শেষের পাতা

বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়া শুরু

ফরিদ উদ্দিন আহমেদ

১৪ জুলাই ২০১৯, রবিবার, ৯:৩৫ পূর্বাহ্ন

গ্যাসের দাম বৃদ্ধির পর এবার বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বিদ্যুতের সংশ্লিষ্ট বিভাগ ইতিমধ্যে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদনে কি পরিমাণ খরচ বাড়বে তা নিয়ে হিসাব কষতে শুরু করেছে। নতুন করে গ্যাসের দাম বাড়ার কারণে বিদ্যুতে বেড়েছে মূল্যহার (টাকা/ঘনমিটার) ৪ টাকা ৪৫ পয়সা। গ্যাসের নতুন দাম নির্ধারণের ফলে এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে সরবরাহকৃত গ্যাসের দাম বেড়েছে ৪০ শতাংশ। এতে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় বাড়বে ২২ পয়সা। ফলে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) লোকসান বাড়বে প্রায় ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। সংস্থাটির বিশ্লেষণে এ তথ্য উঠে এসেছে।

পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসাইন এই ব্যাপারে মানবজমিনকে বলেন, ৬০ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় গ্যাস দিয়ে। তাই গ্যাসের দাম বৃদ্ধির ফলে বিদ্যুতের উৎপাদন খরচও স্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাবে। যা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জনগণ থেকেই নিতে হবে। বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব আগেই জমা দেয়া ছিল। এখন যেহেতু গ্যাসের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে, তাই বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর জন্য পিডিবিকে নতুন করে প্রস্তাব দিতে হবে। এটাকে সমন্বয় করতে হবে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঘাটতি মেটাতে অর্থ মন্ত্রণালয়ে বাড়তি ভর্তুকি চাইবে পিডিবি। সরকার এ খাতে বাড়তি অর্থ দিতে সম্মত না হলে বিদ্যুতের দাম বাড়াতে হবে। তখন বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলারিটি কমিশনে (বিইআরসি) দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব দিতে হবে পিডিবিকে। এক্ষেত্রে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়াতে হবে ২০ শতাংশ। সম্প্রতি বিদ্যুৎ খাতে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রভাব বিশ্লেষণ করেছে পিডিবি। এতে বলা হয়েছে, চলতি (২০১৯-২০) অর্থবছর বিদ্যুৎ খাতে দৈনিক গড়ে ১২৭ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করবে পেট্রোবাংলা। তবে চাহিদা অনুপাতে তা ১১০ থেকে ১৪৫ কোটি ঘনফুটে উঠানামা করতে পারে। গ্যাসের দাম বৃদ্ধি-সংক্রান্ত ঘোষণায় এ বিষয়ক নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে। আর বর্তমানে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর উৎপাদন ক্ষমতা ৯ হাজার ৪৮৭ মেগাওয়াট। এতে চলতি অর্থবছর গ্যাসভিত্তিক কেন্দ্রগুলো থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাবে প্রায় ৫ হাজার ৩৪৪ কোটি কিলোওয়াট ঘন্টা। গ্যাস ছাড়াও ফার্নেস অয়েল, ডিজেল, কয়লা, হাইড্রো, নবায়নযোগ্য উৎস ও আমদানি মিলিয়ে চলতি অর্থবছর প্রায় ৭ হাজার ২০৫ কোটি ৫০ লাখ কিলোওয়াট ঘন্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে পিডিবি। আর বর্তমানে বিদ্যুতের পাইকারি (বাল্ক) বিদ্যুৎ মূল্য হার প্রতি ইউনিট ৪ টাকা ৮৪ পয়সা। এতে সংস্থাটির আয় হবে ৩৪ হাজার ৮৭৫ কোটি টাকা। যদিও বর্তমানে নিজস্ব কেন্দ্রে উৎপাদন ও বেসরকারি খাত থেকে বিদ্যুৎ কেনায় পিডিবির ব্যয় হচ্ছে গড়ে প্রতি ইউনিটে ৫ টাকা ৮৩ পয়সা। গ্যাস দাম বাড়ানো না হলে চলতি অর্থবছর বিদ্যুৎ কেনায় পিডিবির মোট ব্যয় পড়ত ৪২ হাজার ৮ কোটি টাকা। এতে সংস্থাটির লোকসান দাঁড়াত ৭ হাজার ১০৩ কোটি টাকা।

তবে গত ১ জুলাই গ্যাসের দাম বাড়ানোয় নতুন অর্থবছরে বিদ্যুৎ কেনায় পিডিবির গড়ে ব্যয় পড়বে ৬ টাকা পাঁচ পয়সা। নতুন অর্থবছর বিদ্যুৎ কেনায় পিডিবিকে মোট ব্যয় করতে হবে ৪৩ হাজার ৫৯৩ কোটি টাকা। ফলে রাষ্ট্রায়ত্ত্ব এ সংস্থাটির লোকসান বেড়ে দাঁড়াবে ৮ হাজার ৭১৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ গ্যাসের দাম বাড়ায় বিদ্যুৎ কেনায় পিডিবির লোকসান বেড়ে যাবে প্রায় ১ হাজার ৫৮৫ কোটি টাকা। তথ্যমতে, উচ্চ মূল্যে বিদ্যুৎ কিনে কম দাম বিক্রি করায় গত নয় বছর ধরে বড় অংকের লোকসান গুনতে হচ্ছে পিডিবিকে। সংশ্লিষ্টরা বলেন, ২০১৭-১৮ অর্থবছর থেকে বিদ্যুৎ খাতের ঘাটতি মেটাতে ভর্তুকি দিচ্ছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এক্ষেত্রে বিদ্যুতের বাল্ক মূল্য ও উৎপাদন ব্যয়ের যে পার্থক্য থাকছে তা পিডিবিকে ভর্তুকি দেয়া হচ্ছে। গত অর্থবছরও প্রায় সাত হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিয়েছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরেও একই প্রক্রিয়ায় ভর্তুকি চাওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধিতে ঘাটতি বেড়ে যাবে। তাই বাড়তি ভর্তুকি পাওয়া না গেলে বিদ্যুতের দাম বাড়াতে হবে। প্রসঙ্গত, বর্তমানে বিদ্যুতের বাল্ক মূল্য হার ৪ টাকা ৮৪ পয়সা এবং গড় খুচরা মূল্য হার ৬ টাকা ৮৫ পয়সা। তবে বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি পুরো তুলে দিলে প্রতি ইউনিটে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়াতে হবে ১ টাকা ৩৫ পয়সা। এতে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের গড় মূল্য হার দাঁড়াবে ৮ টাকা ২০ পয়সা।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status