শেষের পাতা

বৃহত্তর চট্টগ্রামে বন্যার পদধ্বনি

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম থেকে

১৪ জুলাই ২০১৯, রবিবার, ৯:৩৬ পূর্বাহ্ন

অব্যাহত বর্ষণে তলিয়ে গেছে চট্টগ্রাম মহানগরীর সড়ক-মহাসড়ক ও দালান কোঠার নিচতলা। তলিয়ে গেছে জেলার সবক’টি উপজেলা। ডুবে গেছে বান্দরবান ও কক্সবাজারের নিচু এলাকাও। এ অবস্থায় শনিবার সকাল থেকে ভারী বর্ষণ শুরু হওয়ায় বৃহত্তর চট্টগ্রামের এই তিন জেলায় দেখা দিয়েছে বন্যার আশঙ্কা।

পতেঙ্গা আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদরা বলছেন, রোববার পর্যন্ত ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে আগামী ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও বান্দরবান জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। বন্যার আশংকা করছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রও।

এদিকে বসে নেই চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনও। সম্ভাব্য বন্যার ক্ষয়ক্ষতি ঠেকাতে আশ্রয়কেন্দ্র খোলা, ত্রাণ বিতরণসহ পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রামের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মো. দেলোয়ার হোসেন।
আবহাওয়াবিদরা জানান, শনিবার সকাল থেকে ভারী বর্ষণের কারণে চট্টগ্রাম, বান্দরবান, কক্সবাজার জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। বান্দরবান থেকে নেমে আসা সাঙ্গু, মাতামুহুরী, কর্ণফুলী ও হালদাসহ সবক’টি নদ-নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

এর আগে টানা সাত দিনের বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে এসব নদ-নদীর পানি বেড়ে যায়। এতে বান্দরবান ও চট্টগ্রাম জেলার নিম্নাঞ্চলের ৪০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়ে। টানা বৃষ্টির কারণে বান্দরবান-কেরানীহাট সড়কের বাজালিয়ার বড়দুয়ারা এলাকার রাস্তাটিও তলিয়ে যায়। পানি প্রবেশ করেছে শহরের আর্মিপাড়া, ইসলামপুর, অফিসার্স ক্লাব, বনানী স’মিল এলাকা, শেরেবাংলা নগর, সাঙ্গু তীরবর্তী এলাকাসমূহে।

এদিকে ভারতের ত্রিপুরা থেকে নেমে আসা ইছামতি নদী ও লুসাই পাহাড় থেকে নেমে আসা কর্ণফুলী নদীর পাহাড়ি ঢল এবং বঙ্গোপসাগরের জোয়ারের পানিতে চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলার হাটহাজারী, বোয়ালখালী, পটিয়া, চন্দনাইশ, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, আনোয়ারা, বাঁশখালী, রাউজান, ফটিকছড়ি ও সীতাকুণ্ড উপজেলার নিচু এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। আরো ভারী বৃষ্টির আশঙ্কা থাকায় এসব এলাকায় বন্যার পদধ্বনি দেখা দিয়েছে। সেই সঙ্গে চট্টগ্রাম, বান্দরবান ও কক্সবাজার এলাকায় ভূমিধসেরও আশঙ্কা করা হচ্ছে।  

আবহাওয়া অধিদপ্তরের সতর্কীকরণ বার্তায় বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম ও পার্শ্ববর্তী এলাকার জন্য  রোববার পর্যন্ত আকাশ মেঘলা থেকে অস্থায়ীভাবে মেঘাচ্ছন্ন থাকতে পারে। সে সঙ্গে অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টিপাতের এবং কোথাও কোথাও ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে। এ কারণে নদীবন্দরে এক নম্বর নৌ সতর্ক সংকেত জারি করা হয়েছে।

পতেঙ্গা আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস কর্মকর্তা মো. আবদুল হান্নান বলেন, রোববার পর্যন্ত ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে। এতে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও বান্দরবান জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে।
তিনি বলেন, গত সাত দিনে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাতে চট্টগ্রাম মহানগরীর নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। দেখা দিয়েছে জলজট। শনিবার সকাল থেকে ভারী বৃষ্টির কারণে নগরীর আগ্রাবাদ, সিডিএ আবাসিক এলাকা, শান্তিবাগ, ছোটপোল, বেপারিপাড়া, চাক্তাই খালের আশপাশের এলাকা হালিশহর, পতেঙ্গা, মাইজপাড়া, ইপিজেডের নিউমোরিং ও আকমল আলী রোডসহ দুুই-তৃতীয়াংশ এলাকায় জলজটের সৃষ্টি হয়েছে। আরো ভারী বর্ষণে এই জলজট বন্যায় রূপ নিতে পারে।

এদিকে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের সহকারী প্রোগ্রামার তারেক সিদ্দিকী জানান, শনিবার বিকাল তিনটা পর্যন্ত সাঙ্গু নদীর বান্দরবান পয়েন্টে বিপদসীমার ১৪৭ সেন্টিমিটার এবং দোহাজারী পয়েন্টে বিপদসীমার ৯৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।

দেশের উত্তর-পূর্ব, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল এবং ভারতের আসাম ও মেঘালয় রাজ্যে আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টায় মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি হতে পারে। এ কারণে আগামী ৭২ ঘণ্টায় দেশের সব নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেতে পারে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম বিভাগের ফেনী, সাঙ্গু, মাতামুহুরী, হালদাসহ কয়েকটি নদীর পানি দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে।
চট্টগ্রামের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, গত কয়েক দিনে চট্টগ্রামের ১৪ উপজেলা প্লাবিত হয়েছে। এতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ২ লাখ ৩২ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৩৮টি ঘরবাড়ি সমপূর্ণ এবং ৯৭৪টি ঘরবাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব উপজেলার ক্ষতিগ্রস্তদের ইতিমধ্যে তিন লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। আমাদের হাতে নগদ ১০ লাখ টাকা এবং ১৬৬ টন চাল বরাদ্দ আছে।

তিনি বলেন, রাউজান, সাতকানিয়া ও চন্দনাইশে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে তিন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে পাঠানো হয়েছে। প্রতিটি উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তাদের ওষুধ, পানিসহ প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেয়ার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় জেলা পর্যায়ে ০৩১-৬১১৩৪৫ এবং ০১৭০০-৭১৬৬৯১ নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status