প্রথম পাতা

ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছে

১৪ দিনে আক্রান্ত ২১৬৪

ফরিদ উদ্দিন আহমেদ

১৫ জুলাই ২০১৯, সোমবার, ৯:৪৬ পূর্বাহ্ন

রাজধানীতে ঘরে ঘরে ছড়িয়ে পড়েছে ডেঙ্গু । দিন দিন ডেঙ্গু পরিস্থিতি আরো জটিল রূপ ধারণ করছে। রাজধানীর বাইর থেকেও ডেঙ্গু রোগীর খবর আসছে। ঘণ্টায় ছয়জনের বেশি ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় ১৫২ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত  হয়ে হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছেন। তবে ডেঙ্গু রোগী নিয়ে সরকার যে হিসাব দিচ্ছে, বেসরকারি হিসাবে এই সংখ্যা আরও কয়েকগুণ বেশি বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। চলতি মাসে গড়ে প্রতিদিন ১৫৪ জনের উপরে ডেঙ্গু রোগী হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ভর্তি হয়েছেন। ১৪ই জুলাই পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২ হাজার ১৬৪ জন। জুন মাসে ১৭৫৯ জন ডেঙ্গু জ্বরের রোগী চিহ্নিত হয়েছেন। এবছর চিকিৎসকসহ এই পর্যন্ত তিন জন মারা গেছেন। তবে এই সংখ্যা আরও বেশি হবে বলে বিভিন্ন সূত্র বলছে। গতকাল পর্যন্ত এই বছর ৪ হাজার ২৪৭ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন। এখনও হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৯৩৮ জন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৩ হাজার ৩০৬ জন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার অ্যান্ড কন্ট্রোল রুম সূত্র এই তথ্য জানিয়েছে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এতদিন শুধুমাত্র রাজধানীতে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেলেও এখন ঢাকা বিভাগের অন্যান্য জেলা ও চট্টগ্রাম জেলাতেও ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীরা হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ ডেঙ্গুর এই মৌসুমে জ্বর হলে অবহেলা না করে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়ার তাগিদ দিয়েছেন। তিনি বলেন, রোগীদের জন্য বলব, আমরা জ্বর হলে অনেক সময় সাধারণ জ্বর মনে করি। ডেঙ্গু জ্বরও রোগীর কাছে সাধারণ জ্বর বলেই মনে হয়। যে কোন জ্বরকে তারা যেন সাধারণ জ্বর মনে না করেন, অবহেলা না করেন। চিকিৎসকের পরামর্শ নেন, ডেঙ্গু পরীক্ষা করেন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত বছরের তুলনায় এবার আগেই ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী আসছেন হাসপাতালে। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, চলতি বছর হঠাৎ হঠাৎ বৃষ্টি হওয়ায় ডেঙ্গু বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জুন, জুলাই, আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে ডেঙ্গুর মশার উপদ্রব বাড়ে। কিন্তু এবার যেহেতু আগেই বৃষ্টি হয়েছে তাই মশা উপদ্রব আগ থেকেই দেখা গেছে। থেমে থেমে বৃষ্টির কারণে বিভিন্ন স্থানে পানি জমে থাকে। জমে থাকা বৃষ্টির পানি থাকলে মশার প্রজনন বাড়ে। তাই বাড়ি বা বাড়ির আঙিনার কোথাও যেন পরিষ্কার পানি জমে না থাকে সে ব্যাপারে সচেতনও সতর্ক দৃষ্টি রাখার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, ডেঙ্গু আক্রান্তদের সম্পূর্ণ ভালো না হওয়া পর্যন্ত বিশ্রামে থাকতে হবে। এ ছাড়া যথেষ্ট পরিমাণে পানি, শরবত ও অন্যান্য তরল খাবার খেতে হবে। জ্বর কমানোর জন্য শুধু প্যারাসিটামল জাতীয় ব্যথার ওষুধ খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা। তবে অ্যাসপিরিন বা ডাইক্লোফেনাক জাতীয় ব্যথার ওষুধ খাওয়া যাবে না। এতে রক্তক্ষরণের ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। ৪ থেকে ৫ দিন জ্বর থাকলে ঘরে বসে না থেকে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

রাজধানীর ধানমন্ডি সেন্টাল হাসপাতালে ৭৪ জন, ইবনে সিনা হাসপাতালে ২০ জন, বাংলাদেশ মেডিকেল হাসপাতালে ৪৭ জন, স্কয়ার হাসপাতালে ৫১ জন, ইসলামী হাসপাতাল কাকরাইলে ৫৪ জন, আজগর আলী হাসপাতালে ২৪ জন, সালাউদ্দিনে ৩০ জন, পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১১ জন, ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ২৭ জন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৯৮ জন, মিটফোর্ড হাসপাতালে ৯৬ জন, ঢাকা শিশু হাসপাতালে ২০ জন, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ৮১ জন, বারডেম হাসপাতালে ৬ জন, মুগদা জেনারেল হাসপাতালে ৫০ জন, হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালে ৫১ জন, বিজিবি হাসপাতালে ১৩ জন ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। এছাড়া ঢাকা শহর ব্যতীত ১৫জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছে হাসপাতালে। কন্ট্রোল রুম সূত্র জানা গেছে, জানুয়ারিতে ৩৮ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ফের্রুয়ারিতে এই সংখ্যা ছিল ১৮ জন, মার্চে ১৭ জন, এপ্রিলে ৫৮ জন, মে মাসে ১৯৩ জন, জুন  মাসে ১৭৫৯ জন এবং জুলাই মাসে এ পর্যন্ত ২১৬৪ জন ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তবে ৯৩৮ জন ছাড়া অন্য রোগীরা সুস্থ হয়ে বাড়ি চলে গেছেন।

এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) মেডিসিন অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুলাহ বলেন, মে জুন থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত ডেঙ্গু জ্বর হয়ে থাকে। শীতের সময়ে কমে আসবে। তিনি বলেন, এই সময়ে জ্বর বা গায়ে ব্যথা হলে ডেঙ্গুর কথা মাথায় রাখতে হবে। সাধারণ ডেঙ্গু জ্বর তেমন মারাত্মক রোগ নয়। ডেঙ্গু জ্বরের রোগীর যখন বাহ্যিক বা অভ্যন্তরীণ রক্তপাতের প্রমাণ মেলে (যেমন মাড়ি বা নাক থেকে রক্তক্ষরণ, মলের সঙ্গে রক্তক্ষরণ ইত্যাদি) তখন একে ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার বলা হয়। অধিক রক্তক্ষরণের ফলে শরীরের জলীয় উপাদান কমে যায়। ডেঙ্গু জ্বর হলে প্রচুর পানি পান করতে হবে ও পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে। জ্বর বাড়লে প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ অথবা আরো বেশি জ্বর হলে তা কমিয়ে রাখার জন্য সাপোজিটরি ব্যবহার করতে হবে।

ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ও করণীয়: জ্বর ১০৪ থেকে ১০৫ ডিগ্রি ফা., মাথা ব্যথা,  চোখের পিছনে ও হাড়ে প্রচণ্ড ব্যথা, চামড়ায় লালচে ছোয়া (র‌্যাশ) থাকে। রোগীকে প্রচুর পরিমাণে তরল খাবার খাওয়াতে হবে এবং মশারীর ভিতরে বিশ্রাম নিতে হবে। জ্বরে শুধু শুধুমাত্র প্যারাসিটামল  ব্যবহার করা যেতে পারে। কোনো অবস্থাই এসপিরিন, এনএসএআইডি জাতীয় ওষুধ সেবন করা যাবে না। হেমোরেজিক ডেঙ্গু জ্বর ও  ডেঙ্গু শক্‌সিনড্রোম হলে দাঁতের মাড়ি, নাক, মুখ ও পায়খানার রাস্তা দিয়ে রক্তপাত হতে পারে। সেক্ষেত্রে রোগীকে দ্রুত নিকটস্থ হাসপাতালে নিতে হবে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status