শেষের পাতা

টানা বর্ষণে ২১ জেলায় বন্যা

স্টাফ রিপোর্টার ও বাংলারজমিন ডেস্ক

১৪ জুলাই ২০১৯, রবিবার, ৯:৩৯ পূর্বাহ্ন

দেশের অভ্যন্তরে অতি ভারি বৃষ্টি ও ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে নদ-নদীগুলোর পানি ক্রমেই বেড়ে চলছে। ২৩টি পয়েন্টে নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করায় প্রতিদিন নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। ইতিমধ্যে ২১ জেলার নিম্নাঞ্চল জেলাগুলোতে প্লাবিত হয়েছে। গত সপ্তাহে দেশের উত্তরাঞ্চলের কিছু এলাকা প্লাবিত হলেও ইতিমধ্যে বন্যা মধ্যঅঞ্চলে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে। বন্যা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চলতি সপ্তাহ জুড়ে দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে পরিস্থিতি আরও অবনতি হতে পরে। একই সঙ্গে পানি ঢাকার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলেও ছড়িয়ে বড় বন্যা কবলে পড়তে পারে।  

পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্যমতে, শনিবার পর্যন্ত সুরমা, কুশিয়ারা, মনু, ধলাই, খোয়াই, সোমেশ্বরী, কংস, হালদা, সাঙ্গু, মাতামুহুরী, ধরলা, তিস্তা, ঘাঘট, ব্রহ্মপুত্র, যমুনা নদীর পানি ২৩টি পয়েন্টে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর একদিন আগে শুক্রবার সাতটি নদীর পানি ১২টি পয়েন্টে বিপদসীমা অতিক্রম করে।

২৩টি পয়েন্টের মধ্যে সাঙ্গু নদীর পানি বান্দরবানে বিপদসীমার ১২১ সেন্টিমিটার ও দোহাজারীতে ১০৬ সেন্টিমিটার ও সুরমা নদীর কানাইঘাটে ১৪২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী আগামী ২৪ ঘণ্টায় নেত্রকোণা, সুনামগঞ্জ, সিলেট, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, জামালপুর ও গাইবান্ধা জেলায় বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হতে পারে।

বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া মানবজমিনকে বলেন, উত্তরবঙ্গ থেকে বন্যা আস্তে আস্তে মধ্যাঞ্চলের দিকে আসছে। আগামী ৩/৪ দিনে পানি বেড়ে বিভিন্ন অঞ্চল প্লাবিত হবে। তিনি বলেন, বন্যা যমুনা হয়ে পদ্মা নদীতে আসবে। একই সঙ্গে ঢাকার চারপাশের নদীগুলোর পানি বেড়ে যেতে পারে। শীতলক্ষ্যা ও বালু নদীর পানি বেড়ে কোনো কোনো পয়েন্টে বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। এবারের বন্যা বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, গাইবান্ধা, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, ফরিদপুর অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়তে পারে।

বুয়েটের পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউটের প্রফেসর ড. এ কে এম সাইফুল ইসলাম মানবজমিনকে বলেন, দেশের ভেতর ও ভারতে বিভিন্ন অঞ্চলে এখনো বৃষ্টি হচ্ছে। এই পানি নেমে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে বঙ্গোপসাগরে চলে যাবে। অর্থাৎ যেসব জেলায় বন্যা চলছে সেখানে বন্যা পরিস্থিতি আরো অবনতি হওয়াসহ নতুন করে কিছু জেলা প্লাবিত হতে পারে। বন্যা ও বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দেখে মনে হচ্ছে এবারও বড় বন্যা হতে পারে।

অন্যদিকে, বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর ও ভারতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল, দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল এবং কাছাকাছি ভারতের সিকিম, পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাঞ্চল, আসাম ও মেঘালয় প্রদেশের বিস্তৃত এলাকায় আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টায় মাঝারি হতে ভারী এবং কোথাও কোথাও অতিভারী বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল সংলগ্ন ভারতের বিহার এবং নেপালে ভারী বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা রয়েছে। আগামী ৭২ ঘণ্টায় সকল প্রধান নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে এবং আগামী ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদী সারিয়াকান্দি এবং কাজিপুর পয়েন্ট বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে।

ভারী বর্ষণে ২১ জেলায় বন্যা: ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে দেশের প্রায় ২১ জেলায় বন্যা দেখা দিয়েছে। প্রতিদিনই ডুবছে ওই সব জেলার নিম্নাঞ্চল। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে লাখ লাখ মানুষ। বন্যাদুর্গত এলাকায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে অঘোষিত ছুটি চলছে। বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। বৃষ্টি ও পাহাড় থেকে নেমে আসা পানিতে কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, সিরাজগঞ্জ, নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ, সিলেট, ফেনী, গাইবান্ধা, বান্দরবান, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, মানিকগঞ্জ, নীলফামারী, জামালপুর, হবিগঞ্জ, ভোলা, রংপুর, মৌলভীবাজার, খাগড়াছড়ি, বগুড়া ও পঞ্চগড় জেলার নিম্নাঞ্চল বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। এর মধ্যে মৌলভীবাজারে বন্যায় অর্ধ কোটি টাকার মাছ, ১৪০ হেক্টর জমির আউশ ধান ও আমনের চারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।  সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে ফের পানি বৃদ্ধি পেয়েছে, দোয়ারাবাজারে ত্রাণের জন্য হাহাকার করছে বন্যাদুর্গত মানুষ। জগন্নাথপুরের টানা বর্ষণে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। নবীগঞ্জের কুশিয়ারার পানি বেড়ে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এদিকে, যমুনার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। কমলগঞ্জে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে শতাধিক পরিবার। রংপুরের কাউনিয়ায় তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে।  গঙ্গাচড়ায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। পানিবন্দি হয়েছে ১০ হাজার পরিবার। সিলেটের গোয়াইনঘাটে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও গোলাপগঞ্জে বানের পানি এখন লোকালয়ে চলে এসেছে। খাগড়াছড়িতে বন্যায় সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।  নেত্রকোনার কলমাকান্দায় ৮ ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে, কুড়িগ্রামের চিলমারী ও রাজারহাট বন্যার পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। রাজারহাটে প্রায় ১৮০০ পরিবার এখন পানিবন্দি। গাইবান্ধায় বানভাসীদের দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে। বগুড়ায় বন্যায় ৪৭ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পঞ্চগড়ে নিম্নাঞ্চলে বন্যার পানি প্রবেশ করছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status