শেষের পাতা

বাঁধ নেই, সুরমা উপচে পানি সিলেট নগরীতেও

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে

১৫ জুলাই ২০১৯, সোমবার, ৯:২৬ পূর্বাহ্ন

বন্যার পানি আঘাত হেনেছে সিলেট নগরেও। ডুবে গেছে সুরমা তীরবর্তী নগর এলাকা। অভিজাত এলাকা উপশহরও পানির নিচে। অন্তত ১৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি। গত দুই দিন ধরে তারা ঘর থেকে বের হতে পারছেন না। ত্রাণও পৌঁছে না আক্রান্তদের ঘরে। প্রায় বছরই সুরমার পানি বিপদসীমা অতিক্রম করলেই ডুবে যায় সিলেট নগর। এবারো একই দৃশ্য। শুক্রবার থেকে সিলেটে সুরমার পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। গতকাল রোববারও ছিল বিপদসীমার প্রায় ৫০ সেন্টিমিটার উপরে। কিন্তু প্রায় বছরই বন্যায় নগর আক্রান্ত হলে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না। গতকাল মানবজমিনের সঙ্গে আলাপকালে সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী দুই বছরের সময় চাইলেন।

সিলেটকে বন্যা মুক্ত করতে হলে প্রয়োজন নগর রক্ষা বাঁধ। এই বাঁধ নিয়ে কথা বলেন সবাই। কিন্তু কেউ সেদিকে মনোযোগ দেন না। বদরউদ্দিন আহমদ কামরান সিলেটের মেয়র থাকাকালে ডুবে যেত নগরীর দক্ষিণ অংশের ঝালোপাড়া সহ বিস্তীর্ণ এলাকা। সুরমার পানি উপছালেই ঝালোপাড়া তলিয়ে যেত। ওই সময় প্রকল্প গ্রহণ করে ওই এলাকা উঁচু বাঁধ সহ ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হয়। বাণের পানি থেকে রক্ষা পেয়েছে ঝালোপাড়াসহ কয়েকটি এলাকা। ঝালোপাড়ার ঠিক উল্টো দিকে সুরমার তীরে কালিঘাট। ওই এলাকায় বাঁধ নির্মাণ না করলে বন্যামুক্ত হবে না সিলেট নগর। সিটি কর্মকর্তাদের অভিযোগ- স্থানীয় ব্যবসায়ীদের অসহযোগিতার কারণে স্থাপনা উচ্ছেদ করা যায় না। এ কারণে ওই এলাকায় ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা যাচ্ছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানিয়েছে- উজানের ঢল অব্যাহত থাকার কারণে সিলেট নগরীতে নদী উপচে পানি ঢুকছে। বিপদসীমার ওপর দিয়ে সুরমার পানি প্রবাহিত হচ্ছিল। গতকাল সিলেট নগরীর ২২ ও ২৪নং ওয়ার্ড এলাকা ঘুরে দেখা গেছে- সুরমা নদীর পানি উপচে বিস্তীর্ণ এলাকা তলিয়ে গেছে। বিশেষ করে নিম্ন এলাকার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।

উপশহরের ই, ডি ব্লক অর্ধেকের বেশি পানির নিচে তলিয়ে গেছে। পাশাপাশি তেররতন, সৈয়াদীবাগ, গোলাপবাগ সহ এলাকা সম্পূর্ণ পানির নিচে রয়েছে। উপশহরে পানি ঢুকে পড়ায় স্যুয়ারেজের পানি মিশে পরিবেশ বিষাক্ত করে তোলেছে। বন্যার পানি আঘাত হেনেছে যতরপুর পর্যন্ত। অনাহারে অর্ধাহারে বসবাস করছে পানিবন্দি মানুষ। উপশহর এলাকার রহিমা বেগম, তেররতন এলাকার কুদ্দুস মিয়া সহ কয়েকজন বন্যা দুর্গত মানুষ জানিয়েছেন- বৃহস্পতিবার রাত থেকে তারা পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। পানির কারণে তারা ঘর থেকে বের হতে পারছেন না। ত্রাণও তাদের কাছে পৌঁছছে না। গতকাল সিলেটের সাবেক মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ নগরীর যতরপুর এলাকায় ত্রাণ বিতরণ করেন। ওই ত্রাণ প্রয়োজনের তোলনায় খুবই নগণ্য বলে জানিয়েছেন বন্যার্তরা। ২৪নং ওয়ার্ডের কয়েকটি এলাকায় প্রায় ১০ হাজার বাসিন্দা পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় কাউন্সিলর সোহেল আহমদ। তিনি জানিয়েছেন- তার এলাকা তেররতন, সৈয়দানীবাগ এলাকায় এখন জলাবদ্ধার পানি নয়।

সব বন্যার পানি। নদী উপচে খাল দিয়ে পানি ঢুকে এসব এলাকা তলিয়ে গেছে। তিনি জানান- নদী তীরবর্তী কয়েকটি এলাকাকে বন্যামুক্ত করতে হলে কুশিঘাট থেকে নতুন ব্রিজের মুখ পর্যন্ত প্রায় ৩ কিলোমিটার এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রক বাঁধ নির্মাণ করা প্রয়োজন। এখানে বাঁধের পাশাপাশি ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা প্রয়োজন। বাঁধ নির্মাণ না করলে উপশহর ও পার্শ্ববর্তী এলাকাকে বন্যামুক্ত করা সম্ভব নয়। হলদি ছড়া দিয়ে সুরমা নদী থেকে পানি ঢোকার কারণে ছড়ার আশপাশের এলাকা তলিয়ে গেছে বলে জানান তিনি। নদী উপচে পানি ঢুকে উপশহর তলিয়ে গেছে বলে জানান ২২নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর অ্যাডভোকেট সালেহ আহমদ সেলিমও। তিনি গতকাল জানিয়েছেন- তার এলাকার গোয়ালীছড়া দিয়ে শাহী ঈদগাহ, মীরাবাজারসহ কয়েকটি এলাকার পানি নামে। নদী উপচে আর পানি নামার কোনো সুযোগ নেই। এ কারণে পানি বসতি এলাকায় আঘাত হেনেছে। তিনি বলেন- যতরপুর, ছড়ারপাড় হয়ে যে খাল নদীতে প্রবেশ করেছে, সেই খালকেও দখলমুক্ত করতে হবে। শহর রক্ষা বাঁধ ও ওয়াকওয়ে নিয়ে ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছে সিলেট সিটি করপোরেশন। কালিঘাট, কাজিরবাজার, শেখঘাট সহ কয়েকটি এলাকায় নদী তীরবর্তী স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। গোটা সিলেট নগরকে বন্যার পানিমুক্ত করতে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র দুই বছরের সময় চান। জানিয়েছেন- এখন ছড়া, ড্রেন ও খালের কাজ চলছে। এই কাজগুলো শেষ করার পর সুরমা নদীর তীরবর্তী এলাকায় বাঁধ নির্মাণ করে ওয়াকওয়ে করা হবে। এই কাজ শেষ হলে সিলেট নগর আর পানিতে ডুববে না বলে জানান তিনি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status