এক্সক্লুসিভ

পরীক্ষায় পাস এ প্লাস পাইয়ে দেয়া তাদের হাতের নাগালে

স্টাফ রিপোর্টার

২০ জুলাই ২০১৯, শনিবার, ৯:০১ পূর্বাহ্ন

হঠাৎ করেই বদলে যাচ্ছিল তাদের জীবনযাপন। অথচ কিছুদিন আগেও বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য সাধারণ ছাত্রদের মতোই ছিল চলাফেরা। অল্প দিনে তাদের হাতে দেখা মেলে দামি ফোন, ক্যামেরা। ব্যবহার করেন ল্যাপটপ। মেস ছেড়ে ঘনিষ্ঠ কয়েক জন ওঠে ফ্ল্যাট বাসায়। খাবার খেতে প্রায়ই যায় বাইরে, অভিজাত রেস্টুরেন্টে। বেশিরভাগ সময় কাটে ইন্টারনেটে। বনে যায় বিপুল টাকার মালিক। অবশেষে পুলিশের গোয়েন্দা জালে আটক হয় তাদের দু’জন। তারা হচ্ছে- জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানের ছাত্র মুরাদ হাসান ও পার্থ সরকার। প্রকাশ পায় চাঞ্চল্যকর তথ্য। শিক্ষা বোর্ডের যাবতীয় কাজ তাদের হাতের নাগালে। টাকা দিলে হয় না এমন কোনো কাজ নেই। পরীক্ষায় অকৃতকার্য শিক্ষার্থীকে পাস করানো, কম মার্ক পাওয়া শিক্ষার্থীকে এ প্লাস থেকে গোল্ডেন এ প্লাস পাইয়ে দেয়া- সবই পারে তারা। তাদের দরবারে নির্ধারিত হাদিয়া দিয়ে যোগাযোগ করলেই মেলে পরীক্ষা সংক্রান্ত সমাধান। এজন্য পরিচিত জনদের কাছে জিনের বাদশা’র মতো ‘শিক্ষা বাবা’ নামেও পরিচিতি গড়ে ওঠে তাদের।

তদন্ত সংশ্লিষ্টদের ধারণা, মুরাদ ও পার্থ একটি ভয়ঙ্কর চক্রের সদস্য। এই চক্রে রয়েছে আরো অনেকে। গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে মুরাদ ও পার্থ জানিয়েছে প্রায় দেড় বছর ধরে এই অপকর্ম করে যাচ্ছে তারা। মূলত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ব্যবহার করেই এমনটি করছিল। ফেসবুকে বেনামে ফেইক আইডি খুলে প্রচারণা চালাতো। পরীক্ষায় পাস করিয়ে দেয়া, এ প্লাস ও গোল্ডেন এ প্লাস পাইয়ে দেয়ার বিজ্ঞাপন দিতো তারা। এসব ক্ষেত্রে আগ্রহী হয়ে ৫০ হাজার থেকে লাখ লাখ টাকা নিয়ে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা। অনেক ক্ষেত্রেই সরাসরি দেখা করা এড়িয়ে যেত মুরাদ ও পার্থ। টাকা নেয়া হতো একাধিক বিকাশ নম্বরে। কাজের আগে অর্ধেক টাকা নেয়া হতো, বাকি টাকা কাজ শেষ হলে। জিএম সাগর, রকি খান ও অভিজিৎ রায় নামে ফেইক আইডি দিয়ে প্রচারণা চালাতো তারা। ছিল ম্যাসেঞ্জারে বিভিন্ন গ্রুপ। এসব গ্রুপে পরীক্ষায় পাস করানো, প্রশ্নপত্র সংগ্রহ এসব বিষয় নিয়েই আলোচনা হতো।
গোয়েন্দা মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের এই দুই ছাত্রের এসব অপকর্মের তথ্য পেয়ে মাঠে নামেন কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম বিভাগের সদস্যরা। সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার সাইদ নাসিরুল্লাহ’র নেতৃত্বে প্রাথমিক তদন্তে সত্যতা পান তারা। অবস্থান নিশ্চিত হয়ে রেকি করা হয়। তারপরই গত ১৭ই জুলাই রাত ৮টার দিকে সূত্রাপুরের কলতাবাজারের ৮৯/৪ নাসিরুদ্দিন সরদার লেনের মোস্তাফিজুর রহমান শ্যামলের বাসার পঞ্চম তলায় অভিযান চালানো হয়। গ্রেপ্তার করা হয় মুরাদ ও পার্থকে। এ বিষয়ে ওই দিনই সূত্রাপুর থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা ও পাবলিক পরীক্ষা অপরাধ আইনে মামলা করা হয়েছে। কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম বিভাগের এএসআই আতিকুর রহমান বাদী হয়ে মামলাটি করেন। পর দিন বৃহস্পতিবার আদালত তাদের একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
জিজ্ঞাসাবাদে মুরাদ ও পার্থ নিজেদের অপরাধ স্বীকার করলেও চক্রের মূল হোতাদের সম্পর্কে বিভিন্ন প্রশ্ন এড়িয়ে যায়। তবে অল্প দিনে ঢাকায় বাড়ি-গাড়ির মালিক হতেই এসব অপকর্ম করছিল তারা। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা যোগাযোগ করতো তাদের সঙ্গে।
সিটিটিসি’র সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম বিভাগের সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার সাইদ নাসিরুল্লাহ বলেন, চক্রটি দীর্ঘদিন থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছিল। পরীক্ষায় পাস করিয়ে দেয়া, এ প্লাস পাইয়ে দেয়ার নামে প্রতারণা করে এই টাকা নিচ্ছিল তারা। চক্রের দুই জনকে আমরা গ্রেপ্তার করেছি। এই চক্রের সঙ্গে শিক্ষা বোর্ডের কেউ জড়িত কি-না তা তদন্ত করা হচ্ছে। তবে এই চক্রে যে বা যারাই জড়িত থাকুক তাদের আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানান তিনি।
গ্রেপ্তার মুরাদ হাসান টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলা সদরের মনিরুজ্জামানের পুত্র। একই এলাকার বাসিন্দা পার্থ সরকার। তার পিতা টাঙ্গাইল জেলা সদরের সাহাপাড়ার মনিন্দ্র সরকার।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status