শেষের পাতা
২৩ জেলায় বন্যা
প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা
স্টাফ রিপোর্টার ও বাংলারজমিন ডেস্ক
১৬ জুলাই ২০১৯, মঙ্গলবার, ১০:০২ পূর্বাহ্ন
ভারি বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। ইতিমধ্যে দেশের অন্তত ২৩টি জেলার বিভিন্ন অঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে লাখো মানুষ। ভেসে গেছে মাছের ঘের, ফসলি জমি। বাড়িঘরে পানি উঠে যাওয়ায় সব ছেড়ে গবাদি পশু নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন উঁচু বাঁধে, কেউবা আশ্রয় নিয়েছেন আশ্রয়কেন্দ্র ও স্কুল-কলেজ বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভবনে।
প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য অনুযায়ী গতকাল পর্যন্ত কিশোরগঞ্জ, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, সিরাজগঞ্জ, নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ, সিলেট, ফেনী, গাইবান্ধা, বান্দরবান, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, মানিকগঞ্জ, নীলফামারী, জামালপুর, হবিগঞ্জ, ভোলা, রংপুর, মৌলভীবাজার, খাগড়াছড়ি, বগুড়া, নারায়ণগঞ্জ ও পঞ্চগড় জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পানির নিচে তলিয়ে গেছে। নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বেশি। কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া পৌর এলাকার কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকা, অপরিকল্পিত বাসাবাড়ি নির্মাণ ও পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ করে ফেলায় এ জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এতে বাড়িঘর, স্কুল-কলেজের মাঠ, ফসলী জমি, আমন ধানের বীজতলা, পানের বরজ ও ফিশারিসহ বিভিন্ন রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। গাইবান্ধায় তিস্তা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, ঘাঘটসহ সব নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে জেলা সদরসহ ফুলছড়ি, সাঘাটা, সুন্দরগঞ্জের চরসহ অনেক এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন লাখো মানুষ। প্রবল পানির চাপে সকালে ব্রহ্মপুত্র নদের গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার কাতলামারী বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের প্রায় ৩০০ ফিট ও একই এলাকায় অন্য একটি পয়েন্টে ৫০ ফিট ধসে প্রায় শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুরের ব্রাহ্মণগাতী, আড়কান্দি, হাটপাচিল এবং কাজিপুর উপজেলার নাটুয়ারপাড়া, বাঐখোলা পাটাগ্রামসহ বেশ কয়েকটি গ্রামে নদীভাঙন দেখা দিয়েছে। এসব এলাকার বেশকিছু বাড়িঘর নদীগর্ভে চলে গেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে নিম্নাঞ্চলের মানুষ। বন্ধ হয়ে গেছে এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। ভেসে গেছে অসংখ্য পুকুরের মাছ। অনেকে বাঁধের পাশে আশ্রয় নিয়েছে। সুনামগঞ্জের সদরসহ দিরাই ও শাল্লা উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। দু’টি উপজেলার ১৩টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা এলাকার প্রায় ২ হাজারেরও বেশি ঘর-বাড়ি এবং কিছু পাকা ও আধাপাকা রাস্তা বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। ৩৫টি বিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে নেয়া হয়েছে। তবে পানিবন্দি মানুষগুলো নিজ গৃহ ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে আসছেন না। রংপুরে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে যেন ভরা যৌবন ফিরে পেয়েছে। সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলার সাদীপুর, পশ্চিম পৈলনপুর, বুরুঙ্গা, উমরপুর ও উছমানপুর ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকা এবং গোয়ালাবাজার, তাজপুর ও দয়ামীর ইউনিয়নের কিছু এলাকার বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন বন্যাকবলিত এলাকার প্রায় ২০ হাজার মানুষ। গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার বন্যাকবলিত এলাকায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে পানি ঢুকে পড়েছে। নদীবেষ্টিত চরাঞ্চল সহ বন্যাকবলিত গ্রামগুলোর ৪৩ টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। গত শনিবার থেকে যমুনার পানি অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে। উপজেলার ৪ ইউনিয়নের ২৫ টি গ্রামের প্রায় ১৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। কুড়িগ্রামের সদর উপজেলাসহ নাগেশ্বরীতে কয়েকদিনের টানা বৃষ্টি আর উজানের পাহাড়ি ঢলে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে বন্যার পানি। নাগেশ্বরী উপজেলার গঙ্গাধর, শংকোষ, দুধকুমর, ব্রহ্মপুত্রসহ সকল নদ-নদীর পানি বিপদসীমা ছাড়িয়ে ঢুকে যাচ্ছে নদী তীরবর্তী এলাকাসহ লোকালয় পর্যন্ত। সদর উপজেলার মোগলবাসা ইউনিয়নের কিশামত মালভাঙ্গা, উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের শেখ পালানু আশ্রয়ন কেন্দ্র এবং চিলমারী উপজেলার চর সাকাহাতি আশ্রয়ন কেন্দ্রে ২ হাজার পরিবারকে ১৫ কেজি করে চাল বিতরণ করা হয়েছে। চিলমারীর ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় আরো নতুন করে ২৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় এ পর্যন্ত পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন প্রায় ৫০ হাজার মানুষ। সেই সঙ্গে ব্রহ্মপুত্রের তোড়ের মুখে চিলমারী রক্ষা বাঁধটিও রয়েছে হুমকির মুখে। তা রক্ষায় এলাকার মানুষের সহায়তায় চেষ্টাও চালিয়ে যাচ্ছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। অন্যদিকে নালিতাবাড়ীতে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি, হুমকির মুখে শহর রক্ষা বাঁধ। পানিতে তলিয়ে গেছে ভাটি অঞ্চলের ৪টি ইউনিয়নের ৬০টিরও অধিক গ্রাম। মৌলভীবাজারের কুশিয়ারা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে ভাঙন শুরু হয়েছে প্রতিরক্ষা বাঁধে। শনিবার বিকালে থেকে অল্প অল্প করে ভাঙন শুরু হয় খলিলপুর ইউনিয়নের হামরকোনা এলাকায়। ওইদিন মধ্যরাতেই ওই ভাঙন বড় হয়ে প্রায় ৩শ’ ফুট বাঁধ ভেঙে পানি প্রবেশ করে একাধিক গ্রামে। রোববার বিকাল খলিলপুর ইউনিয়নের ৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়। আকস্মিক ওই বানের পানিতে ভেসে যায় হামরকোনা, ব্রাহ্মণগ্রাম, দাউদপুর, শেরপুর, আলীপুর গ্রাম। ঘরবাড়ি, ক্ষেতকৃষি, মৎস্যখামার, স্কুল-মাদ্রাসা মক্তব মসজিদ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান সবই গ্রাস করেছে পানি। হঠাৎ বন্যার কবলে পড়ে ওই গ্রামগুলোর প্রায় ১০-১৫ হাজার বাসিন্দা সব হারিয়ে এখন নিঃস্ব। ঘর বাড়ি ছেড়ে তারা অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন। যমুনা নদীর পানি অব্যাহতভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় বগুড়ার নদী তীরবর্তী সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও ধুনট উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নের ৯৮টি গ্রাম বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। ফলে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ১৬ হাজার ৪৪০ পরিবারের ৬৬ হাজার ৮শ’ জন মানুষ। বন্যায় আক্রান্ত এই পরিবারগুলোর মধ্যে ২ হাজার ৪৯ পরিবার আশ্রয় নিয়েছে বিভিন্ন নিরাপদ স্থানে। বন্যার পানিতে শুধুমাত্র সারিয়াকান্দি উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের ২শ’ ২২টি পুকুরের (২৫.২৯ হেক্টর) ৭৩.৯৭ মে. টন মাছ ভেসে গেছে। যার আনুমানিক মূল্য ১ কোটি ৭২ লাখ টাকা।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, গতকাল পর্যন্ত সারা দেশের ৯৩ টি পর্যবেক্ষণাধীন পানি সমতল স্টেশনের মধ্যে ৬৮ টিতে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এর মধ্যে ২৬টি পয়েন্টে পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। দেওয়ানগঞ্জ স্টেশনে ১৫০ মিলিমিটার, ভৈরব বাজার ১৩০, গাইবান্ধায় ৯৬, দুর্গাপুর ১৩৫, নরসিংদী ১০৯, জামালপুর ৯২, নাকুয়াগাঁও ১৩০, কমলগঞ্জ ১০৩ ও জাফলং ৯১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের উত্তর, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন ভারতের আসাম-মেঘালয় প্রদেশসমূহের বিস্তৃত এলাকায় আগামী ২৪ ঘণ্টায় মাঝারি এবং কোথাও কোথাও অতি ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া, দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল সংলগ্ন ভারতের বিহার এবং নেপালে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। আগামী ৭২ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র-যমুনা ও গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে। কুড়িগ্রাম, জামালপুর, গাইবান্ধা, বগুড়া ও সিরাজগঞ্জ জেলায় বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হতে পারে। অন্যদিকে নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ ও সিলেটে বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকতে পারে। লালমনিরহাট, চট্টগ্রাম ও বান্দরবানে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে।
প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য অনুযায়ী গতকাল পর্যন্ত কিশোরগঞ্জ, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, সিরাজগঞ্জ, নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ, সিলেট, ফেনী, গাইবান্ধা, বান্দরবান, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, মানিকগঞ্জ, নীলফামারী, জামালপুর, হবিগঞ্জ, ভোলা, রংপুর, মৌলভীবাজার, খাগড়াছড়ি, বগুড়া, নারায়ণগঞ্জ ও পঞ্চগড় জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পানির নিচে তলিয়ে গেছে। নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বেশি। কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া পৌর এলাকার কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকা, অপরিকল্পিত বাসাবাড়ি নির্মাণ ও পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ করে ফেলায় এ জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এতে বাড়িঘর, স্কুল-কলেজের মাঠ, ফসলী জমি, আমন ধানের বীজতলা, পানের বরজ ও ফিশারিসহ বিভিন্ন রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। গাইবান্ধায় তিস্তা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, ঘাঘটসহ সব নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে জেলা সদরসহ ফুলছড়ি, সাঘাটা, সুন্দরগঞ্জের চরসহ অনেক এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন লাখো মানুষ। প্রবল পানির চাপে সকালে ব্রহ্মপুত্র নদের গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার কাতলামারী বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের প্রায় ৩০০ ফিট ও একই এলাকায় অন্য একটি পয়েন্টে ৫০ ফিট ধসে প্রায় শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুরের ব্রাহ্মণগাতী, আড়কান্দি, হাটপাচিল এবং কাজিপুর উপজেলার নাটুয়ারপাড়া, বাঐখোলা পাটাগ্রামসহ বেশ কয়েকটি গ্রামে নদীভাঙন দেখা দিয়েছে। এসব এলাকার বেশকিছু বাড়িঘর নদীগর্ভে চলে গেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে নিম্নাঞ্চলের মানুষ। বন্ধ হয়ে গেছে এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। ভেসে গেছে অসংখ্য পুকুরের মাছ। অনেকে বাঁধের পাশে আশ্রয় নিয়েছে। সুনামগঞ্জের সদরসহ দিরাই ও শাল্লা উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। দু’টি উপজেলার ১৩টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা এলাকার প্রায় ২ হাজারেরও বেশি ঘর-বাড়ি এবং কিছু পাকা ও আধাপাকা রাস্তা বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। ৩৫টি বিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে নেয়া হয়েছে। তবে পানিবন্দি মানুষগুলো নিজ গৃহ ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে আসছেন না। রংপুরে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে যেন ভরা যৌবন ফিরে পেয়েছে। সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলার সাদীপুর, পশ্চিম পৈলনপুর, বুরুঙ্গা, উমরপুর ও উছমানপুর ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকা এবং গোয়ালাবাজার, তাজপুর ও দয়ামীর ইউনিয়নের কিছু এলাকার বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন বন্যাকবলিত এলাকার প্রায় ২০ হাজার মানুষ। গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার বন্যাকবলিত এলাকায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে পানি ঢুকে পড়েছে। নদীবেষ্টিত চরাঞ্চল সহ বন্যাকবলিত গ্রামগুলোর ৪৩ টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। গত শনিবার থেকে যমুনার পানি অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে। উপজেলার ৪ ইউনিয়নের ২৫ টি গ্রামের প্রায় ১৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। কুড়িগ্রামের সদর উপজেলাসহ নাগেশ্বরীতে কয়েকদিনের টানা বৃষ্টি আর উজানের পাহাড়ি ঢলে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে বন্যার পানি। নাগেশ্বরী উপজেলার গঙ্গাধর, শংকোষ, দুধকুমর, ব্রহ্মপুত্রসহ সকল নদ-নদীর পানি বিপদসীমা ছাড়িয়ে ঢুকে যাচ্ছে নদী তীরবর্তী এলাকাসহ লোকালয় পর্যন্ত। সদর উপজেলার মোগলবাসা ইউনিয়নের কিশামত মালভাঙ্গা, উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের শেখ পালানু আশ্রয়ন কেন্দ্র এবং চিলমারী উপজেলার চর সাকাহাতি আশ্রয়ন কেন্দ্রে ২ হাজার পরিবারকে ১৫ কেজি করে চাল বিতরণ করা হয়েছে। চিলমারীর ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় আরো নতুন করে ২৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় এ পর্যন্ত পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন প্রায় ৫০ হাজার মানুষ। সেই সঙ্গে ব্রহ্মপুত্রের তোড়ের মুখে চিলমারী রক্ষা বাঁধটিও রয়েছে হুমকির মুখে। তা রক্ষায় এলাকার মানুষের সহায়তায় চেষ্টাও চালিয়ে যাচ্ছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। অন্যদিকে নালিতাবাড়ীতে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি, হুমকির মুখে শহর রক্ষা বাঁধ। পানিতে তলিয়ে গেছে ভাটি অঞ্চলের ৪টি ইউনিয়নের ৬০টিরও অধিক গ্রাম। মৌলভীবাজারের কুশিয়ারা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে ভাঙন শুরু হয়েছে প্রতিরক্ষা বাঁধে। শনিবার বিকালে থেকে অল্প অল্প করে ভাঙন শুরু হয় খলিলপুর ইউনিয়নের হামরকোনা এলাকায়। ওইদিন মধ্যরাতেই ওই ভাঙন বড় হয়ে প্রায় ৩শ’ ফুট বাঁধ ভেঙে পানি প্রবেশ করে একাধিক গ্রামে। রোববার বিকাল খলিলপুর ইউনিয়নের ৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়। আকস্মিক ওই বানের পানিতে ভেসে যায় হামরকোনা, ব্রাহ্মণগ্রাম, দাউদপুর, শেরপুর, আলীপুর গ্রাম। ঘরবাড়ি, ক্ষেতকৃষি, মৎস্যখামার, স্কুল-মাদ্রাসা মক্তব মসজিদ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান সবই গ্রাস করেছে পানি। হঠাৎ বন্যার কবলে পড়ে ওই গ্রামগুলোর প্রায় ১০-১৫ হাজার বাসিন্দা সব হারিয়ে এখন নিঃস্ব। ঘর বাড়ি ছেড়ে তারা অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন। যমুনা নদীর পানি অব্যাহতভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় বগুড়ার নদী তীরবর্তী সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও ধুনট উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নের ৯৮টি গ্রাম বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। ফলে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ১৬ হাজার ৪৪০ পরিবারের ৬৬ হাজার ৮শ’ জন মানুষ। বন্যায় আক্রান্ত এই পরিবারগুলোর মধ্যে ২ হাজার ৪৯ পরিবার আশ্রয় নিয়েছে বিভিন্ন নিরাপদ স্থানে। বন্যার পানিতে শুধুমাত্র সারিয়াকান্দি উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের ২শ’ ২২টি পুকুরের (২৫.২৯ হেক্টর) ৭৩.৯৭ মে. টন মাছ ভেসে গেছে। যার আনুমানিক মূল্য ১ কোটি ৭২ লাখ টাকা।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, গতকাল পর্যন্ত সারা দেশের ৯৩ টি পর্যবেক্ষণাধীন পানি সমতল স্টেশনের মধ্যে ৬৮ টিতে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এর মধ্যে ২৬টি পয়েন্টে পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। দেওয়ানগঞ্জ স্টেশনে ১৫০ মিলিমিটার, ভৈরব বাজার ১৩০, গাইবান্ধায় ৯৬, দুর্গাপুর ১৩৫, নরসিংদী ১০৯, জামালপুর ৯২, নাকুয়াগাঁও ১৩০, কমলগঞ্জ ১০৩ ও জাফলং ৯১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের উত্তর, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন ভারতের আসাম-মেঘালয় প্রদেশসমূহের বিস্তৃত এলাকায় আগামী ২৪ ঘণ্টায় মাঝারি এবং কোথাও কোথাও অতি ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া, দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল সংলগ্ন ভারতের বিহার এবং নেপালে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। আগামী ৭২ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র-যমুনা ও গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে। কুড়িগ্রাম, জামালপুর, গাইবান্ধা, বগুড়া ও সিরাজগঞ্জ জেলায় বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হতে পারে। অন্যদিকে নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ ও সিলেটে বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকতে পারে। লালমনিরহাট, চট্টগ্রাম ও বান্দরবানে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে।