প্রথম পাতা

জন্মভূমির বিরুদ্ধে জয়ের মহানায়ক

স্পোর্টস রিপোর্টার

১৬ জুলাই ২০১৯, মঙ্গলবার, ১০:১৩ পূর্বাহ্ন

২০১৬ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে টানা চার ছক্কা খেয়ে খলনায়ক বনেছিলেন বেন স্টোকস। এরপর নাইট ক্লাবে মারপিট করে নিষিদ্ধ হয়েছিলেন। ইতালির সাবেক তারকা ফুটবলার পাওলো রসিও ১৯৮২ বিশ্বকাপের আগে ম্যাচ পাতানো কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে নির্বাসনেই চলে গিয়েছিলেন রসি। সেখান থেকে ফিরে এসে ইতালিকে বিশ্বকাপ জিতিয়ে জাতীয় বীরে পরিণত হন রসি! নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে খুব বেশি দিন হয়নি স্টোকস জাতীয় দলে ফিরেছেন। পাওলো রসির মতোই লর্ডসে বিশ্বকাপের মঞ্চে স্টোকসই হলেন মূল নায়ক। ক’দিন আগেও নিন্দিত স্টোকসকে কিশোর তরুণদের রোল মডেল হিসেবে দেখছেন ইংল্যান্ডকে প্রথমবার বিশ্বকাপ জেতানো অধিনায়ক এউইন মরগান।

যদিও স্টোকসের কলঙ্কটা রসির মতো গুরুতর নয়। নির্বাসনে তিনিও গিয়েছিলেন, তবে রসির মতো অতটা দীর্ঘ নয়। তবে কলঙ্ক তো কলঙ্কই। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের সময় ব্রিস্টলে নাইটক্লাবের বাইরে মারামারির ঘটনায় গ্রেপ্তার করা হয় তাকে সতীর্থ অ্যালেক্স হেলসসহ। এরপর থানা-পুলিশ, আদালতে ছুটোছুটি করতে হয়েছে। দলে জায়গা হারিয়েছেন। নিষিদ্ধ হয়েছেন। পেতে হয়েছে শৃঙ্খলাভঙ্গের শাস্তি। ক্যারিয়ারই এক সময় মনে হচ্ছিল অনিশ্চিত। তার প্রতিভা, তার ম্যাচ জেতানোর ক্ষমতার কারণেই সুযোগ দেয়া হয়েছে বারবার। এই দফায়ও যেমন পেয়েছেন সুযোগ। এবার কাজে লাগাচ্ছেন দারুণভাবে। গোটা টুর্নামেন্টে তার ধারাবাহিক পারফরম্যান্স পূর্ণতা পেয়েছে যেন ফাইনালে। কে জানতো ফাইনালকেই কলঙ্ক মোচনের মঞ্চ হিসেবে বেছে নিবেন স্টোকস? শুরুতে ৮৪ রানের অপরাজিত ইনিংস খেললেন। এরপর সুপার ওভারেও ব্যাট হাতে নেমেছেন। শেষ পর্যন্ত তার বীরত্বের কারণেই ম্যান অব দ্য ফাইনাল। সেই পুরস্কার যখন নিতে এলেন, তখনো তার গলা কাঁপছে, ‘কী বলবো, ভাষাই খুঁজে পাচ্ছি না। চার বছর ধরে আমরা কঠোর পরিশ্রম করেছি শুধু এই মুহূর্তটার জন্য। সেটি আবার এমনভাবে হলো, আমার মনে হয় না ক্রিকেট ইতিহাসে এমন ম্যাচ আবার কখনো হবে।’

সত্যিই তাই। বিশ্বকাপ ক্রিকেট ইতিহাসে এমন ফাইনাল আগে কখনো দেখা যায়নি! আক্রমণ, পাল্টা-আক্রমণ। ক্লাইম্যাক্স-অ্যান্টি ক্লাইম্যাক্স। টাইয়ের ওপর টাই! চড়াই-উতরাই, নানা বাঁক পেরিয়ে তবেই জানা যায় চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড। বলতে গেলে প্রায় একাই নিউজিল্যান্ডকে হঁটিয়ে ইংল্যান্ডকে বিশ্বকাপ পাইয়ে দিয়েছেন বেন স্টোকস। অথচ ইংল্যান্ডের বিশ্বকাপের জয়ের এই নায়ক এমন নৈপুণ্য দেখালেন নিজের জন্মভূমির বিপক্ষে। বেন স্টোকসের জন্ম আর শৈশব কেটেছে নিউজিল্যান্ডেই। সুপার ওভারে বিশ্বকাপ জেতার পর ইংল্যান্ডের এই মুহূর্তের জাতীয় হিরোর পেছনের গল্প আবার সামনে এসেছে। স্টোকসের বাবা জেরার্ড জেড জেমস স্টোকস ছিলেন নিউজিল্যান্ড রাগবি দলের খেলোয়াড়। ১৯৮০ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত তিনি নিউজিল্যান্ডকে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ক্রাইস্টচার্চে জন্ম নিয়ে ১২ বছর বয়স পর্যন্ত স্টোকসও ছিলেন নিউজিল্যান্ডে। পরে বাবা-মার সঙ্গেই চলে আসেন যুক্তরাজ্যে। এখানেই ক্লাব পর্যায়ে তার ক্রিকেট ক্যারিয়ারেরও শুরু। ২০১৩ সালে স্টোকসের বাবা-মা নিউজিল্যান্ড ফিরে গেলেও স্টোকস থেকে যান ইংল্যান্ডেই। ম্যাচ শেষে সে কথা উঠতেই কিছুটা আবেগপ্রবণ হয়ে পড়লেন তারকা এই অলরাউন্ডার, ‘দুর্দান্ত দল এই নিউজিল্যান্ড। ওদের বিরুদ্ধে এই ফাইনাল ম্যাচটা আমার জীবনে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। নিউজিল্যান্ড দলের বেশির ভাগ সদস্যই আমার বন্ধু। ওদের জন্য খারাপ লাগছে। আমি ওদের অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসনকে বলে এলাম, আমি সারা জীবনের জন্য ওর কাছে ক্ষমাপ্রার্থী হয়ে থাকবো। শেষ ওভারে যখন চার মারলাম, তখনই কেনের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিই।’

তবে এত দূর কি আসা হতো স্টোকসের। ২০১৬ সালের ৩রা এপ্রিল। সেদিন কলকাতা ইডেন গার্ডেনেই তো ক্যারিয়ারের ইতি হয়ে যেতে পারত। টি- টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ৬ বলে চাই ১৯। স্টোকস কিনা সেদিন কার্লোস ব্র্যাথওয়েটের হাতে প্রথম ৪ বলেই খেলেন ৪ ছক্কা। কিন্তু অমন মার খাওয়ার, ম্যাচ খুইয়ে দেওয়ার ট্রমা বেশিদিন থাকেনি। ইংলিশ অধিনায়কের ধারণা, তার জায়গায় অন্য কেউ হলে থেমে যেতে পারত ক্যারিয়ার, স্টোকস বিশেষ কেউ বলেই ফিরে এসেছেন এবং বিশ্বজয় করেছেন, ‘বেনের কথা অনেকবারই আমি বলছি। সেদিন কলকাতায় যা হয়েছিল ওখানে অন্য কেউ থাকলে ক্যারিয়ারই শেষ হয়ে যেত। আমরা জানি অনেকবারই সে আমাদের একা টেনেছে। ও অবিশ্বাস্য এক ক্রিকেটার। এমন খেলার জন্য আমি ধন্যবাদ দিতে চাই তাকে।’
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status