুর ও আত্রাই উপজেলার ফুলবাড়ি বেড়িবাঁধটি নির্মিত হওয়ার পর থেকে অভিভাবকহীন। কোনো দপ্তর কোনোদিন এই বাঁধটি সংস্কার করেনি। এমনকি এই বাঁধটিকে কোনো দপ্তরই স্বীকার করে না যার কারণে সংস্কার ও উন্নয়নের কোনো প্রকারের ছোঁয়া এই বাঁধে কখনো স্পর্শ করেনি। যার ফলশ্রুতিতে বাঁধটি দীর্ঘদিন ধরে চরম ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ছিল। আজ বাঁধটির মালঞ্চি এলাকার কিছু অংশ ভেঙে গেছে। এতে করে নদীর তীরবর্তী কয়েকটি গ্রাম পানিতে প্লাবিত হয়ে গেছে। শুধু বাড়িঘরই নয় এই এলাকা পুকুর ও সবজির আবাদের জন্য বিখ্যাত। আশঙ্কা করা হচ্ছে এই বন্যার কারণে এই এলাকা কয়েকশ’ পুকুর ও শতাধিক হেক্টরের সবজির আবাদ পানিতে তলিয়ে যাবে। এছাড়াও নওগাঁ-আত্রাই সড়কের বেশকিছু জায়গা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। সেইসব ঝুঁকিপূর্ণ স্থান স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সহায়তায় স্থানীয়রা রক্ষা করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শহীদুল ইসলাম বলেন, ভেঙ্গে যাওয়া অংশে নদীর পানিতে তেমন গতি না থাকায় বন্যাকবলিত এলাকা ছাড়া অন্যান্য ফসলের তেমন উল্লেখযোগ্য ক্ষতি হবে না বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে প্লাবিত ৩টি গ্রামের সবজির আবাদ ও পুকুর বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। কৃষি অফিসের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করে বন্যাকবলিত এলাকায় সার্বক্ষণিক থাকার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল মামুন বলেন, আমরা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সংখ্যা ও ক্ষতির পরিমাণ নিরুপণ করে তাদের জন্য সহায়তা হিসেবে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করার পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। এছাড়াও ভেঙে যাওয়া অংশ বাঁধার চেষ্টা করা হচ্ছে। সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বাঁধটি পরিদর্শন করে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। এদিকে নওগাঁর মান্দা উপজেলার আত্রাই নদীর বনকুড়া নামকস্থানে বাঁধ ভেঙে প্রায় ২২টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বুধবার (১৭ই জুলাই) ভোর রাতের দিকে বাঁধটি ভেঙে যায়। আত্রাই নদীর পানি বিপদসীমার ৯০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় মান্দার বন্যা পরিস্থিতি আরো কিছুটা অবনতি হয়েছে বলে জানান বন্যার্তরা।
স্টাফ রিপোর্টার, টাঙ্গাইল থেকে জানান, টাঙ্গাইলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। প্রায় সব কটি নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। পানি বৃদ্ধির কারণে জেলার ৫টি উপজেলায় নদী তীরবর্তী প্রায় ১২০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। অনেকেই পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন। গ্রামের রাস্তা এবং ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। বন্ধ রয়েছে ৬৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও। নদী ভাঙনের শিকার হয়েছেন কয়েকশ’ পরিবার। এতে খাদ্য, পানির সংকট, গো-খাদ্য সংকট এবং অন্যদিকে বাসস্থানে পানি প্রবেশ করায় চরম দুর্ভোগে পড়েছে তারা। ঘরবাড়িতে পানি প্রবেশ করায় অনেকে গরু-ছাগল ও পরিবার পরিজন নিয়ে উঁচু প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। বন্যাকবলিত এলাকাগুলোতে ত্রাণ তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। জেলা কৃষি সম্পাসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বন্যার কারণে জেলায় বোনা আমন ১১৭৫ হেক্টর জমি, রোপা আমন (বীজতলা) ৩৩ হেক্টর, আউশ ৬০৮ হেক্টর এবং বিভিন্ন ধরনের সবজি ৯৬ হেক্টর জমি পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে।
বিদ্যালয়ে পানি প্রবেশ করায় এবং সড়কগুলো তলিয়ে যাওয়ায় শিক্ষার্থীরা আসতে না পাড়ায় মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৯টি এবং প্রায় ৫৮টি প্রাইমারি বিদ্যালয় বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে পানি আরো বৃদ্ধি পেলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে বলেন জানান জেলা শিক্ষা অফিসার লায়লা খানম এবং জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল আজিজ।
স্টাফ রিপোর্টার, কুড়িগ্রাম থেকে জানান, কুড়িগ্রামে নামতে শুরু করেছে বন্যার পানি। সেই সঙ্গে বেড়েছে দুর্ভোগ। এখনো ঘরে ফিরতে পারছে না দুর্গতরা। গত দশদিনে ৮ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়েছে। বানভাসিদের জন্য অপ্রতুল ত্রাণের কারণে হাহাকার অবস্থা বিরাজ করছে। বিশাল এলাকাজুড়ে বন্যা হওয়ায় জনপ্রতিনিধিরা পড়েছেন চরম বিপাকে। এদিকে গতকাল সকালে পানিতে পড়ে সীমা খাতুন নামে দেড় বছরের একটি শিশু মারা গেছে। সে উলিপুর পৌরসভার খাওনার দরগা গ্রামের ভাটিয়াপাড়ার সাদেক মিয়ার কন্যা। ৮ নং ওয়ার্ডের পৌর কমিশনার সোহরাব হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এনিয়ে গত দশদিনে পানিতে ডুবে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫ জনে। জেলা প্রশাসনের কন্ট্রোলরুম সূত্রে জানা যায়, বন্যার ফলে ৫৭টি ইউনিয়নের ৮৯৪টি গ্রাম পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এতে প্রায় ২ লাখ পরিবারের ৮ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়েছে। ঘরবাড়িতে পানি উঠেছে প্রায় ২ লাখ। ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২০ হাজার হেক্টর। বন্যায় ৫শ’ কিলোমিটার রাস্তা, ৪০ কি.মি. বাঁধ ও ৪১টি ব্রিজ/কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৬৪ হাজার মানুষ ১৮৬টি আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছে। নলকূপ ক্ষতিগস্ত হয়েছে ৯ হাজার ৭৩৪টি। গতকাল সকাল থেকে হু-হু করে পানি নেমে যাচ্ছিল বিভিন্ন নদ-নদীর পানি। এরমধ্যে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি চিলমারী পয়েন্টে ১৪ সে.মি. কমে গিয়ে ১০৯ সে.মি. ও নুনখাওয়া পয়েন্টে ১১ সে.মি. কমে গিয়ে ৮৩ সে.মি. এবং ধরলা নদীর পানি ব্রিজ পয়েন্টে ১৭ সে.মি. কমে গিয়ে বিপদসীমার ৮৫ সে.মি. ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যা দুর্গতদের জন্য স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে ৮৫টি মেডিকেল টিম কাজ করছে। ৫টি ওয়াটার ট্রিটমেন্টের মাধ্যমে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। এছাড়াও পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ও স্যালাইন ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় বিতরণ করা হচ্ছে বলে কুড়িগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. এসএম আমিনুল ইসলাম জানিয়েছেন।
ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মো. হাফিজুর রহমান জানান, সকল বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এ পর্যন্ত জেলা প্রশাসন থেকে জেলা প্রশাসন থেকে এখন পর্যন্ত ৮শ’ মে.টন জিআর চাল, ১৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা, ৩ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার ও ঈদুল আজহা উপলক্ষে ৬ হাজার ৪২৮ টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
স্টাফ রিপোর্টার, মৌলভীবাজার থেকে জানান, পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল জাহিদ ফারুক এমপি বলেছেন, মনু নদীতে ১২৭ মিটারের গাইড ওয়াল দেয়া হয়েছে। যাতে শহরে পানি না ঢুকে। মনু নদী প্রকল্পে ১২শ’ কোটি টাকার বাজেট একনেকে পাঠানো হয়েছে। আশা করি এই প্রকল্পের কাজ খুব শিগগিরই শুরু হবে। কাজ শুরু হলে আপনারা কাজের তদারকি করবেন। তা হলে কাজের মানও ভালো হবে। আপনাদের সহযোগিতা পেলে আমাদের প্রকৌশলীরাও উজ্জীবিত থাকবেন। এই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বন্যার সময় আর নদীগর্ভে বাড়িঘর বিলীন হবে না। অতীতের সরকারের আমলে যে কষ্ট পেয়েছেন নদী ভাঙনের কারণে তা আর হবে না। গতকাল বিকালে মৌলভীবাজার শহরের চাঁদনীঘাট এলাকায় মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনের সামনে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে জেলা প্রশাসন ও মৌলভীবাজার পৌরসভার আয়োজনে চাল বিতরণকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপরোক্ত কথা বলেন। তিনি বলেন, আমরা বাংলাদেশের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে ঘুরে বেড়াই। প্রধানমন্ত্রী আমাদের বলেছেন, তোমরা বন্যাকবলিত এলাকায় যাও এবং যা যা করা দরকার তা তোমরা কর। মন্ত্রী বলেন ১০ বছর আগে কেমন ছিলেন আপনারা। তখন এখানকার অবস্থা আরো খারাপ ছিল, ভয়ে মন্ত্রী এমপিরা কেউ আসার সাহস করতো না। তার থেকে এখন ভালো থাকবেন। বাংলাদেশ বিশ্বে একটি শক্তিশালী অর্থনৈতিক দেশ হিসেবে পরিগণিত হয়েছে। ৫৭টি ভাতা প্রদান করা হচ্ছে। তার মধ্যে বিধবা ভাতা, মুক্তিযোদ্ধা ভাতাসহ বিভিন্ন ধরনের ভাতা প্রদান করা হচ্ছে। কাউন্সিলর স্বাগত কিশোর দাশের পরিচালনায় চাল বিতরণে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, মৌলভীবাজার-৩ আসনের সংসদ সদস্য নেছার আহমদ। এ সময় উপস্থিত ছিলেনÑ জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাহ জালাল, ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক আশরাফুল আলম খান, সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. কামাল হোসেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রনেন্দ্র শংকর চক্রবর্তী, জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক মিছবাহুর রহমান, জেলা প্রশাসনের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা বৃন্দসহ জেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। অনুষ্ঠানে মৌলভীবাজার মনু নদীর তীর সংলগ্ন দুর্যোগকবলিত এলাকা ও পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের ক্ষতিগ্রস্ত ৩৫০ পরিবারের মাঝে ১০ কেজি করে চাল বিতরণ করা হয়। পানিসম্পদ মন্ত্রী এ সময় মৌলভীবাজার মনু নদীর চাঁদনীঘাট এলাকার গাইড ওয়াল পরিদর্শন করেন। এর আগে মন্ত্রী কদমহাটা এলাকায় মনু নদীর বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status