প্রথম পাতা

ইংলিশ না কিউই

ইশতিয়াক পারভেজ, লর্ডস (লন্ডন) থেকে

১৪ জুলাই ২০১৯, রবিবার, ৯:৪৩ পূর্বাহ্ন

পাশে বসা এক ইংলিশ ভদ্রলোকের প্রশ্ন-‘ফাইনাল কাল? ওহ ইংল্যান্ডের জেতা উচিত।’ ক্রিকেট ফাইনাল নিয়ে তার এই কথায় কেউ কান দিলেন না। ট্রেনে বসে নীরবে বই পড়ে যাচ্ছেন ইংলিশরা। নিজের দেশের প্রথম বিশ্বকাপ জয়ের সুযোগ এসেছে। কিন্তু লন্ডনের শহরে নেই কোনো উন্মাদনা। অথচ এই বিশ্বকাপ ফাইনাল পাবে নতুন চ্যাম্পিয়ন। রানির দেশে নতুন ক্রিকেট রাজা কে হবে তার সব উত্তাপ পাওয়া গেল শুধু লর্ডস ক্রিকেট মাঠেই। প্রবেশ পথে আগের তুলনায় একটু বাড়তি নিরাপত্তা। ফাইনাল নিয়ে আলোচনা-উত্তেজনাও প্রেসবক্সের আশে পাশে বিশ্বের সব ক্রীড়া সংবাদিকদের মাঝেই। তবে বাইরে উত্তেজনা না থাকলেও আজ লর্ডসে এক ফোটাও গ্যালারি ফাঁকা থাকবে না। জয়ের গান গাইতে গাইতে ঠিকই হাজির হবেন ইংলিশ দর্শকরা। কে হবে নতুন চ্যাম্পিয়ন! ইংল্যান্ড নাকি নিউজিল্যান্ড? সংবাদ সম্মেলনে এমন প্রশ্নের জবাবে ইংলিশ অধিনায়ক এউইন মরগান জানিয়ে দিলেন কিউই অধিনায়ক উইলিয়ামসনকে খালি হাতেই ঘরের পথ দেখাতে চান তিনি। এই বিশ্বকাপের জন্য কতটা মুখিয়ে আছেন তিনি তা তার প্রথম কথাতেই বুঝিয়ে দিলেন। তিনি বলেন, ‘ফাইনালে ওঠার অর্থটা আমার ও আমার দলের কাছে অনেক বড়। এটা চার বছরের কঠোর পরিশ্রম, প্রত্যয় এবং দীর্ঘ সব পরিকল্পনার ফসল। এখন আমাদের সামনে অনেক বড় সুযোগ বিশ্বকাপ জিতে নেয়ার।’
এতটা মরিয়া হবেনা কেন! সেই ১৯৭৫ ওয়ানডে বিশ্বকাপের আয়োজন এই ইংল্যান্ডেই। এরপর টানা তিনবারের আয়োজক। তাতে কি মিলেছে তাদের? শুধু মাত্র বিশ্বকাপে তিনবার রানার্স আপ হওয়া ছাড়া! তাও দুই বার টানা ফাইনালে হেরেছে। ৪৪ বছরে বিশ্বকাপে ক্রিকেটের জন্মস্থানে আসেনি রাজার মুকুট। মিলেছে শুধু আক্ষেপই। তাই এবার লডর্সে সেই আক্ষেপ ভোলানোর মিশন মরগানের দলের সামনে। বিশেষ করে এত বড় সুযোগে দেশের সমর্থন পেয়ে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছেন তিনি। ইংলিশ অধিনায়ক বলেন, ‘আমরা জানি দেশের সবাই আমাদের সমর্থন করছে। একটি দলের জন্য এমন সমর্থন সত্যি ভাগ্যের বিষয়।’ ২৭ বছর পর বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেছে দল। তাই খুব কাছ থেকে আর ফিরতে চান না তারা। সবশক্তি দিয়ে খেলে দেশের জন্য উপহার দিতে চান একটি বিশেষ ‘ট্রফি’।
অন্যদিকে টুর্নামেন্টের ইতিহাসে ফাইনালে প্রথমবার মুখোমুখি হচ্ছে ইংল্যান্ড-নিউজিল্যান্ড । যারাই জিতবে হবে নতুন চ্যাম্পিয়ন। এর আগে বিশ্বকাপের মঞ্চে ইংলিশরা নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৯ বার মুখোমুখি হয়েছে। যার মধ্যে ৫ বার জিতেছে নিউজিল্যান্ড ও ৪ বার ম্যাচ জিতেছে ইংল্যান্ড। লীগ পর্বে এক নম্বরে শেষ করা ভারতকে হারিয়ে বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেছে নিউজিল্যান্ড। সেমিফাইনালে ২৩৯ রানের পুঁজি নিয়ে ভারতের বিরুদ্ধে ১৮ রানে ম্যাচ জেতে উইলিয়ামসনের দল। এই নিয়ে টানা দ্বিতীয়বার বিশ্বকাপ ফাইনালে উঠেছে কিউইরা। নিউজিল্যান্ড দলের মূল শক্তি বোলিংই। আসরে লকি ফার্গুসন ১৮, ট্রেন্ট বোল্ট ১৭, ম্যাট হেনরি ১৩ ও নিশাম নিয়েছেন ১২ উইকেট। তবে দুর্বলতা যে ব্যাটিংয়ে! অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন ও রস টেইলর ছাড়া বড় ইনিংস খেলতে পারেননি কেউই। তাদের আরেকজন সেরা ক্রিকেটার মার্টিন গাপটিল আছেন অফ ফর্মে। তাই সব মিলিয়ে বিশ্বকাপের ফাইনালে ইংলিশদের বিপক্ষে দলের ব্যাটিংটা যে পোড়াতে পারে তা ভাল করে জানেন কিউই অধিনায়ক। তাইতো ফাইনালের আগে সতীর্থদের একটি দল হিসেবে খেলারই আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
তবে এই বিশ্বকাপের বিচারে নিউজিল্যান্ড ও ইংল্যান্ডকে সমান মনে করছেন অনেক ক্রিকেট বোদ্ধাই। কেউ কেউ নিউজল্যান্ডকেও এগিয়ে রাখছেন। কিউইদের পেস আক্রমণ যেমন, ইংল্যান্ডেরও তাই। ফিল্ডিংয়েও দু’দল প্রায় কাছাকাছি। তবে ইংল্যান্ড খেলবে একেবারে নিজেদের চেনা মাঠে। লডর্সের মাটি কনার সঙ্গে তারা দারুণভাবে পরিচিত। এই একটি দিকও এগিয়ে রাখবে মরগানের দলকে। উইকেট কেমন হবে তা নিয়ে ভাবছেন না অবশ্য ইংলিশ দলপতি। তার এখন চোখ শুধুই ট্রফিতে। যা পেলে ভোলা যাবে কয়েক যুগের আক্ষেপের গল্প।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status